রবিবার - ২৬শে জানুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ - ১২ই মাঘ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ - ২৬শে রজব, ১৪৪৬ হিজরি

নওরোজ: জীবন সংগ্রামে সাহসী এক নারী

নওরোজ: জীবন সংগ্রামে সাহসী এক নারী

-মো. কামাল উদ্দিন

নওরোজ। নামের মধ্যেই যেন আছে এক ধরনের আভিজাত্য। স্মার্ট, শিক্ষিত, এবং দৃঢ়চেতা এই নারীর জীবন যেন এক মহাকাব্যের উপকরণ। চট্টগ্রামের এক ঐতিহ্যবাহী পরিবারে তার জন্ম। তবে তার পরিচয় শুধু বংশের গর্বে সীমাবদ্ধ নয়, বরং তার জীবন সংগ্রামের গল্প এক অনন্য দৃষ্টান্ত হয়ে দাঁড়িয়েছে।
নওরোজের পরিবার চট্টগ্রামের ইতিহাসে বিশেষ মর্যাদা বহন করে। তার নানা, উপমহাদেশের প্রখ্যাত শিক্ষানুরাগী বাদশা মিয়া চৌধুরী, ছিলেন এক আলোকবর্তিকা। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠায় তার আর্থিক অবদান উপমহাদেশের শিক্ষা আন্দোলনের ইতিহাসে চিরস্মরণীয়।চট্টগ্রাম নাসিরাবাদ মহিলা কলেজ, ফতেয়াবাদ স্কুল অ্যান্ড কলেজ, সিটি কলেজ, ওমর গনি এমই এস কলেজ—এসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পেছনে তার নিরলস প্রচেষ্টার গল্প নওরোজ শুনেছেন ছোটবেলা থেকেই। তার খালা প্রফেসর রওশন আকতার হানিফ, চট্টগ্রাম কলেজের প্রিন্সিপাল হিসেবে যে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছিলেন, তা নওরোজের জীবনের প্রথম দিককার অনুপ্রেরণা।
কিন্তু নওরোজের জীবন কেবল উত্তরাধিকারসূত্রে প্রাপ্ত ঐতিহ্যের গল্প নয়। তার জীবন এক সংগ্রামের গাঁথা। সমাজের চোখে তিনি হয়তো ধনাঢ্য ও প্রতিষ্ঠিত পরিবারের সন্তান, কিন্তু তার আত্মার গভীরে রয়েছে এক অসীম সাহস আর শক্তি। জীবনের একাধিক অধ্যায়ে তিনি প্রতারণার শিকার হয়েছেন। সহজ সরল বিশ্বাস আর মানবিকতার সুযোগ নিয়ে তাকে ঠকিয়েছে অনেকে। তবু তিনি থেমে যাননি। প্রতিটি আঘাতকে নিজের শক্তিতে রূপান্তরিত করে তিনি এগিয়ে গেছেন।তবে সংগ্রামী এই নারীর মনের গভীরে এক অপরূপ কোমলতা রয়েছে। নওরোজ একাধারে যেমন সাহসী, তেমনি প্রেমময়। তার জীবন এক বিষাদমাখা কবিতার মতো, যেখানে প্রতিটি শব্দে লুকিয়ে আছে ভালোবাসার গভীর আবেগ। তার চোখে যেন সবসময় ভাসে মানবতার স্বপ্ন। তার কণ্ঠে এমন এক মায়া আছে, যা শুনে যে কেউ মুগ্ধ হতে বাধ্য।নওরোজ শুধু একজন সফল নারীই নন, একজন মমতাময়ী মা। শত ব্যস্ততার মাঝেও সন্তানদের প্রতি তার দায়িত্বে কোনো ত্রুটি নেই। একাকী জীবনে সন্তানদের মানুষ করতে গিয়ে তিনি হয়েছেন তাদের জন্য এক আদর্শ। নিজের জীবনকে তিনি সন্তানদের জন্য উৎসর্গ করেছেন।
নওরোজের সঙ্গে সরাসরি কথা বলার সুযোগ যারা পেয়েছেন, তারা তার মধ্যে দেখেছেন এক অসাধারণ ক্ষমতা। তার কথার ধরণ, আবেগপ্রবণতা, এবং আন্তরিকতার প্রকাশ যে কাউকে অভিভূত করতে পারে। তার জীবনের প্রতিটি বাঁক যেন এক গল্প। তিনি যে সংগ্রাম করেছেন, তা শুধু তার নয়, বরং এটি প্রতিটি নারীর জন্য অনুপ্রেরণা।
তার জীবন কাহিনীকে কেবল একটি গল্প বলা ভুল হবে। এটি একটি মহাকাব্য, যা সাহিত্যের পাতায় লেখা হতে পারে। প্রেম, সংগ্রাম, বিশ্বাসঘাতকতা, এবং মানবিকতার মিশেলে গড়া নওরোজের জীবন একদিন হয়তো একটি উপন্যাস হয়ে উঠবে। তার প্রতিটি অধ্যায় একটি অধ্যয়ন। তার প্রতিটি মুহূর্ত এক অমর গান।
নওরোজ—একটি নাম, একটি জীবন, একটি স্বপ্ন।
এক সংগ্রামী নারীর গল্প-নওরোজের সঙ্গে এই দেখা ছিল সম্পূর্ণ৷ অনাকাঙ্ক্ষিত। তবু, কথা বলার মুহূর্তগুলো যেন হৃদয়ের গভীরে এক অদ্ভুত সুর তুলে গেল। প্রতিটি শব্দ মধুর, প্রতিটি বাক্য প্রাণের গহীনে এমনভাবে বেজে উঠল, যা কখনো মন থেকে মুছে যাবে না। মনে হলো, আমি যেন এমন একজন মানুষের সামনে দাঁড়িয়ে আছি, যার সহজাত গুণাবলির প্রতীক—এক অভূতপূর্ব চরিত্র, যার জীবন কেবলই সংগ্রাম আর অদম্য স্বপ্নের গল্প।
নওরোজের কথা শুনতে শুনতে আমি অনুভব করলাম, কতটা সহজাত দক্ষতায় তিনি মানুষের হৃদয়ে জায়গা করে নেন। তার জীবন যেন জীবনের প্রতীক, যেখানে যন্ত্রণার পাহাড় পেরিয়ে এক অনন্য গন্তব্যে পৌঁছানোর স্বপ্ন লুকিয়ে আছে। এমন মানুষের সামনে বসে শুনতে শুনতে মনে হলো, তিনি যেন একটি জীবন্ত উপন্যাস, যার প্রতিটি অধ্যায়ে লুকিয়ে আছে শিকড় ছোঁয়া সত্য।
জীবনের প্রতিটি মুহূর্তে নওরোজ লড়েছেন। বেদনা, যন্ত্রণা, হারানো স্বপ্ন—সবকিছুকে সঙ্গী করেও তিনি থামেননি। তার গল্প যেন এক মহাকাব্যের মতো, যেখানে প্রতিটি বাঁক, প্রতিটি যন্ত্রণার মুহূর্ত, প্রতিটি জয়ের ঝলক জীবনের আলোকিত পথে এগিয়ে চলার সাক্ষ্য দেয়।
আজ যখন তার জীবনের শেষ অধ্যায়ের কাছে তিনি এসে দাঁড়িয়েছেন, তখনও তার কণ্ঠে শোনা যায় সংগ্রামের সেই প্রাচীন গান। তার কথায়, তার চোখে, তার দৃষ্টিতে ফুটে ওঠে এক ত্যাগী নারীর অবিচল অধ্যবসায়। ঐতিহ্যের শিকড় ধরে রেখে, পরিবারের গর্বকে রক্ষা করে, নিজের সৎ ও সঠিক পথ বেছে নেওয়ার যে গল্প তিনি শুনালেন, তা সত্যিই অভূতপূর্ব।
তাকে শুনতে শুনতে আমার মনে হলো, কত অজানা গল্প এখনো বলা হয়নি। তার জীবনের না বলা কথাগুলো যেন এক মহাকাব্যের রূপরেখা, যেখানে যন্ত্রণার গভীরে লুকিয়ে আছে আলোর উৎস। তার সংগ্রাম, তার জীবনের তিক্ততা আর ভালোবাসার প্রতিটি অধ্যায় একে একে উন্মোচিত হলে, তা কেবল তার গল্পই নয়, আমাদের সবার জীবনের গল্প হয়ে উঠবে তিন দশক ধরে সাংবাদিকতার জগতে কাজ করেছি। অসংখ্য মানুষের জীবনপথের সঙ্গে পরিচিত হয়েছি। তবে নওরোজের মতো কাউকে আগে কখনো দেখিনি। তার মধ্যে রয়েছে অসাধারণ এক শক্তি, যার সামনে যেকোনো বাধা ক্ষুদ্র বলে মনে হয়। তার সংগ্রামী জীবন, তার অনুপ্রেরণার গল্প, তার প্রতিটি মুহূর্ত আমাকে মুগ্ধ করেছে। আমি চাই, তার এই জীবনের গল্পটি পৃথিবীর কাছে তুলে ধরতে। তার অজানা কথাগুলো, তার রক্ত-ঘামের প্রতিটি অধ্যায়, তার সারা জীবনের সংগ্রামের প্রতিটি ধাপ যেন কলমের ভাষায় জীবন্ত হয়ে ওঠে। নওরোজের জীবনের প্রতিটি অধ্যায় একেকটি আলাদা গল্প, একেকটি জীবন্ত অধ্যায়, যা মানুষকে শিখিয়ে যাবে—স্বপ্ন দেখা আর স্বপ্ন পূরণের প্রকৃত মানে।
আমি অপেক্ষা করছি সেই সময়ের জন্য, যখন আবার তার সামনে বসে শুনব তার জীবনের নতুন কিছু অধ্যায়। যদি সুযোগ পাই, তার জীবনের প্রতিটি গল্প ক্যামেরার ফ্রেমে ধারণ করব, যাতে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম তার থেকে প্রেরণা পায়।
এই অমূল্য অভিজ্ঞতা আমাকে এক নতুন দিগন্তের সামনে এনে দাঁড় করিয়েছে।নওরোজকে আমি কিছু কথা লিখেছিলাম,তাতে নওরোজ আমাকে কৃতজ্ঞতায় আবদ্ধ করেছে- তাই আমি বলেছি-নওরোজ,আপনি ধন্যবাদ জানালে আমাকে। তবে সত্যি বলতে, আসল কৃতজ্ঞতা আপনার প্রতি, কারণ আপনি আমাকে এমন একটি গল্পের স্রষ্টা হওয়ার সুযোগ দিলেন, যা কোনোদিন হারিয়ে যাবে না।
আমার লেখাটি কল্পনার কথা- সেদিনটা ছিল পুরোপুরি অন্যরকম। একদম পরিকল্পনা বিহীন ভাবে নওরোজের সঙ্গে দেখা হয়ে গেল। আমরা দু’জনেই অবাক হয়ে কিছুক্ষণ চুপ করে ছিলাম। তবে কথা বলার শুরুটা যেন হৃদয়ের মর্মে এক নতুন সুর বেঁধে দিল। তার প্রতিটি কথা যেন আমার আত্মার গহীন থেকে এক অপরিচিত অনুভূতি জাগিয়ে তুলল—অবর্ণনীয়, অনির্বচনীয়।
তার সঙ্গে কথা বলতে বলতে আমি যেন হারিয়ে গেলাম তার জীবনের গভীরে। প্রতিটি বাক্য, প্রতিটি অনুভূতি তার সংগ্রামী জীবনের প্রতিচ্ছবি হয়ে ধরা দিচ্ছিল। আমি তাকিয়ে দেখছিলাম, কীভাবে একজন মানুষ জীবনের এত যন্ত্রণা, এত প্রতিকূলতা পার হয়ে এতটা সুন্দর, সাহসী হয়ে উঠতে পারে।
নওরোজ একজন সংগ্রামী নারী। তার জীবনটা যেন এক দীর্ঘ যুদ্ধ। বেদনা, হার, ব্যর্থতা—সবকিছুই ছিল সঙ্গী। তবুও তিনি থামেননি। তার জীবন কাহিনীর প্রতিটি অধ্যায় যেন একেকটা চ্যালেঞ্জ, যা তিনি অতিক্রম করেছেন সাহস আর বিশ্বাস নিয়ে।
তার কণ্ঠে যখন জীবনের কথা শুনছিলাম, মনে হলো, তিনি যেন তার প্রতিটি যন্ত্রণার মধ্যে থেকেও নতুন কিছু সৃষ্টি করে গেছেন। তার জীবন এক জীবন্ত কবিতা, যার প্রতিটি ছন্দে লুকিয়ে আছে সংগ্রামের গল্প।
নওরোজ বলছিলেন তার পরিবারের কথা। ঐতিহ্যের কথা, ভালোবাসার কথা, আর সেই যন্ত্রণা, যা তিনি এত যত্ন করে নিজের মধ্যে লুকিয়ে রেখেছেন। তার প্রতিটি কথা আমাকে মুগ্ধ করছিল। মনে হচ্ছিল, এই গল্পগুলো যেন সবার শোনার প্রয়োজন।
আমি তখন ভেবে নিচ্ছিলাম, তার জীবনের প্রতিটি না বলা গল্প, প্রতিটি যন্ত্রণার মুহূর্তকে কেমন করে পৃথিবীর সামনে তুলে ধরা যায়। আমি চাই, তার জীবন হোক এক প্রেরণার উৎস। আমি লিখব তার প্রতিটি অধ্যায়, যেখানে তার সংগ্রামের গান পৃথিবীর প্রতিটি মানুষের মন ছুঁয়ে যাবে।নওরোজের সঙ্গে সেই দিনের কথা ভুলবার নয়। তার মতো একজন সাহসী নারীর কাছে বসে জীবন নিয়ে কথা বলার অভিজ্ঞতা আমার জন্য অমূল্য। তার সঙ্গে সময় কাটানোর প্রতিটি মুহূর্ত যেন আমাকে আরও সমৃদ্ধ করেছে। যখন তার সামনে বসে ছিলাম, অনুভব করলাম, এই সাক্ষাৎ শুধু আমাদের দু’জনের নয়। এটি এক নতুন গল্পের শুরু। নওরোজের জীবনের প্রতিটি অধ্যায় পৃথিবীর সামনে তুলে ধরার দায়িত্ব যেন এখন আমার কাঁধে।
সেদিন নওরোজ আমাকে ধন্যবাদ জানিয়েছিলেন। তবে সত্যি বলতে, কৃতজ্ঞ আমি—কারণ, তার জীবন আমার হৃদয়ে যে সুর তুলেছে, তা কখনো মুছে যাবে না। তার সঙ্গে দেখা হওয়া আমার জীবনের এক অনন্য অভিজ্ঞতা, যা আমি কখনো ভুলতে পারব না। এক অপ্রত্যাশিত দেখা একটি সকাল, যা ছিল সম্পূর্ণ অপ্রত্যাশিত। নওরোজের সঙ্গে হঠাৎ দেখা হয়ে গেল। আমি প্রস্তুত ছিলাম না। তার চোখে ছিল জীবনের গভীর অভিজ্ঞতার ছাপ। আমরা দু’জনই কিছু সময় নীরব ছিলাম। কিন্তু তার বলা প্রথম বাক্য থেকেই যেন আমার হৃদয়ের ভেতর এক নতুন আলোর সঞ্চার হল।তার কথাগুলো সরল, কিন্তু তাতে ছিল গভীরতা। প্রতিটি শব্দ তার জীবনের গভীর সংগ্রামের কথা বলছিল। তার মুখে জীবনের কথা শোনা, মনে হলো, যেন একটি মহাকাব্যের অংশ হয়ে উঠেছি।
“তোমার মুখের প্রতিটি কথা আমার আত্মায় সুর তোলে,” বলেছিলাম।
নওরোজ একটু হেসে বলল, “তুমি জানো, সংগ্রামের সুরও তো জীবনেরই গান।”
তার মুখে এমন অনেক সহজ কথা শুনে মনে হলো, জীবন যেভাবেই আসুক, তাকে আপন করে নিতে হয়। নওরোজের জীবনে ছিল অনেক যন্ত্রণা, অনেক হারানোর গল্প। কিন্তু সেগুলো যেন তার শক্তি হয়ে উঠেছে।আমি জানতে চাইলাম তার জীবনের গল্প। নওরোজ বলল, “আমার জীবন তো এক সহজ রাস্তা ছিল না। অনেক কঠিন মুহূর্ত ছিল, কিন্তু আমি কখনো থামিনি।”
তার প্রতিটি বাক্য আমার মনে এমন গভীর দাগ কাটল, যা কখনো মুছে যাবে না। তার সংগ্রামের গল্প শুধু তার নিজের নয়, বরং সবার জন্য এক অনুপ্রেরণা।
বসেদিন আমি বুঝেছিলাম, নওরোজের মতো মানুষের গল্প আমাদের আরও শোনার প্রয়োজন। তার সংগ্রাম, তার আত্মবিশ্বাস, এবং তার ভালোবাসার শক্তি আমাদের জীবনের পথচলায় আলোর দিশা দেখাবে।
লেখকঃ সাংবাদিক গবেষক টেলিভিশন উপস্থাপক।

Share on facebook
Facebook
Share on twitter
Twitter
Share on linkedin
LinkedIn