সোমবার - ২৩শে জুন, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ - ৯ই আষাঢ়, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ - ২৭শে জিলহজ, ১৪৪৬ হিজরি

ঠাকুরগাঁওয়ে রানীশংকৈলে প্রতিবন্ধী তরুণীকে ধর্ষণ, বিএনপি নেতার সালিসে ৬ হাজার টাকায় রফা!

ঠাকুরগাঁওয়ে রানীশংকৈলে প্রতিবন্ধী তরুণীকে ধর্ষণ, বিএনপি নেতার সালিসে ৬ হাজার টাকায় রফা!

 

ঠাকুরগাঁওয়ের রানীশংকৈলে এক প্রতিবন্ধী তরুণীকে ধর্ষণের অভিযোগ উঠেছে একরামুল মুন্সি (৪৮) নামে এক বৃদ্ধের বিরুদ্ধে। এ ঘটনায় ৬ হাজার টাকায় আপস মীমাংসা করার অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় এক বিএনপি নেতার বিরুদ্ধে। সম্প্রতি গত মঙ্গলবার (২০ মে) বিকেলে একরামুল মুন্সি নামে এক বৃদ্ধ ১০০ টাকার প্রলোভন দেখিয়ে এক প্রতিবন্ধী তরুণীকে ভুট্টা ক্ষেতে নিয়ে ধর্ষণ করেন বলে, অভিযোগ উঠেছে। অভিযুক্ত একরামুল মুন্সি ভেদালি গ্রামের মৃত আব্দুল হামিদের ছেলে। ঘটনার শিকার তরুণী জানান, গত ২০ মে মঙ্গলবার বিকেলে একরামুল মুন্সি তাকে ১০০ টাকা দেওয়ার কথা বলে, ভুট্টা ক্ষেতে নিয়ে যান। সেখানে তাকে জোরপূর্বক ধর্ষণ করা হয়। ধর্ষণের পর টাকা দিতে গেলে তরুণী চিৎকার শুরু করলে একরামুল মুন্সি দ্রুত পালিয়ে যান। এই পাশবিক ঘটনার বিচার চেয়ে বৃহস্পতিবার (২২ মে) সকালে ঠাকুরগাঁও আদালতে মামলা করতে গিয়েছিলেন ভুক্তভোগী তরুণীর বাবা, যিনি একজন ভ্যানচালক। তবে, অভিযোগ উঠেছে যে স্থানীয় রাতোর ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি আকতার হোসেন তাকে আদালত থেকে ফিরিয়ে এনে জোরপূর্বক ৬ হাজার টাকায় বিষয়টি আপস করে দিয়েছেন।
ভুক্তভোগী তরুণীর বাবা জানান, স্থানীয় সালিসে বিচার না পেয়ে তিনি আদালতে গিয়েছিলেন। কিন্তু আকতার হোসেনের চাপে তার ভাই তাকে আদালত থেকে ফিরিয়ে আনেন এবং বৃহস্পতিবার রাতে আবারও সালিস বসানো হয়। এই সালিসে তাকে ৪০ হাজার টাকার বিনিময়ে আপস করতে বাধ্য করা হয়।
ভুক্তভোগী পরিবার ন্যায়বিচার না পেয়ে সালিস থেকে ফিরে এসেছেন বলে জানান। স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ভ্যানচালক পরিবারটিকে সহজ সরল পেয়ে বিএনপির কতিপয় নেতা ঘটনাটি ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করছেন। শোনা যাচ্ছে, তারা একরামুল মুন্সির কাছ থেকে মোটা অঙ্কের টাকা নিয়েছেন।
সালিসে উপস্থিত নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন জানান, মেয়ের পরিবার চেয়েছিল অভিযুক্ত একরামুল মুন্সিকে জুতার মালা পরিয়ে পুরো গ্রাম ঘোরানো হোক অথবা তরুণীকে বিয়ে করুক। কিন্তু সালিসে এসব সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়নি। ৬ হাজার টাকার বিনিময়ে মীমাংসার বিষয়টি স্বীকার করলেও রাতোর ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি আকতার হোসেনের বক্তব্য অসঙ্গতিপূর্ণ। তিনি বলেন, ‘মেয়েটি ধর্ষণ হয়েছে এমন কথা জানি না। বলেছে মেয়েটার হাত ধরেছিল। তাই মীমাংসা করে দিয়েছি।’ পরদিন তরুণীর বাবাকে কেন আদালত থেকে ফিরিয়ে আনলেন, এমন প্রশ্নের কোনো সঠিক সদুত্তর তিনি দিতে পারেননি। এদিকে, অভিযুক্ত একরামুল মুন্সিকে তার বাড়িতে পাওয়া যায়নি। তার মেয়ে রোজিনা আক্তার জানান, তার বাবা বাড়িতে নেই এবং মোবাইল ফোন ব্যবহার করেন না। ধর্ষণের ঘটনার বিষয়ে তিনি জোর গলায় দাবি করেন যে তরুণী স্বেচ্ছায় ভুট্টা ক্ষেতে গিয়েছিলেন এবং মেয়েটিকে টাকা দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। রানীশংকৈল থানার ওসি আরশেদুল হক জানান, এ বিষয়ে থানায় কেউ জানায়নি। তিনি বলেন, অভিযোগ পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে এবং তিনি নিজেই বিষয়টি খোঁজ-খবর নেবেন।

Share on facebook
Facebook
Share on twitter
Twitter
Share on linkedin
LinkedIn