শনিবার - ৮ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ - ২৫শে মাঘ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ - ৯ই শাবান, ১৪৪৬ হিজরি

নাসিরনগরে বিএডিসি কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অনিয়মের অভিযোগ

নাসিরনগরে বিএডিসি কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অনিয়মের অভিযোগ

 

বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশন (বিএডিসি) নাসিরনগর উপজেলার দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা উপ-সহকারী প্রকৌশলী (ক্ষুদ্র সেচ) মো. গিয়াস উদ্দিনের বিরুদ্ধে সরকারি সেচ প্রকল্পে ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। গত ১৫ই জানুয়ারি ভুক্তভোগী প্রবাসী আব্দুল আওয়াল মিয়ার স্ত্রী সোনিয়া আক্তার নাসিরনগর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা ও উপজেলা সেচ কমিটির সভাপতি শাহীনা নাছরিন বরাবর লিখিত অভিযোগ করেছেন।

জানা যায়, কৃষির উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে ভর্তুকির মাধ্যমে স্বল্প খরচে প্রতিটি এলাকায় কৃষকের নিজ জমিতে নির্দিষ্ট পরিমাণ দূরত্বে গভীর নলকূপ স্থাপন করে দিচ্ছে সরকার। এজন্য লাইসেন্সের জন্য আবেদন করতে হয়। আবেদন করার পর বিএডিসির একজন দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তার সরেজমিন পরিদর্শনের পর উপজেলা সেচ কমিটির কাছে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করতে হয়। এই সেচ কমিটির সভাপতি হলেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) এবং সদস্য সচিব বিএডিসি অফিসের উপজেলার দায়িত্বপ্রাপ্ত উপ-সহকারী প্রকৌশলী (ক্ষুদ্র সেচ)। এ ছাড়া কমিটির সদস্য হিসেবে রয়েছেন আরও ৫ জন সরকারি কর্মকর্তা। কিন্তু ভুক্তভোগী স্থানীয়দের অভিযোগ সেচ কমিটির সদস্য সচিব বিএডিসি অফিসের কর্মকর্তা গিয়াস উদ্দিন মোটা অংকের অর্থের বিনিময়ে নিয়মবহির্ভূতভাবে সেচ সংযোগের ছাড়পত্র দিয়েছেন।

অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, চলতি ইরি-বোরো মৌসুমে নাসিরনগর উপজেলায় গভীর নলকূপ স্থাপনের জন্য স্থানীয় কৃষকরা আবেদন করেন বিএডিসি অফিসে। উপজেলার পূর্বভাগ ইউনিয়নের পূর্বভাগ গ্রামের ১নং ওয়ার্ডের আব্দুল আওয়াল ২০১২ সালে পূর্বভাগ মৌজার এস.এ ২১৬, বি.এস ১১০৮ নং খতিয়ানের এস.এ৪৪৩, বি.এস ৯২৪ দাগের ভূমিতে গভীর নলকূপ সেচ প্রকল্প স্থাপনের মাধ্যমে কৃষি জমিতে পানি সরবরাহ করার জন্য বিএডিসি অফিসে লাইসেন্সের আবেদন করলে উপজেলা কৃষি অফিসের পরামর্শে নিজ খরচে জমিতে সেচের ব্যবস্থা করেন। তার গভীর নলকূপ স্থাপনের কয়েকবছর পর নিয়ম বহির্ভূতভাবে পাশেই আরেকটি নলকূপ স্থাপন করে পূর্বভাগ ১নং ওয়ার্ড আওয়ামীলীগের সহ-সভাপতি অহিদ মিয়া। বিষয়টি নিয়ে একাধিকবার স্থানীয়ভাবে সালিশ হলেও কোনো কিছুই মানতে নারাজ অহিদ মিয়া। সম্প্রতি এই আওয়ামীলীগ নেতা মোটা অংকের অর্থের বিনিময়ে বিএডিসি কর্মকর্তা গিয়াস উদ্দিনকে ম্যানেজ করে নিয়ম বহির্ভূতভাবে নতুন লাইসেন্স নিয়েছেন বলে অভিযোগ স্থানীয়দের।

এবিষয়ে ভুক্তভোগী প্রবাসী আব্দুল আওয়ালের স্ত্রী সোনিয়া বেগম বলেন, অহিদ মিয়ার কারণে আমার স্বামী আট বছর যাবত দেশে আসতে পারে না, আমার চারটা বাচ্চার মুখ দেখতে পারছে না। অহিদের চাচাতো ভাই একজনকে খুন করেছে সেই মামলায় অহিদ আমার স্বামীকে জড়িয়ে দিয়েছে। সে সারাজীবন আওয়ামীলীগ করেছে, রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে বিভিন্ন ধান্দাবাজি করেছে। এখন গ্রামের সবার কথা অমান্য করে বিএডিসি অফিসের কর্মকর্তাদের মোটা অংকের অর্থ দিয়ে অন্যায়ভাবে আরেকটা মেশিন বসিয়েছে। আমরা এর বিচার চাই।

জানতে চাইলে অহিদ মিয়া বলেন, আমি কোনো অনিয়ম করিনি। যারা আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ করছে তারা আমার পরে মেশিন বসিয়েছে।

বিএডিসির উপসহকারী প্রকৌশলী গিয়াস উদ্দিন জানান, আমি আব্দুল আওয়ালের আবেদনের ব্যাপারটি আগে জানতে পারিনি, আবেদনটি পরে পেয়েছি। পূর্ববর্তী কর্মকর্তা আমাকে আব্দুল আওয়ালের আবেদনের বিষয়টি জানিয়ে যায়নি। অহিদ মিয়ার লাইসেন্স অনুমোদনের পর বিষয়টি জানতে পেরেছি। অর্থনৈতিক সুবিধা নেওয়ার অভিযোগটি সঠিক নয়।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও সেচ কমিটির সভাপতি শাহীনা নাছরিন বলেন, লিখিত অভিযোগটি পেয়েছি। আগামীকাল এই বিষয়ে উভয়পক্ষকে নিয়ে আলোচনা হবে। পরবর্তীতে তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

Share on facebook
Facebook
Share on twitter
Twitter
Share on linkedin
LinkedIn