রবিবার - ১৯শে জানুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ - ৫ই মাঘ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ - ১৯শে রজব, ১৪৪৬ হিজরি

জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে হুমকির মুখে বাংলাদেশ

বিদেশি গাছের আগ্রাসন দেশি প্রজাতির গাছ কমেছে বলে জানিয়েছে সবুজ আন্দোলন। তারা জানায়, একসময় বাংলাদেশে পাঁচ হাজার প্রজাতির দেশীয় গাছ থাকলেও বর্তমানে তা কমে তিন হাজার ৮২৮ প্রজাতিতে এসে দাঁড়িয়েছে। এর অন্যতম প্রধান কারণ বিদেশি গাছের আমদানি ও অপরিকল্পিত সবুজায়ন।
আজ ১ সেপ্টেম্বর বিদেশি প্রজাতির গাছের আগ্রাসনে দেশীয় প্রজাতির গাছের বিলুপ্তি শীর্ষক আলোচনা সভায় পরিবেশ বিষয়ক সংগঠনটির পক্ষ থেকে সরকারের প্রতি এসব সুপারিশ জানানো হয়। পরিবেশ আন্দোলনের ৬ষ্ঠ প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে জাতীয় প্রেস ক্লাবের জহুর হোসেন চৌধুরী হলে এ আলোচনা সভা হয়।
সভায় সভাপতির বক্তব্যে সবুজ আন্দোলনের প্রতিষ্ঠাতা ও চেয়ারম্যান বাপ্পি সরদার বলেন, সবুজ শ্যামল বাংলাদেশ জলবায়ু পরিবর্তনের নেতিবাচক প্রভাবের ফলে হুমকির মুখে পড়ছে। একদিকে উন্নত রাষ্ট্রগুলি মাত্রাতিরিক্ত কার্বন নিঃসরণ করছে, অন্যদিকে বাংলাদেশে উন্নয়নের নামে গাছপালাকে নির্বিচারে কর্তন করা হচ্ছে। স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশ পাঁচ হাজার প্রজাতির দেশীয় কাজ থাকলেও বর্তমানে তা কমে তিন হাজার ৮২৮ প্রজাতিতে এসে দাঁড়িয়েছে। এর অন্যতম প্রধান কারণ বিদেশি গাছ আমদানি এবং অপরিকল্পিত সবুজায়ন।
বিদেশ থেকে দ্রুত বর্ধনশীল বিভিন্ন প্রজাতির বৃক্ষ আমদানি করা হচ্ছে জানিয়ে তিনি আরও বলেন, এসব বৃক্ষ জ্বালানি সংকট নিরসনে ভূমিকা রাখছে ঠিকই, কিন্তু ক্রমাগত মাটি ও পরিবেশের সর্বনাশ করে চলছে। বিদেশি প্রজাতির বিভিন্ন গাছের জন্য প্রচুর জায়গার দরকার হয়। এগুলো দেশি গাছের তুলনায় অনেক বেশি পরিমাণে পুষ্টি ও পানি শোষণ করে। তাই এসব বৃক্ষের আশপাশে দেশীয় প্রজাতির বৃক্ষ বাঁচতে পারে না। তাই বিদেশি প্রজাতির গাছের আগ্রাসন রোধ ও দেশীয় প্রজাতির গাছের প্রজনন বৃদ্ধিতে প্রয়োজন টেকসই পরিকল্পনা।
তাই বিদেশি গাছের আগ্রাসন রোধে ও দেশীয় প্রজাতির প্রজনন বৃদ্ধিতে পাঁচ প্রস্তাবনা দিয়েছে সবুজ আন্দোলন নামের সংগঠনটি। প্রস্তাবনা গুলো হলো:

১. বিদেশি প্রজাতির গাছ আমদানির ক্ষেত্রে কোন গাছ আমদানি করা যাবে তা উদ্ভিদ বিজ্ঞানীদের দ্বারা তালিকা করা এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনা অনুযায়ী এল সি খোলার ক্ষেত্রে কয়েকজন পরিবেশবিদের সুপারিশ নেওয়া।
২. দেশের সব নার্সারিতে দেশীয় গাছপালা সংরক্ষণে বাধ্য করা এবং বাৎসরিক জেলা ও উপজেলার বন মেলায় নার্সারি মালিকদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থার পাশাপাশি সহজ শর্তে ঋণ সুবিধা দেওয়া।

৩. সারাদেশে ক্ষতিকর বিদেশি প্রজাতির কাজ কর্তনের উদ্যোগ গ্রহণ এবং সরকারিভাবে বিনামূল্যে বন বিভাগ থেকে দেশীয় গাছ বিতরণের উদ্যোগ্য গ্রহণ করা।

৪. দেশীয় ফলমূল ও বনজ বৃক্ষের মাদার ট্রি থেকে বীজ উৎপাদনে গবেষণা জোরদারের পাশাপাশি রাষ্ট্রীয়ভাবে সব উদ্ভিদ ও প্রাণিবিজ্ঞানীদের সমন্বয়ে জাতীয় গবেষণা পরিষদ তৈরি করা।

৫. সরকারের পক্ষ থেকে কেন্দ্রীয় ও জেলা পর্যায়ে পরিবেশবাদী সব সংগঠনের সমন্বয়ে দেশীয় প্রজাতির বৃক্ষরোপণের উদ্যোগ গ্রহণের পাশাপাশি আগামী এক বছরে দুই কোটি দেশীয় প্রজাতির বৃক্ষরোপণ প্রকল্প বাস্তবায়ন করা।
সবুজ আন্দোলনের পরিচালক অভিনেতা উদয় খান ও কার্যনির্বাহী পরিষদের নারী ও শিশু বিষয়ক সম্পাদক সাহিন আরা সুলতানার সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক মো. জসীম উদ্দিন, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় অধ্যাপক নগর পরিকল্পনাবিদ আদিল মুহাম্মদ খান, বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্লেনার্সের সাধারণ সম্পাদক শেখ মুহাম্মদ মেহেদী আহসান।
এছাড়া বিশেষ অতিথি হিসেবে আরও উপস্থিত ছিলেন সবুজ আন্দোলনের উপদেষ্টা ও মাতৃভূমি গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ইঞ্জিনিয়ার মো. মাঈন উদ্দিন মিয়া, সবুজ আন্দোলনের উপদেষ্টা অর্থনৈতিক বিশ্লেষক মেজবাউদ্দিন মো. জীবন চৌধুরী, সবুজ আন্দোলনের মহাসচিব মহসিন সিকদার পাভেল, অর্থ পরিচালক নিলুফার ইয়াসমিন রুপা, পরিচালক অধ্যক্ষ নাদিয়া নূর তনু, এনামুল হক রনি প্রমুখ।
আলোচনা সভা শেষে বন্যপ্রাণী ও পরিবেশ সংরক্ষণে ভূমিকা রাখায় চারজনের হাতে সম্মাননা স্মারক তুলে দেওয়া হয়।

Share on facebook
Facebook
Share on twitter
Twitter
Share on linkedin
LinkedIn