
কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের সচিব ও জিএম (প্রশাসন) মো. মোজাহের আলীর অবৈধভাবে দুটি পদ ধরে রেখে ক্ষমতার অপব্যবহার করে বদলি ও নিয়োগ বাণিজ্য, অবৈধ সংযোগ বাণিজ্য, অফিসের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অযথা হয়রানিসহ বিভিন্ন অনিয়ম দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়ায় তার বিরুদ্ধে অফিসের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে অসন্তোষ সৃষ্টি হয়েছে। মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের হয়রানি এবং আওয়ামী লীগ পন্থি স্টাফদের গালিগালাজ করার মতো অভিযোগও রয়েছে তার বিরুদ্ধে।
জানা যায়, মো. মোজাহের আলী বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের নিকটাত্বীয়।
সম্প্রতি কোম্পানির এমডি প্রকৌশলী রফিকুল ইসলাম হজে যাওয়ার পর পেট্টোবাংলা পরিচালক (অপারেশন) প্রকৌশলী মো. কামরুজ্জামানকে ভারপ্রাপ্ত এমডি হিসেবে দায়িত্ব দেন। এই সময়ের মধ্যে মোজাহের আলী ক্ষমতার অপব্যহার, অনিয়ম দুর্নীতিতে আরও বেশি বেপরোয়া হয়ে উঠেন। আওয়ামী লীগ পন্থি তিনজন অফিসারকে অন্যায়ভাবে বদলি করেন।
সিলেটের জালালাবাদ গ্যাস কোম্পানির লিমেটড থেকে বদলি হয়ে কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড এ প্রায় ৮/১০ মাস আগে মোজাহের আলী জিএম হিসেবে যোগ দেন। যোগদানের পর থেকে জিএম (প্রশাসন) থেকে দায়িত্ব প্রত্যাহার করে কোম্পানির সচিবের দায়িত্ব নিলেও দুটি পদ অবৈধভাবে ব্যবহার করে বদলি বাণিজ্য, নিয়োগ বাণিজ্য, অবৈধ সংযোগ, চট্টগ্রাম অফিস না করে ঢাকায় অবস্থান করা, কোম্পানির তিনটি গাড়ি ব্যবহার করা, অফিসের টাকায় নিজের পরিবারের জন্য নিয়মিত বাজার করা, ভুয়া বিল দেখিয়ে লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ রয়েছে।
সম্প্রতি মহান মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক বঙ্গবন্ধুর ঘনিষ্ঠ সহচর সাবেক মন্ত্রী জহুর আহমদ চৌধুরীর আপন ভাগিনা কোম্পানির সহকারী ব্যবস্থাপক মো. সওরার উদ্দীনকে মিথ্যা অভিযোগে ফাঁসিয়ে দেয়ার ঘটনাও ঘটেছে।
গত ১৩ জুন বিষয়টি নিয়ে কর্ণফুলী গ্যাস অফিসে চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মাহতাব উদ্দীন চৌধুরীসহ আওয়ামী লীগের কিছু নেতাকর্মী উপস্থিত হয়ে জানতে চাইলে অভিযোগকারী বিষয়টি সর্ম্পকে কিছু জানে না বলে দাবি করেন। গত ২০ জুন কোম্পানির এমডির কাছে লিখিতভাবে জানিয়ে সরওয়ার উদ্দীন এ ঘটনার সাথে জড়িত না বলে দাবি করে লিখিতভাবে জানান।
গত ২০ জুন মঙ্গলবার মহাব্যবস্থাপক (প্রশাসন) মোজাহের আলী ছুটি থাকা অবস্থায় অফিসে না এসে অবৈধভাবে উপ মহাব্যবস্থাপক হাবিবুল গণি ও আজিজুল হক, কমন সার্ভিস বিভাগের মহাব্যবস্থাপক মীর মোহাম্মদ শফিউল আলম, জেনারেল স্টোর শাখার ব্যবস্থাপক মোহাম্মদ আবু শাহেদ চৌধুরী, প্রশাসন ও নিরাপত্তা বিভাগের ব্যবস্থাপক মো. আশরাফ আলীকে অবৈধভাবে বদলি করা হয়েছে। এ পর্যন্ত ৭ জন অফিসারকে অবৈধভাবে ক্ষমতায় অপব্যহার করে বদলি করার অভিযোগ উঠেছে মোজাহের আলীর বিরুদ্ধে।
অনিয়ম দুর্নীতিতে দুদকের চোখ ফাঁকি দিতে বিভিন্ন অপকৌশলের আশ্রয় নেয়া হচ্ছে। ছুটিতে থাকা অবস্থায় অফিস স্টাফদের বদলি করা এবং অফিসের গুরুত্বপূর্ণ ফাইল পত্রে স্বাক্ষর করার বিষয়ে এবং অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে নিজের অনিয়ম দুর্নীতির বিষয়ে কোনো ধরনের মন্তব্য করতে রাজি হয়নি কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির জিএম (প্রশাসন) ও কোম্পানির সচিব মোজাহের আলী। নিয়মের বাইরে তবে ছুটিতে থাকা অবস্থায় গুরুত্বপূর্ণ ফাইলপত্রে স্বাক্ষর করার বিয়ষটি তিনি স্বীকার করেছেন। এটা নিয়ম মত হয়েছে কিনা জানতে চাইলে ই-মেইলে স্বাক্ষর করে পাঠানো হয়েছে বলে দাবি করেন।
এ বিষয়ে পেট্টোবাংলা চেয়ারম্যান জিনেন্দ্র নাথ সরকার বলেন, কারো বিরুদ্ধে অনিয়ম দুর্নীতি এবং ক্ষমতার অপব্যবহারের অভিযোগ প্রমাণিত হলে বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। কর্ণফুলী গ্যাসের কয়েকটি বিষয় আমাদের হাতে আসছে। বিষয়টি নিয়ে আমরা মনিটরিং করছি। এমডি অফিসে আসার পর উনার সাথে কথা বলে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।