বুধবার - ১৯শে মার্চ, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ - ৫ই চৈত্র, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ - ১৯শে রমজান, ১৪৪৬ হিজরি

যাদের আত্মতাগে এলো ভালবাসা দিবস

যাদের আত্মতাগে এলো ভালবাসা দিবস

 

১৪ ফেব্রুয়ারী বিশ্ব ভালোবাসা দিবস।প্রতি বছর বিশ্বব্যাপী পালিত হয় এ দিবসটি। আনন্দ উৎসবের মধ্য দিয়ে পালন করা হয় দিবসটি।এ দিনে পার্ক ও বিনোদন কেন্দ্র গুলো ভালোবাসার মানুষে পরিপূর্ণ থাকে। ভালোবাসা দিবসের এ দিনে প্রিয়জনকে সবাই ফুল ও বিভিন্ন সামগ্রী উপহার দিয়ে থাকে। কিন্তু কি কারনে সারা বিশ্বের মানুষ এ দিনটিকে সমারোহে পালন করে তা নিয়ে বিভিন্ন মতবাদ রয়েছে। এর ইতিহাস নিয়েও রয়েছে বিভক্তি। কিভাবে এলো ভালোবাসা দিবস দেখে আসা যাক।
ভ্যালেনটাইন ডে বা ভালোবাসা দিবস। দিনটি মুলত সেন্ট ভ্যালেনটাইন দিবস। যাকে ভালোবাসা দিবস নামে আখ্যা দেওয়া হয়। তবে দিবসটির পেছনে জড়িয়ে আছে একজন মানুষ। তার নাম সেইন্ট ভ্যালেইনটাইন। ঘটনাটি ১৭৫৪ বছর পুরনো। ২৬৯ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি হত্যা করা হয়েছিল সেইন্ট ভ্যালেনটাইনকে। দিনটি মূলত তার মৃত্যুবার্ষিকী। ভ্যালেনটাইন ছিলেন তৎকালীন রোম সম্রাজ্যের একজন খ্রিস্টান পাদ্রি ও চিকিৎসক। ধর্ম প্রচারের অভিযোগে তৎকালীন রোম সম্রাট দ্বিতীয় ক্রাডিয়াস তাকে বন্দি করেন। কারন তখন রোমান সম্রাজ্যে খ্রিস্টান ধর্ম প্রচার নিষিদ্ধ ছিল।বন্দি অবস্থায় সেন্ট ভ্যালেন্টাইন এক কারা রক্ষীর দৃষ্টিহীন মেয়েকে চিকিৎসার মাধ্যমে সুস্থ করে তোলেন। এতে সেন্ট ভ্যালেন্টাইনের জনপ্রিয়তা বেড়ে যায়। তাই তার প্রতি ইর্ষান্বিত হয়ে রাজা তাকে মৃত্যুদন্ড দেন। সেই দিনটি ছিল ১৪ ফেব্রুয়ারি। ৪৯৬ সালে পোপ সেন্ট জেলাসিউও প্রথম জুলিয়াস ভ্যালেন্টাইন স্মরণে ১৪ ফেব্রুয়ারিকে ভ্যালেন্টাইন দিবস ঘোষণা করেন। খ্রিস্টীয় এই ভ্যালেন্টাইন দিবসের চেতনা বিনষ্ট হওয়ার ১৭৭৬ সালে ফ্রান্স সরকার কর্তৃক ভ্যালন্টাইন উৎসব নিষিদ্ধ করা হয়। ইংল্যান্ডে ক্ষমতাসীন পিউরিটানরাও একসময় প্রশাসনিকভাবে এ দিবস উদযাপন নিষিদ্ধ ঘোষণা করে। এছাড়া অস্ট্রিয়া, হাঙ্গেরি ও জার্মানিতে বিভিন্ন সময়ে এ প্রত্যাখ্যাত হয়। পাকিস্তানে ২০১৭ সালে ইসলাম বিরোধী হওয়ায় ভ্যালেন্টাইন উৎসব নিষিদ্ধ করেন সে দেশের আদালত। বর্তমানে পাশ্চাত্যে এ উৎসব মহাসমারোহে উদযাপন করা হয়। যুক্তরাজ্যে মোট জনসংখ্যার ধর্ধক প্রায় ১০০ কোটি পাউন্ড ব্যয় করে এই ভালোবাসা দিবসের জন্য কার্ড, ফুল, চকোলেটসহ অন্যান্য উপহার সামগ্রী ও শুভেচ্ছা কার্ড ক্রয় করতে আনুমানিক প্রায় আড়াই কোটি শুভেচ্ছা কার্ড আদান-প্রদান করা হয়। আবার কারও মতে, রোমের সম্রাট ক্লডিয়াস ২০০ খ্রিস্টাব্দে দেশে বিয়ে প্রথা নিষিদ্ধ করেন। তিনি ঘোষনা দেন, আজ থেকে কোন যুবক বিয়ে করতে পারবেনা। যুবকদের জন্য শুধুই যুদ্ধ। তার মতে, যুবকরা যদি বিয়ে করে, তবে যুদ্ধ করবে কারা? সম্রাট ক্লডিয়াসের এ অন্যায় ঘোষণার প্রতিবাদ করেন এক যুবক। যার নাম ভ্যালেন্টাইন। অসীম সাহসী এ যুবকের প্রতিবাদে খেপে উঠেছিলেন সম্রাট। রাজদ্রোহের শাস্তি হিসেবে মৃত্যুদন্ড দেওয়া হয় তাকে। ১৪ ফেব্রুয়ারি ভোর বেলা মাথা কেটে ফেলা হয় তার। ভালোবাসার জন্য ভ্যালেন্টাইনের আত্মত্যাগকে স্মরণ করতে তখন থেকেই এ দিনটিকে পালন করা হয় ভ্যালেন্টাইন দিবস হিসেবে। তবে এটিও সর্বজনস্বীকৃত নয়। কারো মতে, প্রাচীন রোমে দেবতাদের রাণি জুনোর সম্মানে ১৪ ফেব্রুয়ারি ছুটি পালন করা হতো। রোমানরা বিশ্বাস করত যে, জুনোর ইশারা-ইঙ্গিত ছাড়া কোনো বিয়ে সফল হয় না। ছুটির পরদিন ১৫ ফেব্রুয়ারি লুপারকালিয়া ভোজ উৎসবে হাজারও তরুণের মেলায় র‍্যাফেল ড্রর মাধ্যমে সঙ্গী বাচাই প্রক্রিয়া চলত। ভালোবাসা দিবসের ইতিহাস নিয়ে এমন অনেক প্রচলিত ঘটনা, তথ্য-উপাত্ত পাওয়া যায়। একেকজন একেকভাবে এর যুক্তি ব্যাখা উপস্থাপন করেন। তবে তাদের মধ্যে সেন্ট ভ্যালেন্টাইনের মৃত্যুবার্ষিকীর দিন কেন্দ্র করেই দিবসটি এসেছে বেশী মত পাওয়া গেলেও সিংহভাগ মানুষই দিনটিকে ভালোবাসা দিবস হিসেবে জানেন। দিনটি কেন্দ্র করে বিশ্বের অনেক দেশেই চলে নানা আয়োজন। বাংলাদেশে ‘ভালোবাসা দিবস’ চালু করেন ১৯৯৩ সালে শফিক রহমান সম্পাদিত যায়যায়দিন পত্রিকায় প্রথম এই দিনটিকে উপলক্ষ করে বিশেষ ‘ভালোবাসা সংখ্যা’ বের করেছিলেন তিনি। দিনে দিনে সে ভালোবাসা দিবস বাংলাদেশে রূপ নিয়েছে রীতিমতো উৎসবে।

Share on facebook
Facebook
Share on twitter
Twitter
Share on linkedin
LinkedIn