মঙ্গলবার - ১১ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ - ২৮শে মাঘ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ - ১২ই শাবান, ১৪৪৬ হিজরি

মীরসরাইয়ের চিকিৎসা জনিত ভুলে রোগী লাইফ সাপোর্টে

মানুষ অসুস্থ হলে আল্লাহ্ তায়া’লার পর সবচেয়ে বেশি নির্ভর করে হাসপাতাল ও ডাক্তারদের উপর। সেখানে যদি ভুল রিপোর্ট, ভুল চিকিৎসায় রোগী আরো অসুস্থ হয়, এমনকি মৃত্যু শংকা দেখা দেয় তবে মানুষ কোথায় গিয়ে চিকিৎসা করাবে? মীরসরাই উপজেলার জোরারগঞ্জ থানাধীন বারৈয়ারহাট পৌর এলাকার বারৈয়ারহাট জেনারেল হাসপাতালে ঘটে যাওয়া একটি ঘটনার কারণে জনমনে এমন আশংকাময় প্রশ্ন।

জানাগেছে, সিজারিয়ান রুগি সোনিয়া আক্তারের রক্তের গ্রুপ নির্ণয়ে বারইয়ারহাটের ৩ প্রতিষ্ঠানে দুই রকম রিপোর্ট আসে। এদের মধ্যে বারৈয়ারহাটের নাইটেঙ্গেল ল্যাবে রিপোট আসছে ( A+ ) আবার একই ব্যাক্তির বারৈয়ারহাট জেনারেল হাসপাতাল ও বারৈয়ারহাটের লাইফ কেয়ার হাসপাতালে রিপোট আসে ( 0+ )। কিন্তু ডেলিভারি হওয়ার পর বারৈয়ারহাট জেনারেল হাসপাতাল নাইটেঙ্গেলের রিপোর্টের উপর ভিত্তি করে রুগিকে ( A+ ) ব্লাড পুষ করে দেয়। ভিন্ন গ্রুপের রক্ত হওয়ায় তা ওই রুগির শরীরে এ্যাডযাষ্ট না করায় রুগির শারীরিক অবস্থার অবনতি হয়। পরে তাকে বারৈইয়ারহাট জেনারেল হাসপাতাল থেকে চট্রগ্রাম মা ও শিশু হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়েছে। বর্তমানে সেখানে তিনি জীবন মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে লাইফ’সাপোটে‌ আছেন। ভুক্তভোগী এই রোগী পূর্ব হিংগুলীর খালেদ মাহমুদের স্ত্রী।

১৪৪ মে, ২০২৩ খৃ. রবিবার দুপুরে সোনিয়া আক্তারের স্বামী খালেদ মাহমুদ এই অভিযোগ করেন। এসময় খালেদ মাহমুদ বলেন, তার স্ত্রী সোনিয়া আক্তারের প্রসববেদনা উঠলে গত বৃহস্পতিবার বারৈয়ারহাট জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করেন। সেখানে হাসপাতালের আবাসিক ডাক্তার নাছিমা আক্তার রাতেই সিজার করেন। এতে তার অত্যাধিক রক্তক্ষরণ হয় ও রক্তের হিমোগ্লোবিন মাত্রা (৭.৮) এর কম হওয়ায় রক্ত দেয়ার প্রয়োজন দেখা দেয়। সোনিয়া আক্তারকে রক্তের গ্রুপ সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলে নাইটেঙ্গেল ডায়াগনস্টিক ল্যাব এর পূর্বের রিপোর্ট অনুযায়ী রক্তের গ্রুপ (A+) বলে জানান ডাক্তার নাছিমা আক্তারকে। কিন্তু নাছিমা আক্তার ও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ রক্তের গ্রুপ পরীক্ষা করে নিশ্চিত না হয়ে ক্রস চেক না করে মুখের কথার উপর নির্ভর করে রোগীর শরীরে রক্ত দিয়ে দেন। রক্ত দেয়ার পর রোগীর শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে রক্ত পরীক্ষা করে দেখা যায় রোগীর রক্তের গ্রুপ (O+) ও পজেটিভ। রোগীকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিতে চাইলে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানায় কোন সমস্যা হবেনা দুটাই পজেটিভ ব্লাড। সাময়িক সমস্যা হলেও আস্তেধীরে ঠিক হয়ে হয়ে যাবে। এভাবে কালক্ষেপণ করা ১ দিন পর রোগীর অবস্থা আরো সংকটাপন্ন হলে তাকে চট্টগ্রাম মা ও শিশু হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়।

খালেদ মাহমুদ আক্ষেপ করে বলেন, ডাক্তার ও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের অবহেলায় তাকে বিপদে পড়তে হয়েছে। একদিকে নাইটেঙ্গেল ডায়াগনস্টিক ল্যাব এর ভুল রিপোর্ট অন্যদিকে বারৈয়ারহাট জেনারেল হাসপাতালের খামখেয়ালির কারণে রোগীকে এখন আইসিইউতে রাখতে হচ্ছে। রক্ত ডায়ালাইসিস করে আবার নতুন রক্ত দিতে হবে। এতে প্রায় বাড়তি খরচ আসবে দেড় থেকে ২লাখ টাকা। এতো টাকা এখন আমি কোথায় পাবো?

বারৈয়ারহাট জেনারেল হাসপাতালের চেয়ারম্যান ডাক্তার শাহজাহান ও পরিচালক আলিহাদার টিপু জানান, রোগী সোনিয়া আক্তার একজন ইউনিভার্সেল ডোনার। উনি যে কাওকে রক্ত দিতে পারবেন কিন্তু নিতে পারবেন না। উনাকে রক্ত দেয়ার পূর্বে ক্রস ম্যাচিং করা হয়েছে তখন কোন অসঙ্গতি ধরা পড়ে নাই। কারন তার ক্ষেত্রে ক্রস ম্যাচিং নয় বরং গ্রুপিং টা গুরুত্বপূর্ণ। নাইটেঙ্গেল ডায়াগনস্টিক ল্যাব এর রিপোর্ট ভুল থাকায় এই ভুল হয়েছে তাই এটা বারৈয়ারহাট জেনারেল হাসপাতালের ডাক্তারের কোন দোষ নেই।

মীরসরাই উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডাক্তার মিনহাজুর রহমান বলেন, নিয়মানুযায়ী অবশ্যই যে কোন রোগীকে রক্ত দেয়ার পূর্বে রক্তের গ্রুপ ও ক্রস ম্যাচিং করে নিশ্চিত হতে হবে। অন্যথায় কেউ এর দায় এড়াতে পারে না। এতে রোগীর পরিবার ইচ্ছে করলে আইনি পদক্ষেপ নিতে পারেন।

Share on facebook
Facebook
Share on twitter
Twitter
Share on linkedin
LinkedIn