বঙ্গোপসাগরে চলছে ৬৫ দিনের অবরোধ তবে এই সময়ের ভেতর আইনকে তোয়াক্কা না করে প্রতিদিন ছোট বড়ো ট্রলারের জেলেরা অবাধে শিকার করছেন সামুদ্রিক সকল প্রকার মাছ । এ অবরোধকে উপেক্ষা করে সমুদ্রে যেন চলছে জেলেদের মাছ শিকারের মহাউৎসব। নৌ পুলিশ, কোস্টগার্ড, থানা পুলিশ ও মৎস্য কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে হচ্ছে মাছ শিকার ও বিক্রি । প্রকাশ্যেই জেলেদের ধরা এসব মাছ খোলা বাজারে বিক্রি, বাজারজাত, পরিবহন করা হচ্ছে। সমুদ্রে জেলেদের অবাধ বিচরণ মৎস্য কর্মকর্তাসহ সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের চোখেন সামনে দিয়ে চালাচ্ছেন মাছ শিকার। রূপালী ইলিশসহ বিভিন্ন প্রজাতির মৎস্য রক্ষায় সরকারের নিষেধাজ্ঞাকে অমান্য করে জেলেদের অবরোধকালীন সময়ে মাছ শিকারে সহায়তা করার অভিযোগ উঠেছে সংশ্লিষ্ট মৎস্য প্রশাসন ও আরৎ ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে। কুয়াকাটা ও আলিপুর মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র সমুদ্রে মাছ শিকার করে বিক্রি করা হচ্ছে প্রতিদিন। লোকদেখানো একটি ঝটিকা অভিযানে কুয়াকাটা গাজী মৎস্য আরৎ থেকে ২৪ কেজি ৫০০গ্রাম লাক্কা মাছ জব্দ করেছেন কলাপাড়া উপজেলায় মৎস্য কর্মকর্তা ও কুয়াকাটা নৌ পুলিশের টিম। কলাপাড়া সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা ঘটনা স্থানে এসে জব্দকৃত মাছ ওপেন নিলামে বিক্রি করে যার বাজার মূল্য হয় ১০৫০০ টাকা। সরকারের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করায় গাজী মৎস্য ব্যবসায়ীকে ১০৫০০ টাকা জরিমানা আদায় করে মৎস্য কর্মকর্তা। সরেজমিনে দেখাগেছে, কুয়াকাটা ও আলিপুর মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে রুপালী ইলিশ, পোয়া, লইট্যা, ডাডি সহ সকল প্রকার সামুদ্রিক মাছ বিক্রি হচ্ছে প্রকাশ্য দিবালোকে। দেশের সমুদ্রসীমানায় ৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞাকালীন সময় সমুদ্রে মাছ শিকার, সংরক্ষণ ও বিপণন নিষিদ্ধ হলেও সবকিছুই চলছে প্রকাশ্যে। একই অবস্থা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র কুয়াকাটা পৌর মার্কেট, আলিপুর, ধুলাসার, বাবলাতলা, বালিয়াতলী, চরচাপলী, আশাখালীও গঙ্গামতি এলাকার সামুদ্রিক মাছের আড়ৎঘাটে। ৬৫ দিনের এ দীর্ঘ সময়ে সমুদ্রে মাছ শিকারে না যাবার জন্য জেলেরা সরকারি সহায়তার আওতায় রয়েছে। বাস্তবে প্রভাবশালী ফিশিং ট্রলার মালিকরা মৎস্য প্রশাসন সহ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের ম্যনেস করে জেলেদের সমুদ্রে মাছ শিকারে যেতে বাধ্য করছেন বলে জানান সাধারণ জেলেরা। এর মধ্যে নৌ পুলিশ, মৎস্য প্রশাসন কয়েকদফা রুটিন মাফিক লোকদেখানো অভিযান চালিয়ে অর্থদণ্ড করেছেন । জনবল ও নৌযানের স্বল্পতা থাকলেও কলাপাড়া উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা, নিজামপুর কোষ্টগার্ড, কুয়াকাটা নৌ-পুলিশসহ সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের দায়সারা বক্তব্য দিয়ে বলেন আমাদের অভিযান তৎপরতা দৃশ্যমান রয়েছে। সংশ্লিষ্ট মৎস্য প্রশাসন সজাগ দৃষ্টি থাকলেও সরকারি মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রসহ সামুদ্রিক মাছের আড়ৎঘাটে কেনাবেচা হচ্ছে আগের মতোই ইলিশসহ সকল প্রজাতির সামুদ্রিক মাছ। নাম প্রকাশের অনিচ্ছুক অনেক জেলেদের অভিযোগ কুয়াকাটা পৌর মৎস্য আড়দদাররা কুয়াকাটা বঙ্গোপসাগরে নিষেধাজ্ঞাকালীন চলমান অবস্থায় অন্তত ৫ শতাধিক নৌকার দেড় হাজার জেলেকে সমুদ্রে মাছ শিকারে গভীর সমুদ্রে যাতায়াত করেন । এজন্য প্রতিটি নৌকাকে গুনতে হয়েছে ১০ হাজার টাকা। অপর একটি সূত্র জানিয়েছে, মহিপুর-আলীপুর পোতাশ্রয় থেকে প্রায় এক থেকে দেড় শতাধিক ট্রলার ১৫/২০ হাজার টাকা দিয়ে গভীর সমুদ্রে ইলিশ শিকারে যাচ্ছে । এমনকি আহরিত মাছ সংরক্ষণ, মজুদ ও বাজারজাত করণে বরফ উৎপাদনের মিলগুলোর মধ্যে কিছু কিছু সচল রাখার হয়েছে। আড়তগুলোতে যেসব মাছ বিক্রি হচ্ছে সবই বঙ্গোপসাগরের মাছ। যা নদীর মাছ বলে চালিয়ে নিচ্ছে আড়তদাররা। আলীপুর-মহিপুর মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র জেলেদের আহরিত মাছ চিহ্নিত করতে পারেননি সংশ্লিষ্ট মৎস্য প্রশাসন । তবে জেলেসহ দাদন ব্যবসায়ীরা নদীর মাছ বলেই পাইকারি বাজারে বিক্রি করছেন। এই অবরোধকালীন সময়ে খোলাবাজারে প্রকাশ্যে মাছ বেচা-কেনা নিয়েও রয়েছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া। গভীর সমুদ্রে মাছ শিকারের ওপর ৬৫ দিনের অবরোধ চলছে। কলাপাড়া উপজেলার মৎস্য কর্মকর্তার দায়সারা বক্তব্য দিয়ে তিনি বলেন, নিষেধাজ্ঞাকালীন সময় জেলেরা সমুদ্রে মাছ শিকার করে তাদের জন্য অভিযান চালিয়ে অসাধু ব্যবসায়িদের আর্থিক জরিমানা ও সংরক্ষিত মাছ নিলামে বিক্রি করে সরকারি কোষাগারে জমা দেওয়া হবে । এই নিষেধাজ্ঞা অমান্য কারির বিরুদ্ধে এ অভিযান চলমান রয়েছে এবং অব্যাহত থাকবে বলে জানান উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা। কলাপাড়া উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা আরও বলেন নিষেধাজ্ঞা কার্যকর করতে সার্বক্ষণিক আমাদের মাঠ পর্যায়ে কাজ চলমান রয়েছে বলে উল্লেখ করেন তিনি।