
রমজানে ইনফ্লেশনের চ্যালেঞ্জ ও খরচ নিয়ন্ত্রণের উপায়
এম এ সবুর
“””””””””””””””””””””””””””””””””””””””””””””””””””””””””””
রমজান হলো আত্মসংযম, ইবাদত ও ত্যাগের মাস। কিন্তু বাস্তবে দেখা যায়, এই মাসে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি সাধারণ মানুষের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়ায়। নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্যপণ্যসহ অন্যান্য সামগ্রীর দাম বেড়ে যায়, যা নিম্ন ও মধ্যবিত্ত মানুষের জন্য বাড়তি চাপ সৃষ্টি করে। অথচ ইসলাম আমাদের অপচয় থেকে বিরত থাকার নির্দেশনা দিয়েছে। কুরআনে আল্লাহ বলেন, “তোমরা অপচয় করো না, নিশ্চয়ই অপচয়কারীরা শয়তানের ভাই।” (সূরা আল-ইসরা: ২৭)। তাই রমজানে খরচ নিয়ন্ত্রণ করাও একটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ।
রমজানে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির কারণ:
১. চাহিদা বৃদ্ধি: রমজানে খাবারের প্রতি মানুষের মনোযোগ বেশি থাকে। ফলস্বরূপ, বাজারে অনেক খাদ্যপণ্যের চাহিদা বেড়ে যায়, যা দাম বাড়ার অন্যতম কারণ।
২. অপ্রয়োজনীয় কেনাকাটা: অনেকেই রমজানের শুরুতেই প্রয়োজনের চেয়ে বেশি পণ্য কিনে মজুদ করেন, যা বাজারে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে এবং মূল্যবৃদ্ধির কারণ হয়।
৩. ব্যবসায়ীদের মজুদদারি: কিছু অসাধু ব্যবসায়ী অধিক মুনাফার আশায় খাদ্যপণ্য মজুদ করেন এবং কৃত্রিম সংকট তৈরি করে দাম বাড়ান।
৪. পরিবহন ও সরবরাহ সমস্যা: অনেক সময় দ্রব্যের সরবরাহ ব্যাহত হয়, ফলে পণ্যের দাম বেড়ে যায়।
খরচ নিয়ন্ত্রণের উপায়:
রমজানে খরচ নিয়ন্ত্রণের জন্য পরিকল্পিত ও সংযমী জীবনযাপন করা প্রয়োজন। নিচে কিছু কার্যকর উপায় তুলে ধরা হলো—
১. বাজেট পরিকল্পনা করা
রমজানের শুরুতেই একটি সুনির্দিষ্ট বাজেট নির্ধারণ করা উচিত। কোন খাতে কত টাকা খরচ হবে তা আগেই পরিকল্পনা করলে অপ্রয়োজনীয় কেনাকাটা কমানো সম্ভব।
২. অপ্রয়োজনীয় ও বিলাসী খরচ কমানো
রমজানে অনেকেই অতিরিক্ত কেনাকাটা করেন, যা পরে অপচয় হয়। বাড়িতে বড় ইফতার আয়োজন, বিলাসবহুল পোশাক কেনা ও অতিরিক্ত সাজসজ্জা এড়িয়ে চলা উচিত। রাসূল (সা.) খুবই সহজ-সরল জীবনযাপন করতেন, যা আমাদের জন্য আদর্শ।
৩. খাদ্যের অপচয় রোধ করা
রমজানে খাবারের অপচয় সবচেয়ে বেশি হয়। ইফতার ও সেহরির সময় পরিমিত খাবার প্রস্তুত করা এবং বেঁচে যাওয়া খাবার গরীবদের মধ্যে বিতরণ করা উত্তম।
৪. স্থানীয় ও মৌসুমী পণ্য ক্রয় করা
যেসব খাদ্যপণ্য স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত হয় এবং মৌসুমী হিসেবে সহজলভ্য, সেগুলো কেনা ভালো। এতে খরচ কম হয় এবং বাজারে কৃত্রিম সংকট তৈরি হয় না।
৫. সঠিকভাবে যাকাত ও দান প্রদান করা
যাকাত এবং সাদাকা সমাজের অর্থনৈতিক ভারসাম্য রক্ষা করে। ধনী ব্যক্তিরা যদি সঠিকভাবে যাকাত প্রদান করেন, তাহলে দরিদ্রদের জন্য রমজান সহজ হয়ে যায়।
৬. ডিসকাউন্ট ও অফার ব্যবহার করা
অনেক দোকান এবং সুপারমার্কেট রমজানে বিভিন্ন ছাড় ও অফার দিয়ে থাকে। এসব সুযোগ গ্রহণ করে খরচ কিছুটা কমানো সম্ভব।
ইসলামের দৃষ্টিকোণ থেকে খরচে সংযমের গুরুত্ব
ইসলাম মধ্যপন্থা অবলম্বনের শিক্ষা দেয়। কুরআনে আল্লাহ বলেন, “আর তারা যখন ব্যয় করে, তখন অপচয় করে না এবং কৃপণতাও করে না; বরং তারা এর মাঝামাঝি অবস্থানে থাকে।” (সূরা আল-ফুরকান: ৬৭)।
রাসূলুল্লাহ (সা.) নিজে অত্যন্ত সংযমী জীবনযাপন করতেন এবং সাহাবাদেরও অপচয় থেকে দূরে থাকার উপদেশ দিতেন। তিনি বলেন, “সর্বোত্তম মধ্যপন্থা অবলম্বন করা।” (তিরমিজি, হাদিস: ২০১৯)।
উপসংহার
রমজান কেবলমাত্র খাওয়ার মাস নয়, বরং আত্মশুদ্ধি ও সংযমের মাস। এই সময়ে যদি আমরা বাজেট অনুযায়ী খরচ করি, অপ্রয়োজনীয় কেনাকাটা এড়িয়ে চলি এবং দান-সাদাকার প্রতি গুরুত্ব দেই, তাহলে ইনফ্লেশনের চ্যালেঞ্জ সহজেই মোকাবিলা করা সম্ভব। প্রকৃতপক্ষে, রমজানের শিক্ষা হলো সংযম ও কৃচ্ছ্রসাধন, যা আমাদের সারা বছর মেনে চলা উচিত।