বুধবার - ২১শে মে, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ - ৭ই জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ - ২৩শে জিলকদ, ১৪৪৬ হিজরি

যশোরের শার্শায় খেজুরের রস সংগ্রহের কাজে ব্যস্ত সময় পার করছে গাছিরা

যশোরের শার্শায় খেজুরের রস সংগ্রহের কাজে ব্যস্ত সময় পার করছে গাছিরা

 

রাতের শেষের কুয়াশা জানান দিচ্ছে শীতের আগমনী বার্তা। আবহমান গ্রাম-বাংলার ঐতিহ্য খেজুর রস সংগ্রহের এটাই সেরা সময়। যশোরের শার্শায় রস সংগ্রহের জন্য খেজুর গাছ প্রস্তুতির ব্যস্ত সময় পার করছে গাছিরা। এখন বাংলার হেমন্তকাল, চলছে মাঠ থেকে আমন ধান কাটা-মাড়াইয়ের কাজ। নতুন ধানের নতুন চালের মৌ মৌ গন্ধ চারিদিকে ছড়িয়ে পড়ছে। এদিকে শীতের শিশির পড়া শুরু হয়েছে। সেই সাথে খেজুর গাছেও রস আসার সময়ও চলে এসেছে। সেজন্য খেজুর গাছের ডালপালা কেটে-ঝুরে ফেলে (গাছ তুলা) রসের ভাড় বসানোর জন্য প্রস্তুুত করা হচ্ছে।

হেমন্ত, শীত ও বসন্তকালে খেজুর গাছ থেকে খেজুরের রস সংগ্রহ করা হয়ে থাকে। খেজুর রস সংগ্রহ করার জন্য আগেই খেজুরগাছ ঝুরার কাজ করে ভাড় লাগানোর জন্য প্রস্তুুত করতে হয়। সেজন্য দরকার হয় গাছিদের। যারা গাছ ঝুরার কাজ করে তাদেরকে আঞ্চলিক ভাষায় গাছিয়া ও গাছি বলা হয়ে থাকে।

উপজেলায় খেজুর গাছ ঝুরার কাজ ইতোমধ্যেই শেষ হয়েছে। পাশাপাশি কিছু কিছু খেজুর গাছের রস সংগ্রহের জন্য ভাড় লাগানো হলেও এখন বেশি রস পাওয়া যাচ্ছে না। শীত বাড়লেই বেশি রস পাওয়া যাবে। শীতকালে খেজুর রস খেতে অনেক মজা লাগে। খেজুর রস দিয়ে পিঠা-পুলি, রসের ক্ষীর ও পায়েসসহ নানা রকমের রসালো খাবার তৈরি করা হয়। যা খেতে খুব সুস্বাদু ও মজাদায়ক।আমার আশেপাশের সেরা রেস্টুরেন্ট

শার্শা উপজেলার বিভিন্ন গ্রামগঞ্জে ও হাট-বাজারে খেজুরের পাটালি ও গুড়ের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। তাই খেজুর রস ও গুড় অনেকটা জনপ্রিয়। এ উপজেলায় বিপুল পরিমাণ খেজুরগাছ রয়েছে। যা থেকে প্রচুর পরিমাণ খেজুর রস ও গুড় পাওয়া যায়।

উপজেলার বামনিয়া গ্রামের মো: দেলোয়ার হোসেন নামে এক গাছি জানান, আমি ৩৫ বছর ধরে খেজুর রস সংগ্রহের কাজে নিয়োজিত আছি। এ বছর ২০০ খেজুরগাছ থেকে রস সংগ্রহের জন্য খেজুর গাছের ডালপালা কেটে-ঝুরে ভাড় লাগানোর জন্য প্রস্তুুত করেছেন। তিনি আরও বলেন, আর কয়েকদিন পর থেকে খেজুর গাছ থেকে রস সংগ্রহ করা হবে।

জয়নাল আবেদীন নামে এক গাছি বলেন, তিনিও ৪০ বছর ধরে খেজুর গাছের রস সংগ্রহের কাজ করেন। নিজের তৈরি রস, গুড় ও পাটালির দাম থাকে একটু চড়া। তবু এই রস নিতে ভুল করেন না সকল শ্রেণীর মানুষ। কাঁচা রস প্রতি ভাড় ১২০ থেকে ১৫০ টাকা হয়ে থাকে। আর পাটালী প্রতি কেজি ২৫০ টাকা থেকে ৩০০ টাকায় বিক্রি হয়।

আবুল কাশেম নামের আরেক গাছি জানান, চলতি বছরে মালিকের থেকে ৮০ টি খেজুর গাছ ভাগে (বরাদ্দ) পেয়েছি। সর্বমোট এই ৮০ টি গাছের রস থেকে পাটালিগুড় তৈরি করতে আগ্রহী তিনি। এলাকার অনেকে খেজুরের পাটালি ঢাকাসহ বিভিন্ন স্থানে নিয়ে যান আত্মীয়স্বজনদের জন্য।

আরও কয়েকজন গাছীরা জানান, বর্তমান অন্যতম কষ্ট ও পরিশ্রমের কাজ এই খেজুর গাছের রস সংগ্রহ। সেই তুলনায় মজুরি পাই না। আবার গাছের সংখ্যা অনেক কম। যার ফলে শুধু এই কর্ম বা পেশার নির্ভর করে সংসার চালানো কষ্ট।

খেজুরের রস ও গুড় সবারই প্রিয়, আর এই খেজুরের রস এবং গুড়ের কারণেই ‘যশোরের যশ খেজুরের রস’ নামে উপাধি দেয়া হয়েছে। কিন্তু এটা যেন বিলুপ্তির পথে। এক সময় শার্শা উপজেলায় মাঠ এবং রাস্তার দুইধারে সারি সারি অসংখ্য খেজুর গাছ ছিলো। একটা সময় সন্ধ্যায় গ্রামীণ পরিবেশ খেজুর রসের ঘ্রাণে মধুর হয়ে উঠত। রস আহরণকারী গাছিদের প্রাণচাঞ্চল্য ছিল চোখে পড়ার মতো। কালের বিবর্তনে হারিয়ে যেতে বসেছে এই সব খেজুর গাছ। গাছিদের দাবি আগামীতে এভাবে খেজুর গাছ নিধন হলে আর আগামীর প্রজন্ম খেজুর গাছ চিনবে না।

যশোরের শার্শা কৃষি কর্মকর্তা দীপক কুমার সাহা জানান, যশোরের যশ খেজুরের রস এ আবহমান গ্রাম-বাংলার ঐতিহ্য রক্ষা করতে উপজেলার বিভিন্ন সড়ক ও পতিত জমিতে খেজুর গাছের চারা রোপণ করা হয়েছে। খেজুর গুড় ইতোমধ্যে জিআই পণ্য হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করেছে। এ পেশার সঙ্গে জড়িত গাছিদের নিয়ে সমাবেশ করে তাদের উৎসাহ দেওয়া হচ্ছে।

তিনি বলেন, এ বছর উপজেলায় মোট খেজুর গাছের সংখ্যা ৪৭ হাজার ৭৯০ টি। এর মধ্যে ৫-১০ বছরের গাছ আছে ৮ হাজার ৭১০ টি, ৫ বছরের নিচের গাছ আছে ৪ হাজার ২৪০ টি এবং পূর্ণ বয়স্ক গাছ (রস আহরণকারী) গাছের সংখ্যা এ বছর ৩৪ হাজার ৮৪০ টি। রস সংগ্রহকারী (গাছির) সংখ্যা আছে ৫৮৫ জন। আশা করছি এবার এলাকার চাহিদা মিটিয়ে বাইরের জেলায় খেজুরের পাটালি পাঠাতে পারবে গাছিরা।

Share on facebook
Facebook
Share on twitter
Twitter
Share on linkedin
LinkedIn