বাঙালি জাতির গলায় জুতোর মালা
মুক্তিযুদ্ধের সময় যারা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে দেশের জন্য লড়াই করেছেন, তাদের প্রতি এমন অশ্রদ্ধা ও অপমান জাতির জন্য অত্যন্ত লজ্জাজনক। একজন খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধার গলায় জুতোর মালা পরানো কেবলমাত্র তার প্রতি নয়, পুরো মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকেই অপমান করা। ভুক্তভোগী এই বীর মুক্তিযোদ্ধার নাম আবদুল হাই কানু। তিনি কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামের লুদিয়ারা গ্রামের বাসিন্দা। তাঁর পরিবারের অভিযোগ, লাঞ্ছিতকারীরা সবাই স্থানীয় জামায়াত-শিবিরের নেতা–কর্মী। এ ঘটনার পর আবদুল হাই অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। বর্তমানে ফেনীর একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি বলেন, কার জন্য দেশ স্বাধীন করেছিলাম? এভাবে জুতার মালা পরার জন্য অবশ্যই নয়।’ আমাদের বর্তমান সমাজ ব্যবস্থায় যদি এমন ঘটনা ঘটতে পারে, তবে প্রশ্ন ওঠে আমরা কি সত্যিই সেই মূল্যবোধ ধরে রাখতে পেরেছি যা মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে অর্জিত হয়েছিল? এই অপমানের পেছনে যে মানসিকতা কাজ করছে, তা আমাদের নৈতিকতার দৈন্যদশার এক নির্মম উদাহরণ। আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে দেখানোর মতো যদি কোনো গৌরবময় অধ্যায় থাকে, তা হলো মুক্তিযুদ্ধ। মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি এই জাতির সম্মান না থাকলে, সেই অধ্যায় আর গর্বিত হয়ে তুলে ধরার সুযোগ থাকবে না। এখনই সময়, সবাই মিলে এই অপমানের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর। তাদের যথাযথ সম্মান নিশ্চিত করার জন্য আইন, সমাজ ও গণমাধ্যমের সম্মিলিত প্রচেষ্টা প্রয়োজন। নতুবা, আমাদের পরিচয় একদিন লজ্জার কারণ হয়ে দাঁড়াবে। জাতি হিসেবে আমরা কোথায় দাঁড়িয়ে আছি? আর কতদিন এই অপমানের বোঝা বয়ে বেড়াবো?