প্রবীণ সাংবাদিক নেতা ও বীর মুক্তিযোদ্ধা মইনুদ্দীন কাদেরী শওকতকে দৈনিক ইত্তেফাকের প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক মরহুম তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া স্মৃতি পদকে সম্মানিত করেছে বাংলাদেশ মানবাধিকার সাংবাদিক সংস্থা। গত ৩ জুন, ২০২৩ খ্রি. শনিবার বিকেলে চট্টগ্রাম সার্কিট হাউসে তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়ার ৫৪ তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত এক স্মরণসভায় মানবাধিকার সাংবাদিক সংস্থার পক্ষ থেকে বিগত শতাব্দির শেষ সিকিভাগে সাহসী সাংবাদিকতা ও বর্তমান শতাব্দির প্রথম দশকে বিশ্ব প্রেস কাউন্সিল নির্বাহী সদস্য হিসেবে দেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করতে ভূমিকা রাখায় মইনুদ্দীন কাদেরী শওকতকে এ সম্মাননা প্রদান করা হয়।
এ উপলক্ষে আয়োজিত স্মরণসভায় সভাপতিত্ব করেন মানবাধিকার সাংবাদিক সংস্থার সভাপতি এস.এম. জামাল উদ্দিন। বক্তব্য রাখেন চট্টগ্রাম প্রেসক্লাব সভাপতি ও দৈনিক ইত্তেফাকের চট্টগ্রাম ব্যুরো প্রধান সালাহউদ্দিন মোঃ রেজা, বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদ চট্টগ্রাম শাখার প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি আলহাজ্ব জাহাঙ্গীর চৌধুরী সিইনসি, সমাজ কল্যাণ ফেডারেশনের মহাসচিব হাফেজ মোহাম্মদ আমান উল্লাহ, দৈনিক ইত্তেফাকের সিনিয়র রিপোর্টার ড. সৈয়দ আবদুল ওয়াজেদ, মানবাধিকার সংগঠক ও সাংবাদিক শ্যামল নাথ প্রমুখ।
মানিক মিয়া সম্মাননাপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা-সাংবাদিক-সম্পাদক মইনুদ্দীন কাদেরী শওকত ১৯৬৯ সালে সাংবাদিকতা ও ১৯৬৪ সালে সার্বজনীন ভোটাধিকার আন্দোলনে সম্পৃক্ত হবার মাধ্যমে রাজনীতিতে সম্পৃক্ত হন। ১৯৬৯ সালে গণঅভ্যুত্থান ও ৭১ এর মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। স্বাধীনতার পূর্বে বিভিন্ন দৈনিকের রিপোর্টার ছিলেন। স্বাধীনতার পর ১৯৭২ সাল থেকে হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী প্রতিষ্ঠিত ও ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনের নেতা অলি আহাদ সম্পাদিত ‘ইত্তেহাদ’ এর বিশেষ সংবাদদাতা, ডেইলি ট্রিবিউন এর চট্টগ্রাম প্রতিনিধি দৈনিক নয়াবাংলা’র সহ-সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৮৪ সালের ১৭ আগস্ট তাঁর সম্পাদনায় চট্টগ্রাম থেকে ইজতিহাদ পত্রিকা প্রকাশিত হয়। প্রকাশনার কয়েক মাস পর তদানিন্তন এরশাদ সরকার পত্রিকাটির প্রকাশনা নিষিদ্ধ ঘোষণা করলে পরে হাইকোর্টে রীট করার পর এই নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করা হয়।
মুক্তিযোদ্ধা সাংবাদিক মইনুদ্দীন কাদেরী শওকত চট্টগ্রাম সংবাদপত্র পরিষদ ও চিটাগাং এডিটরস কাউন্সিল সাধারণ সম্পাদক, পূর্বাঞ্চলীয় সংবাদপত্র পরিষদ সভাপতি, বাংলাদেশ সম্পাদক সমিতির আহবায়ক ও ওয়ার্ল্ড এসোসিয়েশন অব প্রেস কাউন্সিলস ডব্লিউ এ পিসি নির্বাহী পরিষদ সদস্য।
তিনি বাংলাদেশ প্রেস কাউন্সিল, প্রেস জুডিশিয়াল, প্রেস রুলস কমিটি সদস্য (২০০২-২০০৬) বাংলাদেশ সংবাদপত্র পরিষদ বিএসপি সহসভাপতি (২০০২-২০০৩), বাংলাদেশ মানবাধিকার সাংবাদিক সংস্থার কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান (১৯৮৮-১৯৯১) চট্টগ্রাম সাংবাদিক ফোরাম সভাপতি (১৯৮০-১৯৮৪), চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাব নির্বাচন কমিশনার (১৯৮৭-১৯৯১), চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের সাংস্কৃতিক সম্পাদক, যুগ্ম সম্পাদক, ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক (১৯৭৯-১৯৮৪), বুদ্ধিজীবী স্মৃতি সংসদ কেন্দ্রীয় আহবায়ক (১৯৮৭-১৯৯১), গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার চট্টগ্রাম জেলা সড়ক পরিবহন উপদেষ্টা কমিটি সদস্য (১৯৯০-৯১), চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় ঈদ জামাত কমিটি, জমিয়তুল ফালাহ, জাতীয় যক্ষা নিরোধ সমিতি কাউন্সিলার(১৯৮৩), গণতান্ত্রিক মুক্তিযোদ্ধা ফোরাম কেন্দ্রীয় চেয়ারম্যান (১৯৯৯-২০০১), চট্টগ্রাম সাংবাদিক কো-অপারেটিভ হাউজিং সোসাইটি নির্বাচন পরিচালনা কমিটির চেয়ারম্যান (২০০৫) এবং ব্যবস্থাপনা কমিটির চেয়ারম্যান (২০১৪-২০১৭), মুক্তিযুদ্ধের সময় হাটহাজারী ফটিকা আঞ্চলিক মুক্তিবাহিনী (বিএলএফ) প্রধান, হাটহাজারী ফটিকা হুকুমদখল জমি উদ্ধার কমিটির সাধারণ সম্পাদক (১৯৭৯-১৯৮৪), ফেডারেশন অব ইয়ুথ, কেন্দ্রীয় সেক্রেটারী জেনারেল (১৯৭৬-১৯৭৯), জাতীয় সাংস্কৃতিক পরিষদ সাধারণ সম্পাদক (১৯৮১-১৯৮৩) ছিলেন।
মুক্তিযোদ্ধা-সম্পাদক মইনুদ্দীন কাদেরী শওকত বাংলাদেশ প্রেস ইনস্টিটিউট পিআইবি আয়োজিত ১৯৯৩ Trainning Seminar for Editors of Community Newspapers ১৯৯৫ সালে Editors Colloquim on investigative Reporting এ অংশগ্রহণ করেন। সম্পাদক কাদেরী শওকত চিটাগাং ইউনিভার্সিটি ম্যানেজমেন্ট এসোসিয়েশন, চট্টগ্রাম সরকারি বাণিজ্য কলেজ প্রাক্তন ছাত্র সমিতি, বাংলাদেশ কো-অপারেটিভ বুক সোসাইটির সদস্য এবং চট্টগ্রাম ডায়াবেটিক সমিতি আজীবন সদস্য। গত চার যুগ ধরে চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের স্থায়ী সদস্য। ১৯৯৬ সালে ২৬ শে মার্চ মুক্তিযোদ্ধা-সাংবাদিক হিসেবে এবং ২০০৬ সালের ১০ অক্টোবর কৃতী সাংবাদিক হিসেবে চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাব সংবর্ধনা দেয় মইনুদ্দীন কাদেরী শওকতকে। তিনি সিনিয়র জার্নালিস্ট ফোরাম আহ্বায়ক ও কল্পলোক মিডিয়া টাওয়ার সাংবাদিক ফ্ল্যাট মালিক স্টীয়ারিং কমিটির চেয়ারম্যান।
চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন ২০১৬ সালের ২৬ ডিসেম্বর বীর মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে সংবর্ধনা প্রদান করে। চট্টগ্রাম একুশে উৎসব পরিষদ ২০১৬ সালের ১৯ ফেব্রুয়ারি সাংবাদিকতায় অবদানের জন্য একুশে সম্মাননা পদক এবং ওই বছরের ৩০ মার্চ চট্টগ্রাম রিপোর্টার্স ইউনিটি বিগত শতাব্দীর শেষ সিকি ভাগে (১৯৭৫-২০০০) সাহসী সাংবাদিকতা ও বর্তমান শতাব্দীর প্রথম দশকে বিশ্ব প্রেস কাউন্সিলের নির্বাহী সদস্য হিসেবে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি তুলে ধরতে ভূমিকা রাখায় সম্মাননা প্রদান করে।
ওয়ার্ল্ড এসোসিয়েশন অব প্রেস কাউন্সিলস নির্বাহী সদস্য কাদেরী শওকত ডব্লিউ এ পি সি ও তানজানিয়া ২০০৪ ও ইস্তাম্বুল ২০০৬ ঘোষণায় স্বাক্ষরকারীদের অন্যতম।
ভারতের জাতীয় প্রেস ডে উপলক্ষে প্রেস কাউন্সিল অব ইন্ডিয়া প্রকাশিত স্যুভিনিয়রে ২০০৬ ও ২০০৭ সালে মইনুদ্দীন কাদেরী শওকতের দুটি নিবন্ধ ছাপা হয়। নিবন্ধ দুটি হলো Press Freedom : A continuing struggle’ (2006, PCI souvenir, page : 145) এবং `Freedom of the press is a fundamental rights’ (2007, PCI souvenir, page : 69). ঐ souvenir দু’টিতে ভারতের তৎকালীন রাষ্ট্রপতি ড. এপিজে আবদুল কালাম, পরবর্তী রাষ্ট্রপতি প্রতিভা পাতিল, প্রধানমন্ত্রী ড. মনমোহন সিং, প্রতিরক্ষা মন্ত্রী (পরবর্তীতে রাষ্ট্রপতি) প্রণব মুখার্জি, তথ্যমন্ত্রী প্রিয় রঞ্জন দাস মুন্সী, গুজরাটের মূখ্যমন্ত্রী (পরবর্তীতে ভারতের প্রধানমন্ত্রী) নরেন্দ্র মোদী, বিশ্ব প্রেস কাউন্সিলস্ প্রেসিডেন্ট জনাব অকটয় এক্সি সহ বিশ্বের প্রেস কাউন্সিল সমূহের দায়িত্বশীল কর্মকর্তাবৃন্দ, ভারতের বিভিন্ন রাজ্যের মূখ্যমন্ত্রী ও বিশ্বের বিশিষ্ট ব্যক্তিদের লেখা ও বাণী ছাপা হয়। ২০০৭-২০০৮ সালে ওয়ার্ল্ড অ্যাসোসিয়েশন অব প্রেস কাউন্সিলের কান্ট্রি রিপোর্টের মধ্যে তার রিপোর্ট শ্রেষ্ঠ রিপোর্ট হিসেবে বিবেচিত হয় চমৎকার উপস্থাপন ও লেখনির জন্য। ২০০৪ সালের ২৪-২৬ অক্টোবর তাঞ্জানিয়ার রাজধানী দার-উস-সালামে অনুষ্ঠিত ডব্লিউ এপিসির নবম আন্তর্জাতিক সম্মেলনে তার রিপোর্ট অন্যতম শ্রেষ্ঠ রিপোর্ট হিসেবে মর্যাদা পায় এবং ওই সময় তিনি ডব্লিউএপিসির ১১ সদস্য বিশিষ্ট নির্বাহী পরিষদের অন্যতম সদস্য নির্বাচিত হন। এছাড়া ২০০৬ সালে ইস্তাম্বুলে গঠিত ডব্লিউ এপিসির সংবিধান কমিটির সদস্য ছিলেন তিনি। তাঁর রিপোর্ট ২০০৯ সালের ৮-১০ জুলাই ইস্তাম্বুলে এবং ২০১০ সালের ২৪-২৬ মার্চ সাইপ্রাসে অনুষ্ঠিত ডব্লিউ এপিসির সাধারণ এসেম্বলিতে প্রশংসিত হয়।
২০১৮ সালে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পূর্বে দৈনিক ইত্তেফাকের সম্পাদক মণ্ডলীর সভাপতি ব্যারিস্টার মইনুল হোসেনকে অন্যায়ভাবে মামলা দিয়ে যখন কারারুদ্ধ ও হয়রানি করা হয় তখন সারাদেশের মধ্যে একমাত্র সাংবাদিক-সম্পাদক মইনুদ্দীন কাদেরী শওকতই প্রতিবাদ করেছিলেন।
মরহুমা আনোয়ারা বেগম এবং আওয়ামী মুসলিম লীগ বৃহত্তর চট্টগ্রাম শাখার প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি (১৯৪৯), নিখিল ভারত মুসলিম লীগ, চট্টগ্রাম শাখার প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক (১৯২৪) চট্টগ্রাম আইনজীবী সমিতির প্রথম মুসলিম সভাপতি মরহুম আবদুল লতিফ উকিলের কনিষ্ঠ পুত্র মইনুদ্দীন কাদেরী শওকত। প্রখ্যাত নিউরোসার্জন, বিএম এ প্রাক্তন সভাপতি অধ্যাপক ডা. এল এ কাদেরীর ছোট ভাই এবং মোহরাস্থ’ পীরে কামেল হযরত মাওলানা নূর আহমদ আল কাদেরী (রঃ) এর দৌহিত্র।
স্ত্রী শেখ আফসানা কাদেরী ইজতিহাদ পত্রিকার ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক। একমাত্র পুত্র শিহাব কাদেরী ও একমাত্র কন্যা সামিনা কাদেরী। তিনি ১৯৯৬ সালে পবিত্র হজব্রত পালন করেন।
Post Views: ১৩৬