মঙ্গলবার - ২০শে মে, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ - ৬ই জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ - ২২শে জিলকদ, ১৪৪৬ হিজরি

বোয়ালখালীতে সেনাবাহিনীর সফল অভিযান: মাদক-ডাকাতি চক্রের দুই শীর্ষ অপরাধী গ্রেপ্তার, জনমনে স্বস্তি

বোয়ালখালীতে সেনাবাহিনীর সফল অভিযান: মাদক-ডাকাতি চক্রের দুই শীর্ষ অপরাধী গ্রেপ্তার, জনমনে স্বস্তি

 

চট্টগ্রামের দক্ষিণাঞ্চলীয় উপজেলা বোয়ালখালীতে সেনাবাহিনীর একটি গোপন অভিযানে গ্রেপ্তার করা হয়েছে কুখ্যাত ডাকাত ও মাদক কারবারি কামাল ও ছাত্রদল নেতা পরিচয়ে রাজনৈতিক ছত্রচ্ছায়ায় অপরাধে জড়িত রায়হানকে। স্থানীয় জনসাধারণের দীর্ঘদিনের আতঙ্ক ও অভিযোগের ভিত্তিতে পরিচালিত এই অভিযানে জনমনে ফিরে এসেছে স্বস্তি, আর অপরাধের ছায়াঘেরা গলিপথে উঠেছে নতুন ভোরের আলো।
১০ নম্বর কড়লডেঙ্গা ইউনিয়নের বাসিন্দা রায়হান, যিনি ছাত্রদলের আহ্বায়ক পদপ্রার্থী হিসেবে পরিচিত ছিলেন, তার বিরুদ্ধে একাধিক হত্যা, চুরি ও ডাকাতির মামলা রয়েছে। এলাকায় রাজনৈতিক পরিচয়ের আড়ালে রায়হান দীর্ঘদিন ধরে চাঁদাবাজি ও দখলদারিত্ব চালিয়ে আসছিলেন বলে স্থানীয়রা অভিযোগ করেছেন।
অপরদিকে, গ্রেপ্তারকৃত কামাল ওরফে ‘বেয়াডা কামাল’ দীর্ঘদিন ধরে কড়লডেঙ্গাসহ আশপাশের এলাকায় সন্ত্রাস, অস্ত্র ব্যবসা ও মাদকের বিস্তার ঘটিয়ে অপরাধের রাজত্ব কায়েম করেছিল। কামালের বিরুদ্ধে রয়েছে একাধিক মামলার নথি, যার মধ্যে ডাকাতি, অবৈধ অস্ত্র ও মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে মামলাও অন্তর্ভুক্ত। স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, কামালের ভয়ে অনেক পরিবার তাদের সন্তানদের রাতে বাইরে যেতে দিত না।
আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর এক শ্রেণির রাজনৈতিক সুবিধাভোগী ও দুর্বৃত্তরা যখন অরাজকতা ছড়াতে শুরু করে, তখন রায়হান ও কামালের মতো চক্রগুলো আরও সক্রিয় হয়ে উঠে। তারা রাজনৈতিক পরিচয় ব্যবহার করে প্রশাসনিক দুর্বলতা ও নিরাপত্তাহীনতার সুযোগে সাধারণ মানুষের জমি দখল, চাঁদাবাজি এবং ভয়ভীতি প্রদর্শনের মাধ্যমে এলাকাজুড়ে ত্রাস সৃষ্টি করে।
সেনাবাহিনীর এই অভিযানকে স্থানীয়রা স্বাগত জানিয়েছেন। তারা বলেন, “এতদিন আমরা মুখ খুলতেও ভয় পেতাম। কিন্তু আজ যারা আমাদের দুঃসহ জীবনের কারণ ছিল, তারা ধরা পড়েছে দেখে মনে হচ্ছে সত্যিই সময় বদলেছে।”
তাদের মতে, এই অভিযানের মাধ্যমে শুধু দুইজন নয়, বরং পুরো একটি সংঘবদ্ধ অপরাধী চক্রের পর্দা উন্মোচিত হয়েছে। স্থানীয় জনসাধারণ সেনাবাহিনীর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে বলেন, “এই অভিযান যেন থেমে না যায়। রায়হান ও কামালের মতো আরও অনেক অপরাধী এখনো এলাকায় সক্রিয় রয়েছে।”
তারা আরও বলেন, চরণদ্বীপ ইউনিয়নের চোলাই মদের গডফাদার ওয়াসিম, যিনি মাদক ব্যবসার পাশাপাশি অবৈধ অস্ত্র বাণিজ্যের সঙ্গেও জড়িত, এখনো প্রশাসনের ধরাছোঁয়ার বাইরে। ওয়াসিমের বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগ থাকলেও রহস্যজনক কারণে তাকে এখনো গ্রেপ্তার করা হয়নি। স্থানীয়দের আশঙ্কা, তাকে ধরতে না পারলে পুরো চক্র আবার মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে পারে।
চরম বাস্তবতা ও প্রত্যাশা:
এই মুহূর্তে বোয়ালখালীতে যে পরিবর্তনের হাওয়া বইতে শুরু করেছে, তা যেন অস্থায়ী না হয়—এটাই চায় সাধারণ মানুষ। তারা চান, সেনাবাহিনী ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর যৌথ অভিযান অব্যাহত থাকুক। চাই অপরাধীদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনগত ব্যবস্থা, তাদের অর্থনৈতিক উৎসের উন্মোচন এবং রাজনৈতিক আশ্রয়-প্রশ্রয়ের সমাপ্তি।
উপসংহার:
সেনাবাহিনীর সাহসী ও সময়োপযোগী এই অভিযানে বোয়ালখালীবাসী আশার আলো দেখেছে। এই অভিযান যদি ধারাবাহিকভাবে চলে, তবে শুধু একটি অঞ্চল নয়, গোটা দক্ষিণ চট্টগ্রামের অপরাধচক্রের শিকড় উপড়ে ফেলা সম্ভব হবে। সেজন্য এখন প্রয়োজন আইনের কঠোর প্রয়োগ, নিরপেক্ষ তদন্ত, এবং জনসাধারণের সক্রিয় সহযোগিতা।

Share on facebook
Facebook
Share on twitter
Twitter
Share on linkedin
LinkedIn