বুধবার - ১৯শে মার্চ, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ - ৫ই চৈত্র, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ - ১৯শে রমজান, ১৪৪৬ হিজরি

বিশিষ্ট আইনবিদ আনোয়ারুল ইসলাম চৌধুরী

বিশিষ্ট আইনবিদ আনোয়ারুল ইসলাম চৌধুরী

 

বাংলাদেশের আইনি অঙ্গনে এক উজ্জ্বল নক্ষত্র আনোয়ারুল ইসলাম চৌধুরী। অধ্যবসায়, নিষ্ঠা এবং দায়িত্ববোধের সমন্বয়ে তিনি নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন একজন স্বনামধন্য আইনজীবী হিসেবে। শুধু আইন চর্চা নয়, শিক্ষা, সামাজিক উন্নয়ন এবং মানবিক কর্মকাণ্ডেও তাঁর অনবদ্য অবদান রয়েছে।

শিক্ষাজীবন ও কর্মজীবনের শুরু: এডভোকেট আনোয়ারুল ইসলাম চৌধুরীর জন্ম ২৭ জুলাই ১৯৫০ সালে এক সম্ভ্রান্ত পরিবারে। পিতা মোহাম্মদ মোস্তাক আহমদ চৌধুরী ও মাতা মমতাজ মহল বেগম। শিক্ষাজীবনের শুরু বাঁশখালীর কালীপুরে, যেখানে তিনি প্রাথমিক শিক্ষা সম্পন্ন করেন এবং পরে এজহারুল হক উচ্চ বিদ্যালয়ে অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত অধ্যয়ন করেন। ১৯৬৪ সালে চট্টগ্রাম সরকারি মুসলিম হাই স্কুলে ভর্তি হয়ে ১৯৬৬ সালে এসএসসি পাশ করেন। এরপর চট্টগ্রাম সরকারি কলেজ থেকে ১৯৬৮ সালে এইচএসসি এবং ১৯৭০ সালে বিএ ডিগ্রি অর্জন করেন।

১৯৬৮-৬৯ শিক্ষাবর্ষে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিষয়ে অনার্সে ভর্তি হলেও, রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে চট্টগ্রামে ফিরে আসেন এবং চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৭৪ সালে এমএ ডিগ্রি অর্জন করেন।

আইনি পেশায় প্রবেশ: প্রাথমিকভাবে তিনি ওমর গণি এম ই এস কলেজে রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন। তবে, আইনি পেশায় প্রবেশের আগ্রহ থেকেই ১৯৭৭ সালে চট্টগ্রাম আইন কলেজ থেকে এলএলবি ডিগ্রি অর্জন করেন এবং ১৯৭৮ সালে চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতিতে যোগ দেন। এক বছরের মধ্যেই তিনি আইনজীবী হিসেবে তালিকাভুক্ত হন এবং ১৯৮১ সালে ঢাকা হাইকোর্টে প্র্যাকটিসের অনুমতি পান। আইনি দক্ষতা ও অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে তিনি ১৯৯৩ সালে চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন এবং ২০১৪ সালে সভাপতি হন।

সামাজিক ও মানবিক কর্মকাণ্ড: আইনজীবী হিসেবে সফলতার পাশাপাশি তিনি বিভিন্ন সামাজিক ও জনকল্যাণমূলক কর্মকাণ্ডেও যুক্ত ছিলেন। তিনি চট্টগ্রাম মা ও শিশু হাসপাতাল, বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি এবং মুসলিম এডুকেশন সোসাইটির আজীবন সদস্য। এছাড়া চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় এলামনাই এসোসিয়েশন, সরকারি মুসলিম হাই স্কুল ও চট্টগ্রাম কলেজের প্রাক্তন ছাত্র পরিষদের সক্রিয় সদস্য। তাঁর নেতৃত্বে চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতির সদস্যদের জন্য উন্নত ভবন নির্মাণ করা হয়। সরকার ও ভেন্ডারদের বিরুদ্ধে মামলা করে আদালত ভবনের পাহাড়ে ‘দোয়েল ভবন’, ‘এনেক্স-১’, ‘এনেক্স-২’ ও ‘শাপলা ভবন’ নির্মাণ নিশ্চিত করেন।

রাজনৈতিক ও সাংগঠনিক ভূমিকা: এডভোকেট আনোয়ারুল ইসলাম চৌধুরী রাজনীতি ও সমাজ সংস্কারের নানা কর্মকাণ্ডে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। ১৯৭৩ সালে তিনি বাংলাদেশ ছাত্রলীগের চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শাখার আলাউল হলের সভাপতি ছিলেন। ১৯৯৩ সালে ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী শাখার আহ্বায়ক ছিলেন। ২০০৬ সালে চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে চট্টলবীর এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরীর উদ্যোগে আয়োজিত ‘জনতার আদালত’-এর প্রধান বিচারপতির দায়িত্ব পালন করেন।

গ্রন্থ রচনা ও পারিবারিক জীবন: আইন ও সমাজের ইতিহাস রচনায়ও তিনি গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছেন। ২০২১ সালে তাঁর লেখা বই “কালীপুর ইজ্জতনগর সমৃদ্ধ অতীত” প্রকাশিত হয়, যেখানে তিনি তাঁর এলাকার ইতিহাস ও সংস্কৃতির চিত্র তুলে ধরেছেন।

ব্যক্তিগত জীবনে তিনি রৌশন আফরোজ বেগমের সাথে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ। তাঁর অনুপ্রেরণায় তিনি এই বইটি রচনা করেন। তাঁদের দুই সন্তান, প্রথমজন এমবিবিএস ডাক্তার ও ইউরোলজি বিশেষজ্ঞ, আর দ্বিতীয়জন ঢাকা হাইকোর্টে আইনজীবী হিসেবে কর্মরত।

এডভোকেট আনোয়ারুল ইসলাম চৌধুরী শুধুমাত্র একজন আইনজীবী নন, তিনি একাধারে শিক্ষক, সংগঠক, সমাজসেবক ও ইতিহাসবিদ। সততা, আদর্শ এবং নিষ্ঠার মাধ্যমে তিনি আইনি অঙ্গনে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন এবং সমাজে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। তাঁর কর্ম ও অবদান প্রজন্মের পর প্রজন্ম স্মরণ করবে। তাঁর সুস্থ ও নিরাপদ জীবন কামনা করছি।
——
সোহেল মো. ফখরুদ-দীন,
চট্টগ্রাম, বাংলাদেশ।

Share on facebook
Facebook
Share on twitter
Twitter
Share on linkedin
LinkedIn