
দেশ ও জাতির বৃহত্তর স্বার্থে চট্টগ্রামে প্রবাস থেকে আগত রেমিটেন্স যোদ্ধা প্রবাসীদেরকে এনআইডি কার্ডের অজুহাত দেখিয়ে চট্টগ্রাম চান্দগাঁও (পাঁচলাইশ) আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসের উপ-পরিচালক তারেক সালমান এমআরপি পাসপোর্ট ইস্যু করার ক্ষেত্রে অনিহা ও বিভিন্ন পন্থায় প্রতিদিন দালাল সিন্ডিকেটের মাধ্যমে ১০ লাখ টাকার ঘুষ বানিজ্যের অভিযোগ উঠেছে।
বাংলাদেশের অর্থনীতির অন্যতম যোগানদাতা প্রবাসে রেমিটেন্স যোদ্ধারা বিভিন্ন দেশে বছরের পর বছর গায়ের শ্রম দিয়ে বাংলাদেশে অর্থ পাটাচ্ছে। তারা বিদেশে অবস্থান করার দরুন অনেকেই বাংলাদেশের ন্যাশনাল আইডি কার্ড (এনআইডি) সংগ্রহ করতে পারে নাই। বর্তমান সরকার এমরআরপি পাসপোর্টকে নিরউৎসাহিত করে বিশ্বের উন্নত দেশের সাথে তাল মিলিয়ে ই-পাসপোর্ট প্রদান করে যাচ্ছে।
ই-পাসপোর্ট সংগ্রহ করতে হলে নিজের এবং পরিবারের এনআইডি কার্ড জমা করা বাধ্যতা মূলক। এনআইডি কার্ড ব্যতিত ই-পাসপোর্ট পাওয়ার কোনভাবে সম্ভব নয়। কারণ এই পাসপোর্ট তৈয়ার করার ক্ষেত্রে যে সফ্টওয়ার প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়েছে তাতে এনআইডি কার্ড বাধ্যতা মূলক। এনআইডি কার্ডের অনুকূল ব্যতীত ই-পাসপোর্ট ইস্যু করতে পারে না পাসপোর্ট কতৃপক্ষ।
যেসব প্রবাসীরা বিদেশ থেকে এসে পুনরায় বিদেশে ফেরত যেতে হলে পাসপোর্টের মেয়াদ থাকতে হবে। মেয়াদের মধ্যে যথাসময়ে যথানিয়মে বিদেশস্থ কর্মস্থলে ফেরত যেতে হবে। যখন মেয়াদউত্তির্ণ্য পাসপোর্ট দিয়ে বিদেশে ফেরত যাওয়ার কোনভাবে সম্ভব নয় তখন এমআরপি পাসপোর্টের জন্য আবেদন নিয়ে চান্দগাওঁ (পাঁচলাইশ) পাসপোর্ট অফিসে গেলে প্রতিনিয়ত বিড়ম্বনার শিকার হতে হচ্ছে।
এমআরপি পাসপোর্টের বদৌলতে আরেকটি এমআরপি পাসপোর্ট ইস্যু করতে হলে যেসব শর্ত দেওয়া হয়, সব শর্ত মেনে পাসপোর্টের জন্য আবেদন করলেও বড় অংকের ঘুষ ব্যতীত এমআরপি পাসপোর্ট পাওয়া যায় না। অন্যদিকে, এনআইডি কার্ড পাওয়ার জন্য আবেদন করলে এনআইডি কার্ড পেতে দীর্ঘ সময় লেগে যায়। ভুক্তভোগী প্রবাসীরা এনআইডি কার্ডের জন্য আবেদন করে আবেদনের রশিদসহ প্রয়োজনীয় সকল কাগজপত্র জমা দেওয়ার পরও উপ-পরিচালক তারেক সালমান সরকারের দোহায় দিয়ে এমআরপি পাসপোর্ট ইস্যু থেকে বিরত থাকেন।
অভিযোগে জানা গেছে, দালালদের মাধ্যমে “সাংকেতিক চিহ্ন দিয়ে” বড় অংকের ঘুষ প্রদানের মাধ্যমে এমআরপি পাসপোর্ট সহজে পাওয়া যায়। পাঁচলাইশ পাসপোর্ট অফিসে প্রতিদিন আনুমানিক ১০ লক্ষ টাকার মত ঘুষ বাণিজ্য চলছে। প্রতিটি ই-পাসপোর্টের অনুকূলে ১৫০০ টাকা, জমার ক্ষেত্রে লাইন না ধরার জন্য ৮০০ টাকা, পাসপোর্ট ডেলিভারির ক্ষেত্রে লাইন না ধরার জন্য ৫০০ টাকা, বয়স পরিবর্তন থাকলে দিতে হয় অন্ততপক্ষে ১০ হাজার টাকা, নামের ত্রুটি থাকলে দিতে হয় প্রতি পাসপোর্টে ৫ হাজার টাকা, কর্ম সংস্থানের পদবীর সাথে প্রত্যয়ন পত্র না দিলে পরিশোধ করতে হয় ২ হাজার টাকা, দালাল ব্যতীত কোন গ্রাহক সরাসরি চাঁন্দগাও পাসপোর্ট (পাঁচলাইশ) অফিসে গেলে বিভিন্ন অজুহাতে দিনের পর দিন ঘুরাতে থাকে। যা অবিশ্বাস্য হলেও সত্য।
এই বিষয়ে বিভিন্ন ইলেক্ট্রিক মিডিয়া, প্রিন্ট মিডিয়া, অনলাইনসহ অসংখ্য বার লেখালেখি এবং সংবাদ প্রকাশিত হলেও কোন ধরনের সমস্যা সমাধানের সুরাহা হয়নি। পাসপোর্ট অফিসে গেলে প্রবাসীদের এমআরপি পাসপোর্ট পাওয়ার জন্য আহাজারী দেখলে যে কোন মানবিক মানুষের কান্না চলে আসবে।
এমআরপি পাসপোর্ট ইস্যুর বিষয়ে সব শর্ত মেনে পাসপোর্ট ইস্যু করার জন্য চট্টগ্রাম বিভিগীয় পাসপোর্ট অফিসার সাঈদ আহমদকে অবগত করলে তিনি বলেন, কাগজপত্র ঠিক থাকলে একজন প্রবাসী বা মুমূর্ষ রোগী জরুরী ভিত্তিতে এমআরপি পাসপোর্ট ইস্যু করার জন্য আমার নির্দেশনা রয়েছে। সরকার প্রবাসীদেরকে সকল ধরনের সুবিধা দেওয়ার জন্য মাননীয় প্রধান মন্ত্রীর নির্দেশনা রয়েছে। এমআরপি পাসপোর্ট হয়ত হাতে লেখা পাসপোর্টের মত একেবারে উঠে যাবে পর্যায়ক্রমে। কিন্তু এখনপর্যন্ত এমআরপি পাসপোর্ট ইস্যুকরণ বিষয়ে সরকারের নির্দেশনা রয়েছে।
তিনি বলেন, বাংলাদেশের বাইরে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে আমাদের ভিসা অফিস রয়েছে সেইসব অফিসের এখনও এমআরপি ব্যতীত ই-পাসপোর্ট ইস্যু করা হচ্ছে না। তাই বাংলাদেশেও প্রতিটি পাসপোর্ট অফিসে প্রবাসী ও মুমূর্ষ রোগীদের জন্য জরুরী ভিত্তিতে এমআরপি পাসপোর্ট ইস্যু করার নিয়ম বলবৎ রয়েছে।
চট্টগ্রামের বেশিরভাগ মানুষ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে কর্মরত রয়েছে। তাঁরা চট্টগ্রামে এসে মেয়াদ উর্ত্তীন্য এমআরপি পাসপোর্ট পাওয়ার জন্য চান্দগাঁও (পাঁচলাইশ) পাসপোর্ট অফিসকে সু-স্পস্টভাবে নির্দেশনা দেওয়ার জন্য যদি এমআরপি পাসপোর্ট সরকার ইস্যু করার ক্ষেত্রে বন্ধ করে দেন তা সরকারি গেজেটের মাধ্যমে জানাতে হবে।
সাংবাদিক কামাল উদ্দীন বলেন, চান্দগাঁও (পাঁচলাইশ) পাসপোর্ট অফিসকে দূর্নীতি মুক্ত ও এমআরপি পাসপোর্ট ইস্যুর ক্ষেত্রে প্রবাসীদেরকে হয়রানীর হাত থেকে রক্ষা করা জন্য পাশপাশি সকল অনিয়মের বিষয়ে সরকারের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের মাধ্যমে আমাদের অভিযোগ বিষয়ে তদন্ত করে অপরাধিদের বিরুদ্ধে শাস্তি নিশ্চিত করার দাবী জানান।