
চট্টগ্রামের এক নারীকে আটকে রেখে শিশু নির্যাতন ও পাচার মামলায় চালান দেওয়ার ভয় দেখিয়ে মধ্যরাতে দেড় লাখ টাকা আদায়ের অভিযোগ উঠেছে পাঁচলাইশ থানা পুলিশের কয়েকজন সদস্যের বিরুদ্ধে। বিকাশ এবং ব্যাংক অ্যাকাউন্ট থেকে নানাভাবে এ টাকা তুলে নেওয়া হয়।
জানা গেছে, প্রায় এক মাস ধরে নগরীর বিভিন্ন আবাসিক হোটেলে এবং বাসাবাড়ি থেকে অনৈতিক কর্মকাণ্ডে জড়িতদের আটক করছে পুলিশ। সিএমপি কমিশনার অসামাজিক কাজে জড়িতদের বিরুদ্ধে অভিযানের নির্দেশনা দেন। এ সুযোগ কাজে লাগিয়ে কিছু অসাধু পুলিশ কর্মকর্তা নিরীহ মানুষকেও জিম্মি করে অর্থ আদায় শুরু করেছেন। ৬ জুন নগরীর আতুরার ডিপোর তাহেরাবাদ আবাসিক এলাকায় অভিযান চালায় পাঁচলাইশ থানার রোকনুজ্জামান, দীপক ও ইমাম নামে তিন উপপরিদর্শক (এসআই)। ওই এলাকার মক্কা ম্যানশনের পঞ্চম তলার ফ্ল্যাট থেকে ৫ নারীসহ ৬ জনকে আটক করেন তারা।
এ ঘটনার সাক্ষী দেওয়ার জন্য একই ভবনের ৬ষ্ঠ তলার ভাড়াটিয়া এক নারীকে ডেকে নেয় পুলিশ। তবে থানায় নিয়ে যাওয়ার পর পালটে যায় প্রেক্ষাপট। উলটো ওই নারীর বিরুদ্ধে অনৈতিক কার্যকলাপ চালানোর অভিযোগ তোলে পুলিশ। শেষ পর্যন্ত দেড় লাখ টাকা আদায় করে ওই নারীকে ছেড়ে দেওয়া হয়।
সাক্ষ্য দিতে নিয়ে আসা ওই ভুক্তভোগী নারী বলেন, ‘পুলিশ পঞ্চম তলায় অভিযান শেষে আমার বাসায় আসে। অভিযানের বিষয়টি আমি দেখেছি এমন কথা বলে আমাকে সাক্ষ্য দেওয়ার জন্য থানায় নিয়ে যায়। থানায় যাওয়ার পর এসআই রোকনুজ্জামান আমার কাছে দুই লাখ টাকা দাবি করেন। না হলে আমাকে নারী ও শিশু পাচার মামলা দিয়ে চালান দেয়ার ভয় দেখান। তিন কর্মকর্তার বিভিন্ন কথাবার্তায় আমি দিশেহারা হয়ে যাই। উপায় না পেয়ে আমার আত্মীয়স্বজন এবং বিভিন্ন মাধ্যম থেকে নগদ ৫০ হাজার টাকা এবং বিকাশ ও এটিএম বুথ থেকে তুলে মোট দেড় লাখ টাকা তাদের হাতে তুলে দিই। রাত দেড়টার দিকে থানা থেকে আমাকে ছেড়ে দেওয়া হয়।
তিনি আরও বলেন, আত্মীয়রা আমার নম্বরে টাকা বিকাশ করার পর তারা (পুলিশ কর্মকর্তা) পর্যায়ক্রমে ট্রান্সফার করে নিয়ে যান। এসব লেনদেনের প্রমাণ আমার কাছে রয়েছে।
অভিযোগ প্রসঙ্গে জানতে এসআই শরীফ রোকনুজ্জামান ও দীপক দেওয়ানের মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল করা হলেও তা ধরেননি। তবে এসআই ইমাম হোসেন বলেন, অভিযান চালিয়ে ৬ জনকে আটক করে সংশ্ল্নিষ্ট মামলায় আদালতে পাঠানো হয়েছিল। কোনো ধরনের আর্থিক লেনদেন হয়নি। এ বিষয়ে ওসি স্যার ভালো বলতে পারবেন।
থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নাজিম উদ্দীন মজুমদার বলেন, কাউকে টাকার বিনিময়ে থানা থেকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে এমন ঘটনা ঘটেনি। এরপরও এ বিষয়ে আমি খোঁজ নেব।
প্রসঙ্গত, কিডনি রোগী এক নারীকে লাথি মারা এবং থানাহাজতে এক যুবককে নির্যাতনের অভিযোগ রয়েছে পাঁচলাইশ থানার ওসির বিরুদ্ধে। তার বিরুদ্ধে একটি মামলাও চলছে। এ অবস্থায় আরেক নারীকে আটকে রেখে টাকা আদায়ের অভিযোগের আঙুল উঠছে তার দিকেও।