মঙ্গলবার - ২০শে মে, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ - ৬ই জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ - ২২শে জিলকদ, ১৪৪৬ হিজরি

বুদ্ধিমানেরা ভবিষ্যৎ নিয়ে ভাবেন

বুদ্ধিমানেরা ভবিষ্যৎ নিয়ে ভাবেন

 

প্রতিটি মানুষের জীবনে সবচেয়ে মূল্যবান কাজ হচ্ছে ভবিষ্যতকে নিয়ে চিন্তা-ভাবনা করে অগ্রসর হওয়া। জ্ঞানী কিংবা বুদ্ধিমান মানুষেরা অতীতের ভালো-মন্দ বিচার বিশ্লেষণ করে, বর্তমান নিয়ে ভবিষ্যতের দিকে ধাবিত হয়। তাদের মনের জগতে চিন্তা-চেতনায় অতীত-বর্তমান থাকে না, থাকে ভবিষ্যতের জন্য নতুন উদ্ভব শক্তি ও ভাবনা। অতীতকে ভুলে যাওয়া নয়। অতীতের ব্যর্থতা থেকে শিক্ষা নিতে হবে, তবে অনুশোচনা করে সময় নষ্ট করা আদৌ উচিত নয়। ভবিষ্যৎই দিতে পারে নতুন সম্ভাবনাময় জীবন। তাই অতীত-বর্তমানকে সামনে রেখে ভবিষ্যতের কথা ভেবে কাজ করা উচিত। তাই বলা হয়, “It is the job of a wise person to think about the future.”

জ্ঞানী ব্যক্তিরা মানুষ, তবে মানুষ মাত্রই জ্ঞানী নয়। জীবনের চলার পথে ঘাত-প্রতিঘাতের মধ্যে দিয়ে নানা রকম অভিজ্ঞতা মানুষকে দূরদৃষ্টিসম্পন্ন, জ্ঞানী ও চৌকস মানুষে পরিণত করে। মানুষের জীবনের কর্মের সাথে তিনটি কালের যৌক্তিকভাবে সম্পৃক্ততা রয়েছে। আর এগুলো হচ্ছে- অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যৎ। চৌকস ব্যক্তিরা অতীতকে ভুলে গিয়ে ভবিষ্যৎ সম্পর্কে সচেতন থাকে। অতীতের অভিজ্ঞতা থেকে অনাগত দিনগুলো স্বাচ্ছন্দ্যময় করার জন্য বিভিন্ন রকম পরিকল্পনা গ্রহণ করে এগিয়ে যায়।
প্রাণীকূলের মধ্যে সবচেয়ে পরিশ্রমী প্রাণী ধরা হয় পিপড়া ও মৌমাছিকে। শুধু কর্মই যদি শ্রেষ্ঠত্বের মানদণ্ড হত, তবে মানুষের আগে শ্রেষ্ঠত্ব পেত পিপড়া ও মৌমাছি। মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিন মানুষকে অন্য সকল প্রাণী থেকে শ্রেষ্ঠ করেছেন তার জ্ঞান, বিবেক, বুদ্ধি-বিবেচনা এবং চিন্তা করার ক্ষমতা দিয়ে। পরিশ্রমের পাশাপাশি এই তিনের সমন্বয় প্রতিটি মানুষকে স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য দিয়েছে। বুদ্ধিমানরা ভবিষ্যৎ নিয়ে পরিকল্পনা করে কাজ করে। প্রতিটি পরিশ্রমী মানুষের বর্তমান জুড়ে থাকে তার ভবিষ্যতের লক্ষ্য, উদ্দেশ্য ও নানারকম চিন্তা-ভাবনা। কাজেই ভবিষ্যৎই হল মানবজাতির একমাত্র চিন্তার জায়গা, কিভাবে ভবিষ্যৎ জীবনকে সাবলীল করে তুলবে।
বুদ্ধিমান লোকেরা সব সময় ভবিষ্যত নিয়ে ভাবেন। অতীত গত হয়ে গেছে বলে বাস্তবে গুরুত্বহীন, আর ক্ষণস্থায়ী,চলে যাচ্ছে বলে বর্তমানের গুরুত্বও তেমন নেই। তাই চিন্তার ক্ষেত্রে অতীতচারিতা যেমন অর্থহীন, বর্তমানকে আঁকড়ে থাকাও তেমনই নিরর্থক। বাস্তব জীবনে সাফল্য লাভের জন্য ভবিষ্যতের কর্মপন্থা নিয়ে চিন্তা করাই দূরদর্শিতার এগিয়ে যাওয়ার লক্ষণ।

ভবিষ্যতের চিন্তা করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
অতীত ও বর্তমানকে গুরুত্ব দিয়ে কি হবে? দুঃখ-কষ্ট ও অনুশোচনা বাড়াবে। জীবনকে নতুনভাবে গোছানোর জন্য কেবল ভবিষ্যৎই সম্মুখে উন্মুক্ত। ভবিষ্যতের ভাবনাই জীবনকে সার্থক, সুন্দর ও গঠনমূলক করে তোলে। ভবিষ্যতই মানব জীবনের গুরুত্বপূর্ণ সময়। বর্তমান প্রতি মুহূর্তে অতীতের গহ্বরে মিশে যায়। অফুরন্ত ভবিষ্যৎ সম্ভাবনায় সমৃদ্ধ। ভবিষ্যতের ভাবনা ভেবে কাজ করতে পারলেই জীবন সার্থক ও সুন্দর হয়ে ওঠে।
আধুনিক তথ্য-প্রযুক্তি সভ্যতা, জ্ঞানী-গুনিদেরই সৃষ্টি। জ্ঞানী ব্যক্তিরা গবেষণা করে তাদের জ্ঞান, মেধা-মননের সাথে কঠোর পরিশ্রম মিলিয়ে বর্তমানকে করেছেন সুন্দর। কিন্তু তারা বসে নেই। কেননা, গবেষকরা সর্বদাই ভবিষ্যৎ নিয়ে গবেষণা করে সুন্দর পৃথিবীর কথা ভাবেন। সামান্য পিঁপড়া-মৌমাছি পর্যন্ত ভবিষ্যৎ নিয়ে ব্যস্ত। অনেক দুঃখ-কষ্ট সহ্য করে তারা ভবিষ্যতের দুঃখ মোকাবিলার প্রস্তুতি নেয়- খাদ্য সঞ্চয় করে। তাদের এই পরিশ্রম দেখে চিন্তা করলে, ভবিষ্যতের ভাবনা মানুষকে সঞ্চয়ে উদ্বুদ্ধ করে।

বিশ্বের বিখ্যাত দৃষ্টান্ত: বিশ্বের অনেক সফল ব্যক্তির জীবনেও আমরা ভবিষ্যতের পরিকল্পনা এবং পরিশ্রমের সাথে যুক্ত উদাহরণ দেখতে পাই। যেমন, আলবার্ট আইনস্টাইন বলেছিলেন, “আমি কেবল কঠোর পরিশ্রম করেছিলাম, আর ভবিষ্যত সম্পর্কে চিন্তা করেছিলাম।” তার এই চিন্তা থেকে বুঝা যায় যে, সঠিক পরিকল্পনা ছাড়া উন্নতি সম্ভব নয়।
আমাদের চিন্তা করতে হবে দেশের কথা, দশের কথা। ভবিষ্যতে কীভাবে দেশ ও দশের সেবা করা যায়, জাতির কল্যাণ করা যায়, পরিবার-পরিজনদের কল্যাণে কাজ করা যায়। অপরের কল্যাণই তাদের ব্রত। তারা জানেন যে, বর্তমানের অর্জন ও সঞ্চয় সুদূরপ্রসারী ভবিষ্যতেরই বহিঃপ্রকাশ।
কিন্তু আমরা সব সময় অতীতের কথা ভাবি, চিন্তা করে অযথা সময় ব্যয় করি, অতীতকে আঁকড়ে ধরে থাকি। আসলে মানুষ অতীত থেকে শুধু অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করতে পারে, আর কিছু পারে না। জীবনকে সার্থক ও সুন্দর করে তোলার ক্ষেত্রে ভবিষ্যত পরিকল্পনার কোনো বিকল্প নেই। তাই ভবিষ্যতের গঠনমূলক ভাবনা ভাবেন সকল উন্নয়নশীল দেশের মানুষ। জাতির অগ্রগতির ক্ষেত্রে ভবিষ্যত পরিকল্পনাই প্রধান হাতিয়ার। ভবিষ্যতের মোকাবিলা করার জন্য বর্তমানকে যারা ভিত্তি হিসেবে গ্রহণ করে, কেবল তারাই প্রকৃত বুদ্ধিমান ও জ্ঞানী। যে কোনো কাজ করলে অবশ্যই ভবিষ্যতে সফলতার কথা মাথায় রেখেই কাজ করতে হবে। বিচক্ষণ মানুষেরা সব সময় ভবিষ্যত নিয়ে ভাবিত হন। ভবিষ্যৎ হলো আসল, অনাগত ভবিষ্যৎ মানুষের জন্য নিয়ে আসে অফুরন্ত সম্ভাবনা।

শাহিদা আকতার জাহান
২৮-৪-২৫

Share on facebook
Facebook
Share on twitter
Twitter
Share on linkedin
LinkedIn