
চট্টগ্রামের হাজারী গলিস্থ পিয়াসী মার্কেটে স্বর্ণের বার ছিনতাইয়ের ঘটনায় ৫ ছিনতাইকারীকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
বুধবার (৯ আগস্ট)ব্রাহ্মণবাড়ীয়াসহ বিভিন্ন জায়গায় অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেফতার করে।এসময় ছিনতাইকৃত ১৪ টি স্বর্ণের বারের মধ্যে ৬ টি বার এবং ৬ লক্ষ ৩০ হাজার টাকা উদ্ধা করে পুলিশ।
গ্রেফতারকৃতা হলেন, ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার প্রবীর বণিক (৪৪) ও একই জেলার জয়ন্ত বণিক (৪৮) ও তার স্ত্রী শ্রাবণী বণিক (৩৪)। তারা বর্তমানে হাজারী লেইনে থাকে এবং চট্টগ্রাম জেলার আব্দুর রউফ (৫২), চট্টগ্রাম জেলার মোঃ মাঈনুদ্দীন হাসান তুষার (৩৮)।
পুলিশ সুত্রে জানা গেছে, বনলতা কাটিং সেন্টার নামক স্বর্ণালংকার তৈরীর কারখানার ম্যানেজার কনক ধর তার প্রতিষ্ঠানের মালিকের নির্দেশে একটি কাপড়ের শপিং ব্যাগের ভিতর ১৪টি স্বর্ণের বার ( ১৪০ ভরি) নিয়ে রিক্সা যোগে গরীবুল্লাহ শাহ মাজার এলাকায় যাওয়ার পথে গত (৬ আগস্ট) ভোর অনুমান ৪.২৫ মিনিটের সময় কোতোয়ালী থানাধীন আন্দরকিল্লা রোডস্থ হাজারী গলি সংলগ্ন বনফুল মিষ্টি দোকানের সামনে রাস্তার উপর পৌঁছামাত্রই অজ্ঞাতনামা ৪ জন উল্লেখিত আসামী তার রিক্সার সামনে এসে তাকে মারধরের ভয়ভীতি প্রদর্শন করে।
সেসময় তার সাঙ্গে থাকা ১টি কাপড়ের শপিং ব্যাগের ভেতর থাকা ১৪০ ভরি ওজনের ১৪টি স্বর্ণের বার জোরপূর্বক নিয়ে লালদিঘীর পাড়ের দিকে দৌঁড় দিয়ে দিকবিদিক পালিয়ে যায় আসামীরা।
পুলিশ জানান, ঘটনার পূর্ববর্তীতে বনলতা কাটিং সেন্টার নামক স্বর্ণালংকার তৈরীর কারখানার ম্যানেজার কনক ধর বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা ৪ জনকে আসামী করে কোতোয়ালী থানার মামলা দায়ের করেন।
মামলার তদন্তভার এসআই মোঃ মেহেদী হাসান অজ্ঞাতনামা আসামী সনাক্তপূর্বক গ্রেফতার ও লুন্ঠিত স্বর্ণের বার উদ্ধারে পুলিশ কমিশনার নির্দেশে ডিসি (দক্ষিণ) ও এডিসি (দক্ষিণ), সিএমপি, চট্টগ্রাম সার্বিক তত্ত্বাবধানে এসি (কোতোয়ালী জোন), সিএমপি, চট্টগ্রামের নেতৃত্বে একাধিক চৌকস টিম গঠন করে।
তাৎক্ষনিক উর্দ্ধতন কর্মকর্তাবৃন্দ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে বিভিন্ন দিক নির্দেশনা প্রদান করে। অতনু চক্রবর্তী, এসি (কোতোয়ালী জোন), সিএমপি, চট্টগ্রামের নেতৃত্বে গঠিত একাধিক চৌকস টিম ঘটনাস্থল ও আশেপাশের সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজ পর্যালোচনা ও কল ডিটেলস এ্যানালাইসিস এবং বিশ্বস্থ গোপন সূত্রে প্রাপ্ত সংবাদের ভিত্তিতে ঘটনার মূল পরিকল্পনাকারী আসামী জয়ন্ত বনিককে সনাক্ত করে প্রথমে (৮ আগস্ট) ব্রাহ্মণবাড়ীয়া জেলার সদর থানা এলাকা থেকে গ্রেফতার করে।
আটকের পর জিজ্ঞাসাবাদে সে ঘটনার কথা স্বীকার করে এবং তার সহযোগী আসামীদের নাম ঠিকানা প্রকাশ করে। তার দেয়া তথ্যমতে আরেক আসামী প্রবীর বনিককে চট্টগ্রাম কোতোয়ালী থানাধীন ঘাটফরহাদবেগ এলাকা হতে গ্রেফতার করে পুলিশ। আসামী জয়ন্ত এবং প্রবীরের দেয়া তথ্য অনুসারে আসামী আব্দুর রউফ এবং মোঃ মাঈনুদ্দীন হাসান তুষার বাকলিয়া থানাধীন এক্সেস রোড এলাকা হতে গ্রেফতার করে পুলিশ।
ধৃত আসামী আব্দুর রউফ এবং মোঃ মাঈনুদ্দীন হাসান তুষার জিজ্ঞাসাবাদে স্বীকার করে লুন্ঠিত স্বর্ণের বারগুলো আসামী জয়ন্ত বনিক এবং প্রবীর বণিকের কাছে আছে।
পরবর্তীতে ধৃত আসামী জয়ন্ত বনিক এবং প্রবীর বণিকদেরকে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ করলে তাদের কাছে স্বর্ণের বার থাকার কথা স্বীকার করে।
পুলিশ জানায়, আসামীরা স্বর্ণের বার এবং স্বর্ণের বার বিক্রয়ের কিছু টাকা জয়ন্ত বণিকের স্ত্রী শ্রাবণী বণিক এর কাছে লুকিয়ে রাখে। আসামী জয়ন্ত বণিকের মোবাইলে অটো কল রেকর্ডিংয়ে তার স্ত্রী শ্রাবণী বণিকের সাথে লুন্ঠিত স্বর্ণের বার লুকিয়ে রাখার এবং আসামীরা পলাতক থাকার ব্যাপারে আলোচনা ও পরিকল্পনার তথ্য পায় পুলিশ।
পুলিশের আভিযানিক দল তাৎক্ষনিক আসামী জয়ন্ত বণিক এবং প্রবীর বণিকদেরকে নিয়ে কোতোয়ালী থানাধীন হাজারী গলিস্থ এনডিসি আতিক অর্কিড প্লাজার ফ্ল্যাটে অভিযান পরিচালনা করে জয়ন্ত বণিকের স্ত্রী শ্রাবণী বণিককে আটক করে।
এসময় তার কাছ থেকে ৬ পিস স্বর্ণের বার এবং স্বর্ণের বার বিক্রয়লব্ধ ৬ লক্ষ ৩০ হাজার টাকা উদ্ধারপূর্বক জব্দ করে পুলিশ। ধৃত আসামীরা একটি সংঘবদ্ধ ছিনতাই চক্রের সদস্য বলে জানা পুলিশ।
পুলিশ আরোও জানান, আসামী জয়ন্ত বণিক স্বর্ণ ব্যবসার সুবাদে হাজারী গলির স্বর্ণ ব্যবসায়ীদের গতিবিধি এবং স্বর্ণালংকার ক্রয় বিক্রয় সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করে এবং পরবর্তীতে প্রবীর বণিক, আব্দুর রউফ, মোঃ মাঈনুদ্দীন হাসান তুষার সহ আরো কয়েকজনের মাধ্যমে স্বর্ণ ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটায়।
গ্রেফতারকৃত আসামী আব্দুর রউফের বিরুদ্ধে সিএমপির কোতোয়ালী থানায় মাদকদ্রব্য আইনে ২টি মামলা আছে বলে জানায় পুলিশ।