রবিবার - ২০শে এপ্রিল, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ - ৭ই বৈশাখ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ - ২২শে শাওয়াল, ১৪৪৬ হিজরি

ফিলিস্তিনি নির্যাতনের বিরুদ্ধে ব্রাহ্মণপাড়ায় শিক্ষার্থীদের রাস্তায় নামা: মোশাররফ হোসেন কলেজের বিক্ষোভে উত্তাল কুমিল্লা

ফিলিস্তিনি নির্যাতনের বিরুদ্ধে ব্রাহ্মণপাড়ায় শিক্ষার্থীদের রাস্তায় নামা: মোশাররফ হোসেন কলেজের বিক্ষোভে উত্তাল কুমিল্লা

 

গাজায় ইসরায়েলের নির্মম হামলা ও মানবতাবিরোধী অপরাধের বিরুদ্ধে রবিবার (১৪ এপ্রিল) কুমিল্লার ব্রাহ্মণপাড়ায় রাস্তায় নেমে প্রতিবাদ জানালো মোশাররফ হোসেন খান চৌধুরী বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের শিক্ষার্থীরা। কলেজ ক্যাম্পাস থেকে শুরু হওয়া বিক্ষোভ মিছিলে অংশ নেয় প্রায় আড়াই হাজার শিক্ষার্থী, যা পরবর্তীতে উত্তাল প্রতিবাদ সমাবেশে রূপ নেয়।

সকাল ১১টায় কলেজ গেটে জমায়েত হওয়া শিক্ষার্থীরা হাতে নিয়ে আসে বর্ণিল প্ল্যাকার্ড ও ব্যানার। “গাজার শিশু হত্যা বন্ধ করো”, “ইসরাইলি সন্ত্রাসের অবসান চাই”, “জাতিসংঘ কেন নীরব?” – এমন স্লোগান লেখা পোস্টার নিয়ে তারা কুমিল্লা-মিরপুর সড়ক প্রদক্ষিণ করে। মিছিলটি উপজেলার প্রধান প্রধান সড়ক ঘুরে শেষ হয় সিএনজি স্ট্যান্ড এলাকায় এক জোরালো সমাবেশে।

কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর মোঃ আলতাফ হোসেন সমাবেশে প্রধান বক্তা হিসেবে বলেন, “গাজার বর্তমান পরিস্থিতি দেখে মনে হচ্ছে আমরা ইতিহাসের সবচেয়ে অন্ধকার সময় পার করছি। স্কুল-হাসপাতালে বোমাবর্ষণ, শিশু হত্যা – এসব কোনো সভ্য সমাজ মেনে নিতে পারে না।”

ইতিহাস বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ড. মোঃ কবির আহমেদ বলেন, “১৯৪৮ সাল থেকে ফিলিস্তিনিরা যে নির্যাতনের শিকার হচ্ছে, তা মানব ইতিহাসের এক কলঙ্কিত অধ্যায়। বিশ্ব নেতৃত্বের নিষ্ক্রিয়তা আমাদেরকে হতাশ করেছে।”

রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের প্রভাষক শরীফ মোঃ রেজা জাতিসংঘের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন: “আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানগুলো যখন দুর্বলের পক্ষে না দাঁড়ায়, তখন তাদের অস্তিত্বই প্রশ্নের সম্মুখীন হয়।”

কলেজের দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী তানজিনা আক্তার কাঁদো কাঁদো স্বরে বলেন, “আমরা প্রতিদিন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দেখছি কীভাবে গাজায় শিশুরা খাদ্য ও ওষুধের অভাবে মারা যাচ্ছে। এই চিত্র দেখেও যারা নীরব থাকতে পারে, তারা কি মানুষ?”

অন্য এক শিক্ষার্থী রাকিবুল হাসান বলেন, “বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস আমাদের শেখায় অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে। ফিলিস্তিনের সংগ্রামও সেই একই লড়াই।”

মিছিলে স্বতঃস্ফূর্তভাবে যোগ দেন স্থানীয় ব্যবসায়ী ও সাধারণ মানুষ। ব্রাহ্মণপাড়া বাজারের দোকানদার আব্দুল মান্নান বলেন, “এই বিক্ষোভ শুধু কলেজের নয়, গোটা ব্রাহ্মণপাড়ার মানুষের হৃদয়ের ভাষা।”

প্রতিবাদ সমাবেশে উপস্থিতরা একসাথে তুলে ধরেন চারটি মূল দাবি:
১. গাজায় তাৎক্ষণিক যুদ্ধবিরতি কার্যকর করা
২. ইসরায়েলের বিরুদ্ধে কঠোর অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা আরোপ
৩. ফিলিস্তিনকে পূর্ণাঙ্গ স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া
৪. যুদ্ধাপরাধের জন্য ইসরায়েলি নেতাদের বিচার

কলেজ কর্তৃপক্ষ জানান, তারা ফিলিস্তিনিদের সহায়তায় একটি তহবিল গঠন করছেন। এছাড়া প্রতি শুক্রবার ক্যাম্পাসে ফিলিস্তিন বিষয়ক আলোচনা সভার আয়োজন করা হবে।

Share on facebook
Facebook
Share on twitter
Twitter
Share on linkedin
LinkedIn