বৃহস্পতিবার - ১৭ই এপ্রিল, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ - ৪ঠা বৈশাখ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ - ১৯শে শাওয়াল, ১৪৪৬ হিজরি

বাগমারায় গ্রাম্য শালিসে ধর্ষণের মূল্য ২০ হাজার, ঘরছাড়া পরিবার

বাগমারায় গ্রাম্য শালিসে ধর্ষণের মূল্য ২০ হাজার, ঘরছাড়া পরিবার

রাজশাহীর বাগমারায় এক গৃহবধূর ঘরে ঢুকে ধর্ষণের চেষ্টার অভিযোগ উঠেছে। এর বিচারে অভিযুক্তের বিরুদ্ধে গ্রাম্য শালিস বসিয়ে জরিমানা আদায় করে তা ভাগবাটোয়ারা করা হয়। এই ধরনের অপরাধের বিচার গ্রাম্য শালিসে করায় স্থানীয় লোকজনদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। গত মঙ্গলবার রাতে শালিস বসিয়ে এই বিচার করা হয়।
স্থানীয়রা বলেন, এমন অপরাধের বিচার শালিসে করা ঠিক হয়নি। আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া উচিত ছিল। তবে অভিযুক্ত ব্যক্তি এমন অপরাধের সঙ্গে আর জড়াবেন বলে মুচলেকা দিয়েছেন।
মাতব্বরদের পক্ষে বলা হয়েছে, বিচার করার এখতিয়ার না থাকলেও শালিসে তা মালিশ করে দেওয়া হয়েছে। উভয় পরিবারের দিক বিবেচনা করে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, গত রোববার (৩১ মার্চ) রাতে উপজেলার গোয়ালকান্দি ইউনিয়নের চেউখালী গ্রামের এক গৃহবধূ নির্যাতনের শিকার হন। ওইদিন রাতে একই গ্রামের এক ব্যক্তি (মোজাহার আলী) গৃহবধূর ঘরের ভেতরে ঢুকে ধর্ষণের চেষ্টা করেন এবং শ্লীলতাহানি ঘটান। এই ঘটনায় পরের দিন ঈদের দিন গৃহবধূর স্বামী স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানের কাছে বিচার চেয়ে আবেদন করেন। ঈদের ছুটি থাকার কারণে বিষয়টি নিয়ে দ্রুত সিদ্ধান্ত নিতে পারেননি। তবে এই বিষয়টি তদন্ত করে সঠিক সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য স্থানীয় ইউপি সদস্যকে দায়িত্ব দেন। এদিকে গত মঙ্গলবার (১ এপ্রিল) রাতে বিষয়টি নিয়ে গ্রামে শালিস বসানো হয়। ওই শালিসে ইউপি সদস্য আমানুল্লাহসহ গ্রামের মাতব্বরেরা উপস্থিত ছিলেন। এর মধ্যে শমসের আলী, আবু সাঈদ, আলা হোসেন ও আবেদ আলী নেতৃত্ব দেন। তাঁরা এলাকার মাতব্বর ও প্রভাবশালী বলে নিশ্চিত হওয়া যায়। শালিসে মাতব্বরদের জেরার মুখে অভিযুক্ত ব্যক্তি নিজের অপরাধ শিকার করেন।
শালিসে নেতৃত্ব দেওয়া মাতব্বরেরা জানান, অভিযুক্তের কাছ থেকে অপরাধের জন্য ২০ হাজার টাকা জরিমানা আদায় করা হয়। এছাড়াও ভবিষ্যতে এই ধরনের অপরাধে জড়াবেন না বলে লিখিত মুচলেকা নেওয়া হয়। পুনরায় এই ধরনের অপরাধে জড়ালে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা আদায় করা হবে বলে লিখিত মুচলেকায় উল্লেখ করা হয়।
শালিসের বিষয়ে ইউপি সদস্য আমান উল্লাহ খামারু মুঠোফোনে বলেন, বিষয়টির সুরাহা করা হয়েছে। কীভাবে করা হলো এমন প্রশ্ন করা হলে তিনি তা এড়িয়ে যান। মুঠোফোনের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দিয়ে আর কথা বলেননি। কয়েক বার ফোন দিলেও সাড়া দেননি। তবে শালিসে উপস্থিত থাকা শমসের আলী নামের এক মাতব্বর বলেন, ‘বিষয়টি শালিসের মালিশ করা হয়েছে, বিচার করলে অনেক কিছু করতে হয়, সব দিক বিবেচনা করে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।’ তিনি স্বীকার করেন, অভিযুক্ত ব্যক্তির স্বীকারোক্তির ভিত্তিতে ২০ হাজার টাকা জরিমানা আদায় করা হয়েছে। এর মধ্যে অভিযোগকারীকে ১৫ হাজার টাকা, স্থানীয় মসজিদে দুই হাজার টাকা এবং তিন হাজার টাকার মিষ্টি কিনে শালিসে উপস্থিত লোকজনের মধ্যে বিতরণ করা হয়েছে। তিনি দাবি করেন, পরিবারের পক্ষেও এমনটিও চাওয়া হয়েছিল। উভয় পরিবারের দিক বিবেচনা করে এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এই সিদ্ধান্তে উভয় পক্ষ খুশি। তবে অভিযোগকারীর সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেও কথা বলা সম্ভব হয়নি। ওই গৃহবধূর স্বামীর মানসিক সমস্যা রয়েছে বলে পরিবারের সদস্য ও স্বজনেরা জানিয়েছেন। অভিযুক্ত ব্যক্তি ঘটনাটি গত বুধবার দুপুর থেকে আড়ালে চলে যান। বিকেলে অভিযোগকারী ও অভিযুক্তদের বাড়িতে গিয়ে পাওয়া যায়নি। বিপদ হতে পারে এমন আশঙ্কায় মাতব্বরেরা তাঁদের আড়ালে রেখেছেন বলে স্থানীয় কয়েকজন ব্যক্তি জানান।
শালিসে নেতৃত্ব দেওয়া আরেক মাতব্বর আলা হোসেন মুঠোফোনে বলেন, অভিযুক্ত ব্যক্তি অপরাধের কথা স্বীকার করেছেন। তবে ধর্ষণ বা খারাপ কিছু করেনি বলে জানিয়েছে। ওই দিন কী হয়েছে আল্লাহ ছাড়া আর কেউ কিছু জানে না। তিনি ২০ হাজার টাকা জরিমানা আদায় এবং নন-জুডিসিয়াল স্ট্যাম্পে লিখিত মুচলেকা নেওয়ার কথা স্বীকার করেছেন।
ইউনিয়ন পরিষদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বকুল সরদার জানান, তিনি ঈদের দিন লিখিত অভিযোগ পেয়েছেন। ওই সময় সব ছুটি থাকায় নোটিশ করতে পারেননি। বিষয়টি দেখার জন্য ইউপি সদস্যের মাধ্যমে স্থানীয় লোকজনদের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। তবে অভিযোগে কী লেখা ছিল, তা তিনি পড়েননি। কী হয়েছে তাও তিনি জানেন না বলে জানিয়েছেন।
বাগমারা থানার ওসি তৌহিদুল ইসলাম বলেন, ধর্ষণের চেষ্টা হয়ে থাকলে তা গ্রাম্যশালিসে আপোষ করার কোনো সুযোগ নেই। যদি থানায় জানানো হয়, তাহলে মামলা গ্রহণ করা হবে।

Share on facebook
Facebook
Share on twitter
Twitter
Share on linkedin
LinkedIn