বৃহস্পতিবার - ১৫ই মে, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ - ১লা জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ - ১৭ই জিলকদ, ১৪৪৬ হিজরি

চিলমারীতে পানি বৃদ্ধির কারণে পানিবন্দি প্রায় ৩ হাজার পরিবার

কুড়িগ্রামের চিলমারীতে ব্রহ্মপুত্র নদের পানি বৃদ্ধির কারণে সমতল এলাকাসহ চরাঞ্চলের প্রায় তিন হাজার ৪৫০ পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। তবে পানিবন্দি হলে ও এখনো পর্যন্ত বাড়িতে পানি ওঠার কোন খবর পাওয়া যায়নি। তবে পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকলে আগামী কয়েক দিনের মধ্যে নিম্নঅঞ্চলের বাড়িঘরে পানি উঠতে শুরু করবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এরই মধ্যে গতকাল সন্ধ্যা থেকে ব্রহ্মপুত্রের পানি কমতে শুরু করেছে বলে জানা গেছে। তবে চলমান পরিস্থিতিতে প্রায় ৪৭৩ টি পরিবার ভাঙ্গনের কবলে পড়েছেন এবং পানিবন্দি হয়েছেন প্রায় তিন হাজার ৪৫০ পরিবার বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যানরা। কয়েক দিনের মধ্যে নদের তীব্র ভাঙ্গনে একটি স্কুল, একটি কলেজ ও একটি মাদ্রাসা নদের গর্ভে বিলিন হয়ে গেছে বলে খবর পাওয়া গেছে। ঈদের আগে পানি কমতে পারে বলে বন্যা পূর্বাভাস ও বন্যা সতর্কীকরণ কেন্দ্রের বরাত দিয়ে জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ আব্দুল্লাহ আল মামুন জানিয়েছেন, পূর্বাভাস অনুযায়ী আগামী ২৩ জুন পর্যন্ত নদ-নদীর পানি কিচু বৃদ্ধির সম্ভাবনা রয়েছেন। তবে আগামী ২৪-২৫ জুন থেকে পানি কমতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। (পাউবোর) তথ্য অনুযায়ী ব্রহ্মপুত্রের পানি গতকাল শনিবার (২৪ জুন) সন্ধ্যা থেকে ১০ সেমি কমে আজ সকাল ৯টায় চিলমারী পয়েন্টে বিপদ সীমার ৯০ সেমি নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে বলে জানিয়েছেন চিলমারী পয়েন্টের গেজ রিডার মোঃ জোবাইর হোসেন। কয়েকদিনের বৃষ্টিপাত ও উজান থেকে নেমে আসা পানির ঢলে উপজেলার রানীগঞ্জ, নয়ারহাট, অষ্টমীরচর, রমনা ও চিলমারী ইউনিয়নে দেখা দিয়েছে নদী ভাঙ্গন। সংশ্লিষ্ট ইউনিয়নের চেয়ারম্যানদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, উপজেলার অষ্টমীরচর ইউনিয়নের চর মুদাফৎ, ছালিপাড়া, মুদাফৎ কালিকাপুরের আংশিক এলাকা, নটারকান্দি, খোদ্দবাঁশ পাতার, খামার বাঁশপাতার এলাকায় পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন প্রায় দেড় হাজার পরিবার। এর মধ্যে ভাঙ্গনের স্বীকার হয়েছেন চর মুদাফৎ, নটারকান্দি ও মুদাফৎ কালিকাপুরের আংশিক এলাকায় প্রায় শতাধিক পরিবার। পানিবন্দি হয়েছেন, নয়ারহাট ইউনিয়নের উত্তর খাউরিয়া, নাইয়ারচর, গয়নার পটল ও বজরা দিয়ার খাতার ২৫০ পরিবার ও ভাঙ্গনের কবলে পড়েছেন ও গৃহহীন হয়েছেন প্রায় ৮০টি পরিবার। এরই মধ্যে ঐ ইউনিয়নের উত্তর খাউরিয়ার ফোরকানিয়া মাদ্রাসা ও দক্ষিণ খাউরিয়া স্কুল অ্যান্ড কলেজের পরিত্যাক্ত ৭৪ লাখ টাকার একটি ভবন নদে গর্ভে বিলীন হয়ে গেছেন। রমনা মডেল ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মোঃ গোলাম আশেক আঁকা জানিয়েছেন, তার ইউনিয়নে দক্ষিণ পাত্রখাতা এলাকায় ব্রহ্মপুত্র নদের তীরে কিছুটা ভাঙ্গন দেখা দিয়েছে। তবে এই ইউনিয়নের পাত্রখাতা, জোড়গাছ, মাঝিপাড়া, সোনারিপাড়া, টোনগ্রামে প্রায় ১ হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। ব্রহ্মপুত্র থেকে বল্কহেড দিয়ে বালু উত্তোলনের ফলে চিলমারী ইউনিয়নের ১শ পরিবার ভাঙ্গনের হুমকিতে রয়েছেন বলে জানা গেছে। অপরদিকে ওই ইউনিয়নের মানুষমারা, আমতলা, শাখাহাতী, জুগনিদহ, উত্তর শাখাহাতী, পশ্চিম গাজিরপাড়া এলাকায় প্রায় ৭শ পরিবার পানিবন্দি অবস্থায় রয়েছেন বলে খবর পাওয়া গেছে। রানীগঞ্জ ইউনিয়নের চর বড়ভিটা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ব্রহ্মপুত্রের গর্ভে চলে গেছে বলে জানিয়েছেন, ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মোঃ মঞ্জুরুল ইসলাম মঞ্জু। তিনি বলেন, রানীগঞ্জ ইউনিয়নের চর বড়ভিটায় নদী ভাঙ্গনের স্বীকার হয়েছেন প্রায় তিনশ পরিবার। পানি বাড়ায় ঐ ইউনিয়নের চর বড়ভিটা, চর উদনা ও নয়াবশ এলাকার প্রায় ১ হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়েছেন বলে জানা গেছে। তবে কিছুটা স্বস্তিতে রয়েছেন থানাহাট ইউনিয়নের বাসিন্দারা। ব্রহ্মপুত্রের পানি বিপদ সীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় শুধু সমতল এলাকায় পানি প্রবেশ করলে ও পানি বন্দির সংখ্যা খুবই কম বলে নিশ্চিত করেছেন, থানাহাট ইউপি চেয়ারম্যান মোঃ আব্দুর রাজ্জাক মিলন। উপজেলা দুর্যোগ ও ত্রাণ শাখা জানিয়েছেন, সার্বিক অবস্থার ওপর সতর্ক ও নজরদারীতে রাখা হচ্ছে। চলমান পরিস্থিতিতে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবার গুলোর মাঝে ত্রাণ সহায়তা বিতরণ শুরু করা হয়েছে। চিলমারী উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ মাহবুবুর রহমান জানান, বন্যা মোকাবিলা করতে সব ধরনের প্রস্তুতি রয়েছেন। পানিবন্দি পরিবার গুলোর খোঁজ-খবর নেয়া হচ্ছে এবং সংশ্লিষ্ট চেয়ারম্যান ও মেম্বারদের কে পানি বন্দিদের তালিকা করতে বলা হয়েছে। সেই সঙ্গে আমাদের কাছে পর্যাপ্ত পরিমাণ খাবার ও রয়েছেন। পর্যায়ক্রমে সে সমস্ত শুকনো খাবার ও ত্রাণসামগ্রী বিতরণ শুরু করেছি বলে জানিয়েছেন।

Share on facebook
Facebook
Share on twitter
Twitter
Share on linkedin
LinkedIn