
কুমিল্লা সদর দক্ষিণ উপজেলা পরিষদ মাঠে ফুটবল টুর্নামেন্ট (অনূর্ধ্ব ১৭) শুরু হয়েছে গত শনিবার। এই টুর্নামেন্ট ঘিরে উন্মাদনায় ভাসছিল পুরো এলাকা। প্রথম দিন খেলা দেখতে দূরদূরান্ত থেকে ছুটে আসে কিশোর-যুবক-বৃদ্ধ। গত রোববার বিকেলে ওই মাঠে ছিল দ্বিতীয় ম্যাচ। এ দিনও উন্মাদনা নিয়ে খেলা দেখতে মাঠের দিকে ছুটছিল দর্শক। কিন্তু সেই উন্মাদনা যে মুহূর্তে বিষাদে রূপ নেবে তা ভাবেনি কেউ। খেলা দেখতে যাওয়ার পথে দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছে ওই উপজেলার লালবাগ গ্রামের তিন কিশোরসহ চারজন। এ ঘটনার পর শোকস্তব্ধ পুরো গ্রাম। স্বজন হারানোদের সান্ত্বনা দেওয়ার ভাষা খুঁজে পাচ্ছেন না গ্রামবাসী।
নিহতদের মধ্যে দু’জন স্কুলছাত্র ও একজন মাদ্রাসাছাত্র। তারা হলো–সদর দক্ষিণ উপজেলার লালবাগ রওশন আশরাফ উচ্চ বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণির ছাত্র সৈকত হোসেন শাহীন, একই বিদ্যালয়ের এসএসসি পরীক্ষার্থী মো. ফয়সাল এবং লালবাগ মাদ্রাসার দশম শ্রেণির ছাত্র আবদুল কাদের সাকিব। নিহত আরেকজন দুর্ঘটনাকবলিত পিকআপ ভ্যানের চালকের সহকারী মো. মোরশেদ। এ ঘটনায় আহত আটজন কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
স্থানীয় সূত্র জানায়, কুমিল্লা জেলা সদর থেকে প্রায় ১০ কিলোমিটার দক্ষিণে লালবাগ গ্রাম। প্রায় তিন কিলোমিটার দূরে সদর দক্ষিণ উপজেলা পরিষদ মাঠ। সেই মাঠে শুরু হয়েছে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান জাতীয় গোল্ডকাপ ফুটবল টুর্নামেন্ট বালক (অনূর্ধ্ব ১৭) এবং বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন নেছা মুজিব জাতীয় গোল্ডকাপ ফুটবল টুর্নামেন্ট বালিকাদের (অনূর্ধ্ব ১৭) খেলা। রোববার বিকেলে বারপাড়া বনাম জোড়কানন (পূর্ব) ইউনিয়নের বালকদের মধ্যে খেলা ছিল। সেই খেলা দেখতে একটি পিকআপভ্যানে লালবাগ গ্রামের ২০-২৫ জন কিশোর মাঠের উদ্দেশে রওনা দেয়। কিছু দূর যাওয়ার পর মহাসড়কের লালবাগ এলাকায় বেপরোয়া গতির একটি কাভার্ডভ্যান তাদের পিকআপে ধাক্কা দেয়। এতে সড়কের পাশে পিকআপ উল্টে কাভার্ডভ্যানের নিচে পড়ে হতাহতের ঘটনা ঘটে।
দুর্ঘটনায় নিহত চারজনের মরদেহ রোববার রাতেই নিজ নিজ বাড়িতে পৌঁছায়। বৃষ্টি উপেক্ষা করে গতকাল সোমবার সকাল থেকে নিহতদের স্বজনদের সান্ত্বনা দিতে ছুটে যান গ্রামবাসী। সকাল ৯টা থেকে ১০টার মধ্যে পৃথকভাবে চারজনের জানাজার পর তাদের মরদেহ পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়েছে।
দুর্ঘটনায় নিহত সাকিবের চাচা মো. রবিউল জানান, দুই বোনের একমাত্র ভাই ছিল সে। চলতি বছরের শুরুতে তার বাবা মারা যান। এই শোক কাটিয়ে না উঠতেই একমাত্র ছেলেকে হারিয়ে স্তব্ধ হয়ে গেছেন সাকিবের মা। লালবাগ রওশন আশরাফ উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. মাঈনুদ্দিন জানান, দুই ছাত্রের এমন মৃত্যুর ঘটনায় শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও কর্মচারীরা শোকাহত। পিকআপচালকের সহকারী মোরশেদের প্রতিবেশী আবদুল মালেক জানান, পাঁচ সদস্যের পরিবারের একমাত্র উপার্জনকারী ছিলেন মোরশেদ। তাঁর মৃত্যুতে পরিবারটি আরও অসহায় হয়ে গেল।
সদর দক্ষিণ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শুভাশিস ঘোষ জানান, দুর্ঘটনার পর রাতে নিশ্চিত হওয়া যায়, হতাহতদের মধ্যে কেউ খেলোয়াড় ছিল না। উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে নিহত প্রত্যেকের পরিবারকে ২৫ হাজার এবং ইউনিয়ন পরিষদের পক্ষ থেকে ১০ হাজার টাকা সহায়তা দেওয়া হয়েছে। এ ঘটনায় আগামী ১৫ জুন পর্যন্ত টুর্নামেন্টের সব ম্যাচ স্থগিত করা হয়েছে।
সদর দক্ষিণ মডেল থানার ওসি দেবাশিস চৌধুরী জানান, নিহতদের স্বজনদের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে মরদেহ ময়নাতদন্ত করা হয়নি। কাভার্ডভ্যান জব্দ করা হয়েছে। তবে এর চালক ও হেলপার পলাতক।