
ঠাকুরগাঁও ভূমি অফিসে পিয়নের বিরুদ্ধে অর্থ আত্মসাৎ ও হুমকির অভিযোগ
ঠাকুরগাঁও সদর ভূমি অফিসে কর্মরত থাকাকালীন পিয়ন মহেশ চন্দ্র রায়ের বিরুদ্ধে খারিজের নামে ঘুষ গ্রহণ, অর্থ আত্মসাৎ ও সেবাগ্রহীতাদের হয়রানির অভিযোগ উঠেছে। ভুক্তভোগী মো. লুৎফর রহমান এই অভিযোগ তুলে সম্প্রতি ঠাকুরগাঁও জেলা প্রশাসকের কাছে লিখিত আবেদন করেছেন। লুৎফর রহমান বলেন, গত বছরের ২ অক্টোবর তিনি জমি খারিজের প্রয়োজনে সদর ভূমি অফিসে যান। সেখানে পিয়ন মহেশ খারিজ প্রক্রিয়ার জন্য সরকারি নির্ধারিত ফি ছাড়াও অতিরিক্ত দুই লাখ টাকা দাবি করেন। বাধ্য হয়ে সেই টাকা প্রদান করেন তিনি। তবে পরে জানতে পারেন, অর্থটি সরকারি কোষাগারে জমা না দিয়ে পিয়ন মহেশ আত্মসাৎ করেছেন। এরপর খারিজ কাগজ হাতে পেয়ে লুৎফর রহমান দেখতে পান, সেখানে ভুল খতিয়ান নম্বর উল্লেখ করা হয়েছে। বিষয়টি জানালে মহেশ তা সংশোধনের জন্য আরও এক লাখ টাকা চান। সংসারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ট্রাক্টর বন্ধক রেখে সেই টাকাও দিতে বাধ্য হন তিনি। কিন্তু এরপরও সংশোধিত কাগজ বুঝিয়ে দেওয়া হয়নি। বরং বিভিন্ন অজুহাতে সময়ক্ষেপণ করতে থাকেন মহেশ। লুৎফর রহমান অভিযোগ করেন, সংশোধিত খারিজ কাগজ চাইলে মহেশ হুমকি দিতে শুরু করেন। তিনি নিজেকে জেলা প্রশাসকের অধীনে উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা এবং স্থানীয় সাবেক সাংসদ রমেশ চন্দ্র সেনের আত্মীয় পরিচয় দিয়ে মিথ্যা মামলার ভয় দেখান। এতে মানসিকভাবে ভেঙে পড়েন লুৎফর ও তাঁর পরিবার। খারিজের কাজ শেষ না হওয়ায় সময়মতো ট্রাক্টর উদ্ধার করতে পারেননি লুৎফর। ফলে আরও দুই লাখ টাকা গুনতে হয় জরিমানার নামে। সব মিলিয়ে আট লাখ টাকার মতো আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়েছেন তিনি। লুৎফর রহমান তাঁর অভিযোগপত্রে আরও দাবি করেন, শুধু তিনিই নন—পিয়ন মহেশ সদর ভূমি অফিসে কর্মরত থাকাকালীন বহু সেবাগ্রহীতার কাছ থেকেই খারিজসহ বিভিন্ন কাজে ঘুষ নিয়েছেন। ঘুষ না দিলে কোনো ফাইলই উঁচু কর্মকর্তা পর্যন্ত পৌঁছাত না। স্থানীয় প্রভাবশালী মহলের আশ্রয়-প্রশ্রয়ে তিনি এসব অপকর্ম করে আসছিলেন।
অভিযোগে বলা হয়, অল্প সময়ের মধ্যে মহেশ ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের নামে শহরের বিভিন্ন এলাকায় জমি ও অন্যান্য সম্পদ গড়ে উঠেছে। ব্যাংক হিসাবেও রয়েছে অস্বাভাবিক পরিমাণ টাকা। অভিযোগে আরও বলা হয়, শহরের একাধিক ভূমিদস্যুর সঙ্গে তাঁর সখ্য রয়েছে। খাসজমি দখলে সহায়তা করে মোটা অঙ্কের অর্থ গ্রহণ করেন তিনি। এতে ওইসব এলাকায় প্রায়ই দাঙ্গা-হাঙ্গামা ও হত্যার ঘটনাও ঘটছে। লুৎফর রহমান বলেন, “ভবিষ্যতের কথা ভেবে ঘুষ দিয়েছিলাম, ভেবেছিলাম কাজটা অন্তত ঠিকঠাক হবে। এখন দেখছি, কাজ তো হয়নি—বরং পরিবার নিয়ে পথে বসেছি।”তিনি পিয়ন মহেশের বিরুদ্ধে সুষ্ঠু তদন্ত ও আইনি ব্যবস্থা গ্রহণের আহ্বান জানিয়েছেন। পাশাপাশি ভূমি অফিসের সার্বিক কার্যক্রমে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিতে প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন। অভিযোগের অনুলিপি পাঠানো হয়েছে ভূমি মন্ত্রণালয়, দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক), বিভাগীয় কমিশনার (রংপুর), সেনা ক্যাম্প (ঠাকুরগাঁও), সহকারী কমিশনার (ভূমি – হরিপুর) ও বাংলাদেশ ভূমি অফিসার কল্যাণ সমিতি (ঠাকুরগাঁও)-এর কাছে।