রবিবার - ১৮ই মে, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ - ৪ঠা জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ - ২০শে জিলকদ, ১৪৪৬ হিজরি

মহাষ্টমী ও কুমারী পূজা আজ

মহাষ্টমী ও কুমারী পূজা আজ

জমে উঠেছে দুর্গাপূজা। পাঁচ দিনের এ উৎসবকে ঘিরে সারা দেশের হিন্দু সম্প্রদায়ের মধ্যে এখন আনন্দমুখর পরিবেশের সৃষ্টি হয়েছে। দুর্গোৎসবের দ্বিতীয় দিন গতকাল শনিবার মহাসপ্তমীতে ভক্ত, পূজারী ও দর্শনার্থীদের উপচেপড়া ভিড়ে জমজমাট হয়ে উঠেছিল সারা দেশের ৩২ হাজার ৪০৮টি পূজামণ্ডপ। মণ্ডপে মণ্ডপে এ দিন ছড়িয়ে পড়েছিল উৎসবের বারতা। তৃতীয় দিন আজ রোববার মহাষ্টমী ও সন্ধিপূজা। একই সাথে রামকৃষ্ণ মিশনসহ বেশ কয়েকটি পূজামণ্ডপে কুমারী পূজাও হবে। মহাসপ্তমীর দিনে গতকাল সকালে মণ্ডপে মণ্ডপে ত্রিনয়নী দেবী দুর্গার চক্ষুদান করা হয়। সকাল ৯টা ৫৭ মিনিটের মধ্যে দেবীর নবপত্রিকা প্রবেশ, স্থাপন ও সপ্তমাদি কল্পরাম্ভ অনুষ্ঠিত হয়। এরপর দেবীর সপ্তমীবিহিত পূজা শেষে আয়োজন করা হয় পুষ্পাঞ্জলি, প্রসাদ বিতরণ ও ভোগ আরতি। অনেক মণ্ডপেই ছিল আরতি, স্বেচ্ছায় রক্তদান, দরিদ্রদের মধ্যে বস্ত্র বিতরণ, নৃত্যনাট্য, ভক্তিমূলক সঙ্গীত, নাটক ও সাংস্কৃৃতিক অনুষ্ঠানসহ অন্যান্য আয়োজনও।
সারা দেশের মতো রাজধানী ঢাকার পূজামণ্ডপগুলোও এ দিন ঢাক-ঘণ্টার বাদ্য-বাজনা আর ভক্তদের পূজা-অর্চনায় মুখর হয়ে ওঠে। সরেজমিন রাজধানীর বেশ কয়েকটি মণ্ডপ ঘুরে সর্বত্র উৎসবের ছোঁয়া দেখা গেছে। মণ্ডপে মণ্ডপে মহাসপ্তমীর পূজা দেখতে আসা নানা বয়সী দর্শনার্থী, পূজারী ও ভক্তদের ভিড় ছিল ব্যাপক। বিশেষ করে সন্ধ্যার পর এ ভিড় ছিল উপচেপড়া। আজ রোববার মহাষ্টমীর দিন দর্শনার্থী, পূজারী ও ভক্তদের এ ভিড় আরো বাড়বে বলে মনে করা হচ্ছে।
মহাষ্টমীতে আজ রোববার সকাল ৯টা ৫৮ মিনিটের মধ্যে দেবীর মহাষ্টমী কল্পরাম্ভ ও মহাষ্টমীবিহিত পূজা অনুষ্ঠিত হবে। এরপর পুষ্পাঞ্জলি ও প্রসাদ বিতরণ শেষে বিকেল ৫টা ২৪ মিনিট থেকে সন্ধ্যা ৬টা ১২ মিনিটের মধ্যে সন্ধি পূজা অনুষ্ঠিত হবে। তবে আজকের দিনের প্রধান আকর্ষণই থাকবে কুমারী পূজা। বেলা ১১টায় রাজধানীর গোপীবাগের রামকৃষষ্ণ মিশন ও মঠ পূজামণ্ডপে এ কুমারী পূজা অনুষ্ঠিত হবে। এ জন্য অল্পবয়সী একটি মেয়েকে কুমারী হিসেবে মনোনীত করা হয়েছে, যাকে দেবী দুর্গার প্রতীক হিসেবে বিবেচনা করা হয়। শাস্ত্রীয় ব্যাখ্যা অনুসারে তার একটি নামকরণও করা হবে। আজ দেবীর প্রতীক হিসেবে যে কুমারী মেয়েটিকে পূজা করা হবে, প্রথা ও নিরাপত্তার কারণে তার নাম ও পরিচয় পূজা শুরু হওয়ার আগ পর্যন্ত প্রকাশ করা হয় না বলে জানিয়েছেন রামকৃষষ্ণ মিশন কর্তৃপক্ষ। রাজধানী ছাড়াও রামকৃষষ্ণ মিশনের নারায়ণগঞ্জ, দিনাজপুর ও ফরিদপুরসহ কয়েকটি মঠ এবং কয়েকটি ঐতিহ্যবাহী পূজামণ্ডপেও আজ কুমারী পূজা অনুষ্ঠিত হবে।

বিশুদ্ধ সিদ্ধান্ত পঞ্জিকা মতে, জগতের মঙ্গল কামনায় দেবী দুর্গা এবার ঘোটকে (ঘোড়ায়) চড়ে কৈলাশ থেকে মর্ত্যলোকে (পৃথিবী) আসবেন। এতে প্রাকৃতিক বিপর্যয়, রোগ-শোক, হানাহানি ও মারামারি বাড়বে। অন্যদিকে কৈলাশে (স্বর্গে) বিদায়ও নেবেন ঘোড়ায় চড়ে। যার ফলে জগতে মড়ক ব্যাধি এবং প্রাণহানির মতো ঘটনা বাড়বে। গতবছর মহিষাসুরমর্দিনী দেবী মর্ত্যে এসেছিলেন গজে (হাতিতে) চেপে। গজ বা হাতিতে চড়ে দেবীর আগমনের অর্থ হলো শুভ। মনে করা হয়ে থাকে দেবী যদি গজে চড়ে মর্ত্যে আসেন তাহলে তিনি সঙ্গে করে সুখ-সমৃদ্ধি নিয়ে আসেন। হাতি হচ্ছে জ্ঞান এবং সমৃদ্ধির প্রতীক।

দুর্গতিনাশিনী দেবী দুর্গার পূজা আনন্দমুখর করে তুলতে দেশজুড়ে বর্ণাঢ্য প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। সারাদেশে এখন বইছে উৎসবের আমেজ। ঢাক-ঢোল, কাঁসা ও শঙ্খের আওয়াজে মুখরিত হয়ে উঠেছে বিভিন্ন ম-প। রামকৃষ্ণ মিশনের পূজার নির্ঘণ্টে বলা হয়েছে, শুক্রবার কল্পারম্ভ এবং বোধন আমন্ত্রণ ও অধিবাসের মধ্যদিয়ে উৎসবের প্রথম দিন ষষ্ঠী পূজা সম্পন্ন হয়েছে। এদিন সকাল থেকে চন্ডিপাঠে মুখরিত ছিল সব ম-প এলাকা। উৎসবের দ্বিতীয় দিন গতকাল শনিবার মহাসপ্তমীর পূজা অনুষ্ঠিত হয় সকাল ৬টা ১০ মিনিটে। মহাঅষ্টমীর পূজা অনুষ্ঠিত হবে আজ সকাল ৬টা ১০ মিনিটে এবং বেলা ১১টায় অনুষ্ঠিত হবে কুমারী পূজা। সন্ধিপূজা শুরু হবে রাত ৮টা ৬ মিনিটে। সোমবার সকাল ৬টা ১০ মিনিটে শুরু হবে মহানবমী পূজা। পরদিন মঙ্গলবার দশমী পূজা শুরু সকাল ৬টা ৩০মিনিট। পূজা সমাপন ও দর্পণ বিসর্জন হবে সকাল ৯টা ৪৯ মিনিটের মধ্যে। সন্ধ্যায় আরাত্রিকের পর প্রতিমা বিসর্জন ও শান্তিজল গ্রহণের মধ্যদিয়ে শেষ হবে পাঁচদিনব্যাপী এ শারদীয় উৎসবের।

Share on facebook
Facebook
Share on twitter
Twitter
Share on linkedin
LinkedIn