শনিবার - ২২শে মার্চ, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ - ৮ই চৈত্র, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ - ২২শে রমজান, ১৪৪৬ হিজরি

জলঢাকা সাব-রেজিস্টিশন অফিসে চরম দূর্নীতি।

জলঢাকা সাব-রেজিস্টিশন অফিসে চরম দূর্নীতি।

 

 

নীলফামারীর জলঢাকা সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে ঘুষ ও দুর্নীতি চরম আকার ধারণ করেছে। সরকারি এই কার্যালয়ের কার্যক্রম নিয়ে সাধারণ জনগণের অভিযোগের শেষ নেই। জমি রেজিস্ট্রেশন ও দলিল সংক্রান্ত কাজ সম্পাদনের জন্য জনগণকে নিয়ম বহির্ভূতভাবে অতিরিক্ত অর্থ প্রদান করতে বাধ্য করা হচ্ছে।সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, সাব-রেজিস্ট্রি অফিসের ডেলিভারি কক্ষ ‘টি সি’ শাখায় মোজাম্মেল হক নামে একজন বসেন। তিনি প্রত্যেক দলিলের জন্য ১১০০ থেকে ১২০০ টাকা পর্যন্ত আদায় করেন, যেখানে সরকারি বিধি অনুযায়ী সর্বোচ্চ ২৬০ টাকা নেওয়ার নিয়ম রয়েছে। মসজিদের জন্য ৫০-১০০ টাকা বাদ দিয়ে অবশিষ্ট টাকা একটি সিন্ডিকেটের মধ্যে ভাগ-বাটোয়ারা হয়। সেদিন মোট ৫২টি দলিল সম্পাদিত হয়, যা থেকে মোটা অঙ্কের ঘুষ আদায় করা হয়েছে।এ বিষয়ে মোজাম্মেল হকের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘লেখক সমিতির অনুমতিক্রমে আমি ১১০০ থেকে ১২০০ টাকা পর্যন্ত নিয়ে জমা দিয়ে দেই। পরে এ টাকা কোথায় যায়, কী হয়, তা জানি না।’ এছাড়া ফিঙ্গার টিপসই দেওয়ার জন্য ২০ টাকা করে নেওয়া হয় বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। সংবাদকর্মীরা তথ্য সংগ্রহের সময় বাধার সম্মুখীন হন এবং সিন্ডিকেট সদস্যরা তাদের টাকা দিয়ে ম্যানেজ করার চেষ্টা করে।সিন্ডিকেটের প্রভাবে জমির বিভিন্ন ত্রুটি দেখিয়ে দলিল রেজিস্ট্রি করা হয় এবং এর মাধ্যমে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নেওয়া হয়। দলিলের নকল তুলতে গেলে সরকারি নির্ধারিত ফির দ্বিগুণ টাকা নেওয়া হয় বলেও অভিযোগ করেছেন ভুক্তভোগীরা। এক ভুক্তভোগী জানান, ‘গতকাল সারাদিন ঘুরেও দলিল হয়নি। আজও সম্ভব হতো না, যদি সাংবাদিকরা না আসতেন। টাকা দিলেই দ্রুত কাজ হয়।’দলিল সম্পাদনের ক্ষেত্রে কিছু অসাধু দলিল লেখকদের যোগসাজশে মোটা অঙ্কের ঘুষ লেনদেন হয়, যা এখন নিয়মে পরিণত হয়েছে। অভিযোগ রয়েছে, জলঢাকা সাব-রেজিস্ট্রি অফিসের দুর্নীতির মূল হোতা হলো নকলনবিস অ্যাসোসিয়েশন ও স্থানীয় দলিল লেখকদের একটি চক্র। সাধারণ কৃষকদের জমি কেনাবেচায় সরকারের নির্ধারিত ফি এবং দলিল লেখকদের পারিশ্রমিকের বাইরে কোনো অর্থ নেওয়ার নিয়ম নেই। কিন্তু বাস্তবে দলিল লেখক সমিতি দলিল প্রতি পাঁচ থেকে দশ হাজার টাকা পর্যন্ত অতিরিক্ত গ্রহণ করছে।এ ব্যাপারে জলঢাকা সাব-রেজিস্ট্রার কর্মকর্তা মো. লুৎফর রহমান বলেন, ‘আমি এ অফিসে নতুন এসেছি, তাই বিস্তারিত জানি না। তবে এন ফিসের জন্য ৩৬০ টাকা পর্যন্ত নেওয়া যাবে। এর বেশি নেওয়ার সুযোগ নেই। টিপসইয়ের সময় যদি কেউ খুশি হয়ে টাকা দেয়, তাহলে নিতে পারে, কিন্তু জোরপূর্বক টাকা নেওয়ার কোনো নিয়ম নেই।’জলঢাকাবাসী এ দুর্নীতির বিরুদ্ধে প্রশাসনের দ্রুত হস্তক্ষেপ ও কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন।

Share on facebook
Facebook
Share on twitter
Twitter
Share on linkedin
LinkedIn