রবিবার - ২৩শে মার্চ, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ - ৯ই চৈত্র, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ - ২৩শে রমজান, ১৪৪৬ হিজরি

রমজানের মাহাত্ম্য ও মানবজীবনে এর প্রভাব

রমজানের মাহাত্ম্য ও মানবজীবনে এর প্রভাব

এম এ সবুর

 

রমজান মাস মুসলমানদের জন্য আত্মশুদ্ধি, সংযম ও তাকওয়া অর্জনের এক মহিমান্বিত সময়। এ মাসে মানুষ নিজেকে আল্লাহর ইবাদতে নিয়োজিত করে এবং আত্মসংযমের মাধ্যমে আত্মাকে পরিশুদ্ধ করে। রোজার মাধ্যমে ধনী-গরিবের মধ্যে ভ্রাতৃত্ববোধ সৃষ্টি হয়, সমাজে সহানুভূতির আবহ গড়ে ওঠে, এবং অপরাধপ্রবণতা হ্রাস পায়।

রমজানের অন্যতম প্রধান শিক্ষা হলো ত্যাগ ও সংযম। এ মাসে ধনী-গরিব নির্বিশেষে সবাই রোজা রাখার মাধ্যমে ক্ষুধার কষ্ট অনুভব করে, ফলে দরিদ্রদের প্রতি সহমর্মিতা জন্মায়। বিভিন্ন ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান ও সরকার দরিদ্রদের মাঝে খাদ্যসামগ্রী বিতরণ করে, যা মানবিকতার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। মসজিদগুলোতে ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের ভিড় বৃদ্ধি পায়, অধিকাংশ মানুষ কোরআন তেলাওয়াতে মগ্ন থাকে, এবং দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে সহি কোরআন প্রশিক্ষণের আয়োজন করা হয়।

রমজানের অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো আত্মনিয়ন্ত্রণ ও নৈতিক উন্নয়ন। রোজাদারগণ মিথ্যা, অপবাদ, অন্যায় ও অনৈতিক কাজ থেকে বিরত থাকেন। অপরাধপ্রবণতা কমে যায় এবং সমাজে শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বিরাজ করে। রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন, “যে ব্যক্তি কোনো রোজাদারের পিপাসা মেটাবে, আল্লাহ কিয়ামতের দিন তাকে হাউজে কাউসারের শীতল পানি পান করাবেন।”

শারীরিক ও মানসিক সুস্থতার জন্য রোজার গুরুত্ব অপরিসীম। আধুনিক চিকিৎসাবিজ্ঞান প্রমাণ করেছে যে, নিয়ন্ত্রিত খাদ্যাভ্যাস ও উপবাস দেহের অভ্যন্তরীণ শুদ্ধি ঘটায়। একাদশ শতাব্দীর বিখ্যাত মুসলিম চিকিৎসক ইবনে সিনা তার রোগীদের তিন সপ্তাহ উপবাসের পরামর্শ দিতেন। রোজা উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিসসহ বিভিন্ন জটিল রোগের ঝুঁকি কমায়, রক্তপ্রবাহকে শুদ্ধ করে এবং শরীরকে বিষমুক্ত করে। দৈনিক ১৪-১৫ ঘণ্টা উপবাসের ফলে লিভার, কিডনি ও অন্যান্য অভ্যন্তরীণ অঙ্গ বিশ্রাম পায়, ফলে দেহের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়।

রমজান মানুষের আত্মিক ও নৈতিক উৎকর্ষ সাধনের এক অনন্য সুযোগ এনে দেয়। এটি আত্মসংযম, ধৈর্য ও ত্যাগের শিক্ষা দেয়। খোদাভীতি মানুষকে সৎপথে পরিচালিত করে এবং সমাজে শান্তি প্রতিষ্ঠায় সহায়ক হয়। প্রকৃতপক্ষে, রমজানের উদ্দেশ্য হলো ব্যক্তি ও সমাজকে নৈতিকভাবে উন্নত করা এবং মানবকল্যাণে উদ্বুদ্ধ করা।

রমজানের শিক্ষাকে জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে প্রয়োগ করলে সমাজে ন্যায়, সততা ও সৌহার্দ্য প্রতিষ্ঠিত হবে। এ মাস কেবল সংযম ও ইবাদতের সময় নয়, বরং এটি মানবতার সেবায় নিজেদের উৎসর্গ করার এক মহান সুযোগ। আল্লাহ আমাদের সবাইকে রমজানের প্রকৃত শিক্ষা অনুধাবন ও তা অনুসরণের তৌফিক দান করুন। আমিন।

Share on facebook
Facebook
Share on twitter
Twitter
Share on linkedin
LinkedIn