বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, অবৈধ অনির্বাচিত দখলদার সরকারের অধীনে বাংলাদেশ এখন প্রায় ধ্বংস দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে গেছে। একটি ব্যর্থ রাষ্ট্রের দিকে পতিত হচ্ছে।
আজকে অর্থনীতিতে সম্পূর্ণ ব্যর্থতার কারণে তাদের (সরকারের) দুর্নীতির কারণে আজকে জনগণের জীবন দুঃসহ হয়ে পড়েছে।
বুধবার (৩ মে) দুপুরে গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এলডিপি) সঙ্গে আলোচনা শেষে তিনি এসব কথা বলেন।
ফখরুল বলেন, দ্রব্যমূল্য অসহনীয় পর্যায়ে পৌঁছেছে, শান্তি শৃঙ্খলার যে পরিস্থিতি; এখানে লুটপাট এবং একই সঙ্গে ব্যাংকগুলোকে পুরোপুরিভাবে খালি করে দেওয়া, দেশের অর্থ বিদেশে পাচার করে দিয়ে অর্থব্যবস্থাকে ধ্বংস করে দেওয়া হচ্ছে। স্বাস্থ্যখাত, শিক্ষাখাত সবকিছুতেই একটি নৈরাজ্য পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে।
একই সঙ্গে আমাদের ন্যূনতম যে অধিকার, ভোট দেওয়ার অধিকার, কথা বলার অধিকার, আমাদের স্বাধীন মত প্রকাশের যে অধিকার তা কেড়ে নেওয়া হয়েছে। ১৯৭১ সালে যুদ্ধের মধ্য দিয়ে যে অধিকারগুলো অর্জন করেছিলাম, সেই অধিকারগুলো পুরোপুরি ধ্বংস করে দিয়েছে, একটি মাত্র উদ্দেশ্য তারা একদলীয় শাসন ব্যবস্থা আবারও প্রতিষ্ঠা করতে চায়, যেটি তারা করতে চেয়েছিল ১৯৭৫ সালে।
তিনি বলেন, সত্যিকার অর্থে দেশে যারা গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে চায় সেই দলগুলোর সঙ্গে আমরা এক জোট হয়ে যুগপৎ আন্দোলন শুরু করেছি গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের জন্য, আমাদের অধিকার ফিরে পাওয়ার জন্য।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, যুগপৎ আন্দোলনে আমরা যে দাবিগুলো দিয়েছি তার মধ্যে প্রধান হচ্ছে এ সরকারের পদত্যাগ। আমরা নির্বাচনকালীন সময় দেখেছি এখানে নিরপেক্ষ সরকার না থাকলে জনগণ ভোট দিতে পারে না। বিশেষ করে আওয়ামী লীগ সরকারের আমলের দুটি নির্বাচন দেখেছি, যেখানে তত্ত্বাবধায়ক সরকার বা নিরপেক্ষ সরকারের মাধ্যমে নির্বাচন হতে হবে। সরকারকে পদত্যাগ করতে হবে সংসদ বিলুপ্ত করতে হবে। নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন হতে হবে, সেই দাবি নিয়ে আমরা আন্দোলন শুরু করেছি। সেই আন্দোলনের প্রেক্ষিতে যারা আমাদের সহযোগিতা রয়েছেন, তাদের সঙ্গে আমরা আলাপ-আলোচনা শুরু করেছি। এরই মধ্যে অনেকগুলো দলের সঙ্গে আমরা আলোচনা করেছি। আজকে কর্নেল অলি আহমেদ আমাদের সঙ্গে আলোচনা করতে এসেছেন। আজকের আলোচনা আমাদের শেষ নয়। আবার তার দলের অন্যান্য নেতাদের সঙ্গেও আলোচনা করবো।
লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এলডিপি) প্রেসিডেন্ট কর্নেল (অব.) ড. অলি আহমদের বলেন, আমরা যুগপৎ আন্দোলন করে যাচ্ছি, এ আন্দোলন ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য নয়, এ আন্দোলন মন্ত্রী হওয়ার জন্য নয়, এ আন্দোলন বাংলাদেশের ১৮ কোটি মানুষকে মুক্ত করার আন্দোলন।
তিনি বলেন, দ্রব্যমূল্যের যে ঊর্ধ্বগতি, মানুষ ন্যায় বিচার পাচ্ছি না ঘরে বাইরে কোথাও তারা শান্তিতে থাকতে পারছে না। রাজনৈতিক দলগুলো তাদের কর্মকাণ্ড স্বাভাবিকভাবে পরিচালনা করতে পারছে না। সাংবাদিকরাও লিখতে পারে না, কারণ আইন করে তাদের মুখ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে এজন্য দেশকে স্বাধীন করা হয়নি। এজন্য মুক্তিযুদ্ধ করিনি। মুক্তযুদ্ধের মূল লক্ষ্য ছিল প্রত্যেকটি মানুষ স্বাধীনভাবে বসবাস করবে এবং তারা ভোট দিয়ে নিজেদের প্রতিনিধি নির্বাচিত করবে। নির্বাচিত প্রতিনিধিরা দেশ পরিচালনা করবে।
আওয়ামী লীগকে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, তারা চাচ্ছে যে কোনোভাবে একটি নির্বাচন করার জন্য। আমরা চাই এ নির্বাচনে সবার অংশগ্রহণ থাকবে। অবাধ ও সুষ্ঠু হবে এবং তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে হবে। এ দাবিগুলো নিয়ে ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগও আন্দোলন করছে, এটি নতুন কোনো বিষয় নয়। এটি আওয়ামী লীগের পক্ষে অস্বীকার করার সুযোগ নেই কারণ একদিন তাদের দাবিও এটিই ছিল। আমরা চাই প্রত্যেকে তাদের নিজের ভোট দিয়ে প্রতিনিধি নির্বাচিত করবে। আগামীতে তাদের নির্বাচিত প্রতিনিধিরা এদেশ পরিচালনা করবে। তাহলে অর্থনৈতিকভাবে মুক্তি পাবে দেশ, সামাজিকভাবে আমরা আমাদের কর্মকাণ্ড পরিচালনা করতে পারব। মানুষ ন্যায় বিচার পাবে, এক বিচার শাসন থেকে আমরা মুক্ত পাবো।
বৈঠকে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান উপস্থিত ছিলেন।