রবিবার - ২৬শে জানুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ - ১২ই মাঘ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ - ২৬শে রজব, ১৪৪৬ হিজরি

বানভাসি মানুষের জন্য কোন কাজে আসছে না ‘মুজিব কিল্লাটি

বানভাসি মানুষের জন্য কোন কাজে আসছে না ‘মুজিব কিল্লাটি

 

নীলফামারীর ডিমলায় দুই কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত তিস্তার চরাঞ্চলের বানভাসি মানুষের জন্য ‘মুজিব কিল্লা’ নামের আশ্রয় কেন্দ্রটি (সাইক্লোন সেন্টার) এখন ভূতের বাড়ি। উপজেলার ঝুনাগাছ চাপানী ইউনিয়নের ছাতুনামা গ্রামের কিল্লাপাড়ায় আশ্রয় কেন্দ্রটি নির্মাণ করেন ত্রাণ ও পুনর্বাসন, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তর।

উপজেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা মেজবাহুর রহমান জানান, ২০২২ সালের প্রথম দিকে মুজিব কিল্লাটি নির্মিত হয়। একই বছরের ১৩ অক্টোবর সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে এর উদ্বোধন করেন। আর এ ভবনের কাজটি বাস্তবায়ন করেন মেসার্স হায়দার এন্ড কোং নামের একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান।

স্থানীয়রা জানান, ফ্যান, লাইট, বিদ্যুৎ ও যাতায়াতের রাস্তা না থাকায় বানভাসি মানুষের কোন কাজে আসছে না, কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত আশ্রয় কেন্দ্রটি। ছাতুনামা গ্রামে পাঁচ বিঘা (১৫০ শতাংশ) জমির ওপরে নির্মিত ‘মুজিব কিল্লা’ এখন ভূতের বাড়ি।

সূত্র জানা যায়, এটি বি-প্যাটানের একটি স্থাপনা। সরকার প্রকল্পটির নাম দিয়েছিল ‘মুজিব কিল্লা নির্মাণ, সংস্কার ও উন্নয়ন’। মূল ভবনটির আয়তন ৯ হাজার ৩১০ বর্গফুট। দুর্যোগ প্রশমিত এলাকার মানুষ ও তাদের জীবনরক্ষা, মূল্যবান দ্রব্যসামগ্রী সংরক্ষণ এবং গৃহপালিত পশু নিরাপদে রাখার জন্য ভবনটি নির্মাণ করা হয়। এছাড়াও বছরের অন্য সময় জাতীয় অনুষ্ঠানসহ শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করা, শিশুদের খেলার মাঠ ও এলাকার উন্নয়নের লক্ষ্যে সরকারি বেসরকারি নানা প্রশিক্ষণ ও দুর্যোগে অস্থায়ী সেবাকেন্দ্র হিসেবে ব্যবহার করার জন্য নির্মাণ করা হয়। বর্তমানে সেখানে মাদকসেবীদের অভয়ারণ্য, চলছে মাদকের আড্ডা।

আশ্রয়কেন্দ্র সংলগ্ন স্থানীয় বাসিন্দা রফিকুল ইসলাম, আফসার আলী ও আব্দুল আজিজ জানান, মুজিব কিল্লার পূর্ব দিকে যাতায়াতের জন্য একটি সিঁড়ি নির্মাণ করা হলেও সেখানে সংযোগ সড়ক না থাকায় প্রবেশ করা যায় না। ধানক্ষেতের আইল (মাল্লি) দিয়ে চলাচল করা গেলেও চারপাশে আবাদি জমির ভিতরে এটির অবস্থান। রাস্তা সংকটে সব কার্যক্রম প্রায় বন্ধের পথে।

সূত্র জানায়, নীলফামারী (ডোমার, ডিমলা) আসনের সাবেক এমপি ও ডিমলা উপজেলা আ.লীগের সভাপতি আফতাব উদ্দিন সরকার এটির ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন এবং জায়গাটিও তিনি নির্বাচন করে দেন। এ কাজের দেখভালের দায়িত্ব পায় এমপির অনুসারীরা। এ ব্যাপারে জানতে মুঠোফোনে কল দিলে নম্বরটি বন্ধ পাওয়া যায়।

ওই ইউনিয়নের চেয়ারম্যান একরামুল হক জানান, দুমাস আগে স্টোররুম থেকে সোলার ও ব্যাটারি চুরি হলে তা ইউনিয়ন পরিষদের মাধ্যমে উদ্ধার করা হয়। সেগুলো এখন আশ্রয়কেন্দ্রে রাখার পরিবেশ না থাকায় ইউপি সদস্যের কাছে জমা রয়েছে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এবার বন্যায় খালিশা চাপানী ও ঝুনাগাছ চাপানী ইউনিয়নের প্রায় ১০টি গ্রাম পানির নিচে তলিয়ে গেলেও সেখানে মানুষ আশ্রয় নিতে পারেনি। কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত এই আশ্রয়কেন্দ্রটি এখন ভূতড়ে অবস্থায় পরিণত হয়েছে। যাতায়াতের রাস্তা ছাড়া এটি নির্মাণ করে এলাকাবাসীর লাভ কি হলো।ঝুনাগাছ চাপানি ইউনিয়নের ৯নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য নুর হোসেন জানান, এতো টাকা ব্যয়ে তৈরি করা মুজিব কিল্লাটি এবার বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের কোন কাছে আসে নাই। সেখানে যাতায়াতের কোন রাস্তা না থাকায় অকেজো অবস্থায় পড়ে আছে। চরাঞ্চলের বানভাসি মানুষের বাড়ি ঘর,যান মাল রক্ষায় নির্মিত এই মুজিব কিল্লা এখন মাদকের আখড়া। এটি ব্যবহারে অনুপযোগী হওয়ায় পানিবন্দী মানুষ এখানে আশ্রয় নেয়নি। তিনি বলেন, সেখানে নিরাপত্তার দায়িত্বে কোন লোক না থাকায় সোলার ব্যাটারি ও অন্য জিনিসপত্র চুরি হয়েছে। এগুলি উদ্ধারে আমাদের তৎপরতা চলছে। সরকারিভাবে দেখভাল করা হলে সাইক্লোন সেন্টারটি রক্ষা পেত।উপজেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা জানান, আশ্রয়কেন্দ্রের ব্যাটারি, ফ্যান চুরি হয়েছে কিনা তা বলতে পারব না। তবে গত ৫ আগস্ট ছাত্র জনতার আন্দোলনে আন্দোলনকারীরা কিছুটা ক্ষতি কয়েছে। বর্তমানে ওই ইউনিয়নের চেয়ারম্যান দেখা শুনা করছেন।

ডিমলা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. রাসেল মিয়া জানান, মুজিব কিল্লার বরাদ্দ কত আমার জানা নেই। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বিদ্যুৎ সংযোগের বরাদ্দ প্রকল্পে ছিল কি না তা জেনে বলতে হবে। ওই ইউনিয়নে জরুরি এক কাজে গিয়ে এক নজর আশ্রয় কেন্দ্রটি দেখে আসি। তবে ভিতরে লাইট ফ্যান দেখতে পাই।

জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) কাশপিয়া তাসরিন জানান, শুনেছি জেলার ডিমলায় একটি সাইক্লোন সেন্টার রয়েছে। যাতায়াতের সংযোগ সড়ক আছে কিনা তাও আমার জানা নাই? আমি অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করছি। এলাকাবাসীর অভিযোগ পেলে বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে।

উল্লেখ্য, ২০১৮ সালের জুলাই মাসে দেশের ১৬ জেলায় ৫৫০টি মুজিব কিল্লা নির্মাণের সিন্ধ্যান্ত গৃহীত হয়। এর জন্য ব্যয় ধরা হয়েছিল দুই হাজার কোটি টাকা। তার মধ্যে ২০২১-২২ অর্থ বছরে নীলফামারীর ডিমলায় তিস্তার চরে ‘মুজিব কিল্লা’ নামের আশ্রয়ণ কেন্দ্রটি নির্মাণ করা হয়।

Share on facebook
Facebook
Share on twitter
Twitter
Share on linkedin
LinkedIn