রবিবার - ২০শে এপ্রিল, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ - ৭ই বৈশাখ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ - ২২শে শাওয়াল, ১৪৪৬ হিজরি

ভাঙড় থানার সামনে সাংবাদিকদের ওপর হামলা নয়, গণমাধ্যমের স্বাধীনতার ওপর সরাসরি আঘাত

ভাঙড় থানার সামনে সাংবাদিকদের ওপর হামলা নয়, গণমাধ্যমের স্বাধীনতার ওপর সরাসরি আঘাত

 

 

পশ্চিমবঙ্গের দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলার যাদবপুর লোকসভা কেন্দ্রের অন্তর্গত ভাঙড় বিধানসভার ভাঙড় থানার সামনে আজ, ২৮ মার্চ (শুক্রবার), শাসকদলের আশ্রিত দুষ্কৃতকারীরা গণতন্ত্রের চতুর্থ স্তম্ভ—সংবাদমাধ্যমের ওপর নির্মম আক্রমণ চালিয়েছে। এই ঘটনা কেবল সাংবাদিকদের ওপর হামলা নয়, এটি মতপ্রকাশের স্বাধীনতা ও গণতন্ত্রের ওপর সরাসরি আঘাত।

প্রশ্ন উঠছে, যদি থানার সামনে, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ভবনের সামনেই দুষ্কৃতীরা এইভাবে হামলা চালায়, তবে সাধারণ মানুষ কিভাবে নিরাপদ থাকবে? আইনশৃঙ্খলা কি তবে পশ্চিমবঙ্গে সম্পূর্ণ ভেঙে পড়েছে?

হামলার বিবরণ
বৃহস্পতিবার (২৭ মার্চ ২০২৫) এক সাংবাদিকের ওপর হামলার প্রতিবাদে পরদিন, ২৮ মার্চ, সাংবাদিকরা কালো কাপড় পরে ভাঙড় থানায় ডেপুটেশন জমা দিতে যান। কিন্তু থানার গেটের সামনেই পরিকল্পিতভাবে তাদের ওপর আক্রমণ চালানো হয়। অভিযোগ, তৃণমূল কংগ্রেসের নেতা আওশান মোল্লা, রাজ্জাক খান, আসান, মোদাস্সের মোল্লা, রাজু পোদ্দারের নেতৃত্বে প্রায় ২০ জন তৃণমূল কর্মী সাংবাদিকদের লাঠি ও বাঁশ দিয়ে বেধড়ক মারধর করেন। হামলায় প্রায় ২০ জন সাংবাদিক আহত হন। হামলাকারীরা সাংবাদিকদের ক্যামেরা, বুমসহ অন্যান্য সরঞ্জাম ভেঙে ফেলে এবং তাদেরকে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করে।

সাংবাদিক মহলের প্রতিক্রিয়া
এই বর্বরোচিত হামলার ঘটনায় সংবাদমাধ্যম মহলে ব্যাপক ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। ডিজিটাল মিডিয়া ফেডারেশনের সম্পাদক সাকিরুল ইসলাম বলেন, “এটি শুধুমাত্র কিছু সাংবাদিকের ওপর হামলা নয়, বরং গণমাধ্যম ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতার ওপর সরাসরি আঘাত। থানার সামনেই যদি এমন ঘটনা ঘটে, তবে এটি আইনশৃঙ্খলার চরম অবনতি।”

তিনি জানান, এই ঘটনার বিরুদ্ধে ভাঙড় থানায় লিখিত অভিযোগ জানানো হয়েছে। পাশাপাশি, ভাঙড় ডিভিশনের ডিসি , কলকাতা পুলিশের সিপির কাছে লিখিত আবেদন পাঠানো হয়েছে। সাংবাদিকদের ওপর একের পর এক হামলার ঘটনায় সংবাদমাধ্যম মহল ক্ষোভে ফুঁসছে। অভিযুক্তদের দ্রুত গ্রেপ্তার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে বৃহত্তর আন্দোলনের হুঁশিয়ারি দিয়েছেন সাংবাদিকরা।

নওসাদ সিদ্দিকীর প্রতিক্রিয়া
ভাঙড়ের বিধায়ক নওসাদ সিদ্দিকী এই হামলার তীব্র নিন্দা করে বলেন, “আমি ভাবতেই পারছি না, এরা কোন পর্যায়ে পৌঁছেছে! সাংবাদিকদের ওপর এই ধরনের বর্বরোচিত হামলা সম্পূর্ণ অগ্রহণযোগ্য। আমি বিষয়টি নজরে রাখছি। যদি কলকাতা পুলিশের ভাঙড় ডিভিশন যথাযথ ব্যবস্থা না নেয়, তবে আমি বিধানসভায় এই বিষয়টি উত্থাপন করব এবং মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে এর জবাব চাইব।”

প্রশাসনের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন
এই ঘটনার পর প্রশাসনের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। থানার সামনে যখন এই হামলা হয়, তখন পুলিশ কেন নিষ্ক্রিয় ছিল? আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কি দুষ্কৃতীদের মদত দিচ্ছে? এসব প্রশ্নের উত্তর প্রশাসনকে দিতেই হবে।

সাংবাদিকরা স্পষ্ট করেছেন, যদি দোষীদের বিরুদ্ধে অবিলম্বে ব্যবস্থা না নেওয়া হয়, তবে তারা বৃহত্তর আন্দোলনে যেতে বাধ্য হবেন। গণমাধ্যমের স্বাধীনতার জন্য এই লড়াই চলবে।

Share on facebook
Facebook
Share on twitter
Twitter
Share on linkedin
LinkedIn