
মাইজভাণ্ডার শরীফে ৮ এপ্রিল ২০২৩, মহান ১৭ রমজান, ঐতিহাসিক বদর দিবস ও ইমামুল আউলিয়া হুযুর গাউছুল আ’যম হযরত সাইয়্যিদ গোলামুর রহমান বাবাভাণ্ডারীর (ক.) পবিত্র চাহরাম শরীফ এবং শায়খুল ইসলাম, ইমামে আহলে সুন্নাত, হুযুর গাউছুল ওয়ারা হযরাতুলহাজ্ব আল্লামা শাহ্সূফী সাইয়্যিদ মইনুদ্দীন আহমদ আল্-হাসানী মাইজভাণ্ডারীর (ক.) চন্দ্রবার্ষিক ওরশ শরীফ উপলক্ষ্যে আলোচনা সভা, ইফতার ও মিলাদ মাহ্ফিল অনুষ্ঠিত হয়েছে। প্রধান অতিথির বক্তব্যে মাইজভাণ্ডার শরীফের সাজ্জাদানশীন, সাইয়্যিদ সাইফুদ্দীন আহমদ আল্-হাসানী মাইজভাণ্ডারী বলেছেন, বদর যুদ্ধ ইসলামের ইতিহাসের প্রথম ও অসম যুদ্ধ। সেসময়ে খুব অল্প মানুষ ইসলাম গ্রহণ করেছিলেন। ইসলাম বিরোধী তৎকালিন সময়ে আধুনিক অস্ত্রে সস্ত্রে সুসজ্জিত বিশাল অমুসলিম বাহিনী মুসলমানদের আক্রমণ করলে, তখন প্রিয়নবীর (দ.) নিকট প্রতিরোধ যুদ্ধের বিকল্প ছিল না। অমুসলিমদের এক হাজার প্রশিক্ষিত অস্ত্রধারী বাহিনীর বিপরীতে প্রিয়নবীর (দ.) নেতৃত্বে ছিলেন মাত্র ৩১৩ জন মুসলিম সাহাবা। সে যুদ্ধে প্রিয়নবীর (দ.) প্রতি সাহাবায়ে কেরামদের প্রেম ভালোবাসা, অগাধ বিশ্বাস ও দৃঢ় ঈমানী শক্তির কারণে অমুসলিমদের বিশাল বাহিনীকে পরাজিত করে মুসলমানরা বিজয় অজর্ন করে।
স্বয়ং মহান আল্লাহ্পাক বদর যুদ্ধে ফেরেশতা পাঠিয়ে মুসলিম বাহিনীকে সহযোগিতা করেন। বদর যুদ্ধের তাৎপর্য মুসলমানদের নিকট অপরিসীম। এ বিজয় মুসলমানদেরকে আরো আত্মবিশ্বাসী করে তোলে এবং এরই ধারাবাহিকতায় ইসলাম প্রচার প্রসারের পথ আরো প্রশস্ত হতে থাকে। বদর যুদ্ধই প্রমাণ করে মহান আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস ও প্রিয়নবীর (দ.) ভালোবাসায় জীবন উৎসর্গে যেকোনো প্রতিকুল অবস্থা থেকে মহান আল্লাহপাক তাঁর বান্দাকে রক্ষা করে থাকেন। তিনি বলেন, মুসলমানরা ঐতিহাসিক বদরের দৃঢ় ঈমানী চেতানয় উজ্জ্বীবিত থাকলে কোনো অপশক্তিই আমাদের অগ্র যাত্রায় প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করতে পারবে না।
সাইয়্যিদ সাইফুদ্দীন আহমদ আল্-হাসানী মাইজভাণ্ডারী আরো বলেন, ১৪৩২ হিজরীর ১৭ রমজান মহান আল্লাহর সান্নিধ্যে গমন করেন, কোটি আশেকানের প্রাণ স্পন্দন, হুযুর গাউছুল ওয়ারা হযরাতুলহাজ্ব আল্লামা শাহ্সূফী সাইয়্যিদ মইনুদ্দীন আহমদ আল্-হাসানী মাইজভাণ্ডারী (ক.)। তিনি ছিলেন বাবাভাণ্ডারী ক্বেবলা ক্বাবার (ক.) প্রতিচ্ছবি। তিনি তার দাদাজান গাউছুল আ’যম হযরত সাইয়্যিদ গোলামুর রহমান বাবাভাণ্ডারীর (ক.) সুযোগ্য উত্তরসূরী হিসেবে ত্বরীকায়ে মাইজভাণ্ডারীয়াকে বিশ্বজুড়ে পরিচিত করেছেন। গাউছুল আ’যম বাবাভাণ্ডারী (ক.) এ ত্বরীকাকে পূর্ণতা দান করেছেন আর শায়খুল ইসলাম, বাবা মইনুদ্দীন আহমদ মাইজভাণ্ডারী (ক.) এ ত্বরীকাকে বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে দিয়েছেন। জাতিসংঘ, ইউনেস্কোসহ বিশ্বের প্রতিটি মহাদেশে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক প্লাটফর্মে তিনি ইসলাম, সুফিবাদ প্রচারের পাশাপাশি ত্বরীকায়ে মাইজভাণ্ডারীয়ার মহৎ দর্শন তুলে ধরেছেন। শুধু তাই নয়, তিনি বিশ্বের দরবারে বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা হাতে বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করেছেন। অনেকে তার মাধ্যমে বাংলাদেশকে চিনেছেন। তিনি আহলে সুন্নাত ওয়াল জামায়াত, বাংলাদেশের সর্বপ্রথম এবং নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট। তাঁর দূরদর্শীতা এবং যোগ্যতার গুণে তিনি আহলে সুন্নাত ওয়াল জামায়াতের বৃহত্তর ঐক্য গড়ে তুলেছিলেন। বাংলাদেশে পবিত্র ঈদ-এ-মিলাদুন্নবী (দ.), শাহাদাত-এ-কারবালা মাহফিল প্রতিষ্ঠায় এ মহামনীষী অগ্রণী ভূমিকা রেখেছেন। হুজুর কেবলাকে ১৯৯৭ সালে যুক্তরাষ্ট্রের বিখ্যাত আন্তর্জাতিক সুফি সংগঠন ইন্টারন্যাশনাল এসোসিয়েশন অব সুফিজম ইসলামের খেদমতে তাঁর ব্যাপক অবদানের জন্য শায়খুল ইসলাম উপাধিতে ভূষিত করে। ২০০০ সালে তিনি জাতিসংঘে বিশ্বশান্তি প্রতিষ্ঠায় মদীনা সনদ তথা প্রিয়নবীর (দ.) সুমহান আদর্শের গুরুত্ব তাৎপর্য তুলে ধরেন। তিনি জাতিসংঘ সদর দপ্তরে মিলাদে মুস্তফা (দ.) পাঠ করে ইতিহাসের পাতায় চিরস্মরণীয় হয়ে আছেন। একই বছর তিনি উজবেকিস্তানে ইউনেস্কো আয়োজিত সুফিবাদ বিষয়ক আন্তর্জাতিক সম্মেলনে ত্বরীক্বায়ে মাইজভাণ্ডারীয়ার সাম্য, মানবপ্রেম, অসাম্প্রদায়িক চেতনা তুলে ধরেন। এসময় তাসখন্দ ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয় তাকে বিশেষ সম্মাননা ও সংবর্ধনা দিয়েছিলো। ২০০৫ সালে ঘানা সরকার ও ইন্টারন্যাশনাল ইসলামিক সেন্টার তাকে ‘বিশ্বশান্তির দূত’ উপাধিতে ভূষিত করে ও বিশেষ সংবর্ধনা প্রদান করে। তিনি আজীবন ইন্টারন্যাশনাল এসোসিয়েশন অব সুফিজমের সম্মানিত উপদেষ্টার দায়িত্ব পালন করেছেন। আবার দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে সফর করে তিনি দ্বীনের খেদমতে নিরলসভাবে কাজ করেছেন। ভালোবাসার মাধ্যমে তিনি মানুষের অন্তরকে জয় করেছেন বলেই তিনি লক্ষ কোটি আশেকের অন্তরে সদা বিরাজমান। ইউরোপ, আমেরিকা, আফ্রিকার অগণিত মানুষ তার হাতে হাত রেখে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেছেন। এভাবে তিনি ইসলাম, সুফিবাদ ও ত্বরীকায়ে মাইজভাণ্ডারীয়ার প্রচার প্রসারে অনন্যসাধারণ অবদান রেখেছেন। আমরা তার অবদানকে গভীর শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করছি।
মাহফিলে বিশেষ অতিথি হিসেবে অংশগ্রহণ করেন, আওলাদ-এ-রাসূল (দ.), শাহ্জাদা সাইয়্যিদ মাশুক-এ-মইনুদ্দীন আল হাসানী মাইজভাণ্ডারী, ফরহাদাবাদ দরবার শরীফের নায়েবে সাজ্জাদানশীন শাহাজাদা সৈয়দ মুহাম্মদ ফখরুল আবেদীন রায়হান, নোয়াখালীর অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ শাহজাদা সৈয়দ ফয়জুল আবেদীন আরমান, ঈসাপুর দরবার শরীফের সাজ্জাদানশীন সৈয়দ এহসানুল করিম ঈসাপুরী মাইজভাণ্ডারী, নানুপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোহামমদ শফিউল আজম।
ইফতারের আগে মুসলিম উম্মাহর শান্তি সমৃদ্ধি কল্যাণ এবং দেশবাসীর ওপর আল্লাহর রহমত কামনায় মুনাজাত পরিচালনা করেন শাহ্সূফী মাওলানা সাইয়্যিদ সাইফুদ্দীন আহমদ আল্-হাসানী (মা.জি.আ.)।