
মনের_অনুভূতি
কাজী নাজরিন
আজকে ছেলেকে স্কুল থেকে আনতে গিয়ে একটা খারাপ খবর শুনে মন মূহুর্তের মধ্যে কেমন যেন হয়ে গেলো। সককিছু ওলট পালট লাগছে।এইতো সেদিন ছেলেকে ক্লাস ওয়ানে ভর্তি করালাম আরেকটা স্কুলে নার্সারি ক্লাস শেষ করে। লটারির মাধ্যমে ক্লাস ওয়ানে ভর্তির সুযোগ পেয়েছে। এরপর শুরু হলো কতজনের সাথে সখ্যতা। তাদের মধ্যে স্নেহার নানু একজন। স্নেহা আমার ছেলের সাথে ভর্তি হলো।। স্নেহার আম্মু পেশায় ডাক্তার। তাইতো স্নেহা আর তার বড় ভাইকে নানু স্কুলে নিয়ে আসতেন। আমার বাসা একদম স্কুলের পাশে ছিলো বিধায় স্নেহার নানু মাঝেমধ্যে আমার বাসায় এসে বসতেন।স্নেহার নানুও কিন্তু শিক্ষিত মানুষ উনি তখনকার আমলে বি এ পাশ করেছেন আবার হোমিওপ্যাথি চিকিৎসক। তিনি বিকেলে চেম্বার করেন আর দিনের বেলা নাতি নাতনিকে দেখাশোনা করেন।এদিকে স্নেহার নানুর শরীর খারাপ বা কোন সমস্যা হলে স্নেহার আম্মু বাচ্চাদের স্কুলে নিয়ে আসতেন। স্নেহার আম্মুর সাথেও আমার ভাব জমে যায়। পরীক্ষার আগে যেকোনো পড়া ধরতে স্নেহার আম্মুও আমাকে কল করে বা বাসায় এসে সবকিছু নিয়ে যেতেন। একটা বেসরকারি ক্লিনিকে চাকুরী আবার বিকেলে নিজস্ব চেম্বারে বসতে হয় স্নেহার আম্মুকে। এতো ব্যস্ততার মধ্যেও ঠিকই বাচ্চাদের সবকিছু সামলে নিতেন।দেখতে দেখতে আমার ছেলে ক্লাস ত্রিতে উঠে গেলো। হঠাৎ ক*রোনার আগমনে সবকিছু লণ্ডভণ্ড। স্বাভাবিক হতে হতে আমাদের বাচ্চারা ক্লাস ফাইভে উঠে গেলো অনলাইন ক্লাস করে করে।এখন তারা সিক্সে পড়ে। স্নেহার আম্মুর সাথে দীর্ঘদিন আর কথা হয়নি। এখন অবশ্যই মেয়ে বড় হয়েছে আবার ক্লাস টেনে বড় ছেলে আছে।এখন মা কিংবা নানু আর নিয়ে আসতে হয় না, ভাই বোন দুজন মিলে বাসে বা সিএনজি করে স্কুলে আসা যাওয়া করে।এদিকে মেয়েটা অনেক লম্বা হয়ে গেছে মা আর নানুর মতো। এখন স্নেহা নিজের পড়া নিজে ধরতে পারে।মাঝেমধ্যে দেখা হলে সুন্দর করে সালাম দেয়।দেখতে যেমন সুন্দর, লম্বা, ব্যবহারও তেমনি মিষ্টি। আজ স্কুলে গিয়ে জানতে পারি গত দশদিন আগে স্নেহা ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে না ফেরার দেশে চলে গেলো। স্কুলে গিয়ে আমার ছেলে শিক্ষকদের কাছে শুনে আসে।আমার মাথায় যেনো আকাশ ভেঙে পড়েছে,,।স্নেহার আম্মুর মোবাইল বন্ধ পাচ্ছি, আরেকজন থেকে খবর নিয়ে জানতে পারলাম স্নেহার আম্মু স্নেহা কে হারিয়ে মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেছেন। আমিও যেনো কিছুতেই নিজেকে বিশ্বাস করাতে পারছি না স্নেহা নেই,,,,