রবিবার - ১৯শে জানুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ - ৫ই মাঘ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ - ১৯শে রজব, ১৪৪৬ হিজরি

বেগম রোকেয়া: নারী অধিকার প্রতিষ্ঠার সংগ্রামী পথিকৃৎ

বেগম রোকেয়া: নারী অধিকার প্রতিষ্ঠার সংগ্রামী পথিকৃৎ

বেগম রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেন।এক অনন্য নাম, যার মেধা, সাহস এবং ত্যাগের মাধ্যমে তিনি নারীদের অধিকার ও সমান সুযোগের পথের দিশারী। আজকের এই দিন, ৯ ডিসেম্বর ১৮৮০ সালে রংপুরের এক মুসলিম পরিবারে জন্ম নেওয়া বেগম রোকেয়া সেই সময়ের নারীদের জন্য এক আলোকবর্তিকা হয়ে উঠেছিলেন।যখন সমাজ নারীদের জন্য শিক্ষা, স্বাধীনতা বা মর্যাদা প্রায় অস্বীকার করত। তার জীবন ছিল সংগ্রামমুখর, তবুও তিনি কখনও তার লক্ষ্য থেকে পিছপা হয়নি।

বেগম রোকেয়ার সমাজসেবা শুধু সাহিত্যে সীমাবদ্ধ ছিল না, তার কাজ ছিল নারীর শিক্ষা, সামাজিক অবস্থান এবং অধিকার প্রতিষ্ঠা। তিনি প্রমাণ করেছেন যে, নারী শিক্ষা শুধু তাদের ব্যক্তিগত উন্নতির জন্য নয়, বরং পুরো সমাজের উন্নতির জন্য অপরিহার্য। তার সৃষ্ট সাহিত্য, সংগঠিত কর্মসূচি এবং স্কুল প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে তিনি নারীদের শিক্ষার আলো ছড়িয়ে দিয়েছেন, যা আজও নারী আন্দোলনের ইতিহাসে এক উল্লেখযোগ্য অধ্যায়।

তিনি বুঝতেন যে, নারীদের উন্নতি না হলে সমাজের উন্নয়ন অসম্পূর্ণ থাকবে। সেই দর্শন থেকেই তিনি ১৯১১ সালে ‘রোকেয়া বিদ্যাপীঠ’ প্রতিষ্ঠা করেন। যেখানে মেয়েরা শুধু সাধারণ শিক্ষা নয় বরং আত্মবিশ্বাস, নেতৃত্বগুণ এবং সামাজিক দায়বদ্ধতা সম্পর্কে প্রশিক্ষণ পেত। এই বিদ্যালয়টি ছিল নারী শিক্ষার একটি মাইলফলক, যা নারীদের জগৎ-এ তাদের অবস্থান শক্ত করতে সাহায্য করেছে।

তিনি রচনা করে গেছেন ‘সুলতানার স্বপ্ন’ যা শুধু সাহিত্যকর্ম নয়, বরং নারীর ক্ষমতায়ন ও সমতা এবং নেতৃত্বের প্রতি তার দৃঢ় বিশ্বাসের প্রমাণ। এই উপন্যাসে তিনি কল্পনা করেছিলেন এমন এক সমাজ যেখানে নারীরা পুরুষের সমান অধিকার ও সুযোগ পায়। যা তার সময়ের সমাজের দৃষ্টিকোণ থেকে ছিল এক বিপ্লবী চিন্তা।

বেগম রোকেয়া সমাজের প্রতিটি স্তরে নারীর অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছিলেন। সমাজে নারীর প্রতি বৈষম্য, তাদের নিকৃষ্ট অবস্থান এবং শোষণমূলক রীতিনীতি প্রতিরোধে তিনি অবিরাম কাজ করেছিলেন। তিনি বিশ্বাস করতেন,‘নারীকে যদি এক কুঁড়েঘরের মধ্যে বন্ধি রাখা যায়, তবে সেই সমাজ কখনই প্রকৃত উন্নতি করতে পারবে না।’ তাঁর এই দৃষ্টিভঙ্গি সমাজের প্রতিটি ক্ষেত্রেই আজও প্রাসঙ্গিক।

৯ ডিসেম্বর ১৯৩২ সালে মৃত্যুবরণ করেন বেগম রোকেয়া। আজ মহীয়সী নারীর জন্ম ও মৃত্যুবার্ষিকীতে , নারীর অধিকার আন্দোলনের জন্য একটি গৌরবময় অধ্যায়কে স্মরণ করার দিন। বেগম রোকেয়া আজও আমাদের প্রেরণা জোগায়, এবং তার কর্মের ধারা নারীদের শিক্ষা, সমতা ও স্বাধীনতার পথে নতুন দিগন্ত উন্মোচন করছে। তাঁর কর্ম আজও জীবন্ত। এ যুগের নারীরা সবক্ষেত্রে সমান সুযোগ পাচ্ছে, তার পেছনে বেগম রোকেয়ার মতো অগ্রণী ভূমিকা রয়েছে।

পরিশেষে বলা যায়, বেগম রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেনের জীবন ছিল সংকল্প, সাহস এবং দৃঢ়তার এক অমর কাহিনী। তার ভাবনা এবং কাজ আজও প্রেরণা জোগায়। নারীদের প্রতি তাঁর দৃঢ় বিশ্বাস, শিক্ষা এবং সমতার প্রতি তার আস্থা, আমাদের নতুন দৃষ্টিভঙ্গি ও পথ দেখায়। তাই বেগম রোকেয়ার অবদান কেবল অতীতের এক অধ্যায় নয় বরং বর্তমানেও তার প্রভাব অব্যাহত রয়েছে। তার মতো মহীয়সী নারীর কাজের মাধ্যমে সমাজে নারীদের স্থান চিরকাল প্রতিষ্ঠিত হবে।

Share on facebook
Facebook
Share on twitter
Twitter
Share on linkedin
LinkedIn