বৃহস্পতিবার - ১৫ই মে, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ - ১লা জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ - ১৭ই জিলকদ, ১৪৪৬ হিজরি

চাটগাঁইয়া নওজোয়ান: চট্টগ্রামের সংস্কৃতিচর্চার জাগরণে এক উজ্জ্বল নক্ষত্র

চাটগাঁইয়া নওজোয়ান: চট্টগ্রামের সংস্কৃতিচর্চার জাগরণে এক উজ্জ্বল নক্ষত্র

মো. কামাল উদ্দিন

চাটগাঁইয়া নওজোয়ান, স্বপ্ন দেখে দূর,
ঐতিহ্যের ধারক, শুভ্র চেতনার সুর।
সংস্কৃতি আর মানবতায় ছড়ায় আলোর দীপ,
তরুণ প্রাণে জাগায় আশা, মুছে দুঃখের রূপ।
তাদের প্রয়াসে জাগে নতুন এক ভোর,
চট্টগ্রামের মাটিতে সৃষ্টি আনন্দের ঘর।
সমৃদ্ধ হোক যাত্রা, থাকুক নক্ষত্রের আলো,
তারা হোক জাতির গর্ব, অটল আর ভালো। ২৭ নভেম্বর, চট্টগ্রাম শিল্পকলা একাডেমি থিয়েটার হলে আয়োজিত চাটগাঁইয়া নওজোয়ানের মাসিক আনন্দ আড্ডা এক অনন্য সাংস্কৃতিক সন্ধ্যায় রূপ নেয়। চট্টগ্রামের বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের অংশগ্রহণে এই আয়োজন শুধু একটি আড্ডা নয়; এটি ছিল শিল্প, সাহিত্য ও সংস্কৃতির মেলবন্ধন। চাটগাঁইয়া নওজোয়ানের প্রতিটি আয়োজন চট্টগ্রামের ঐতিহ্যকে সমুন্নত রাখার এক নিঃস্বার্থ প্রচেষ্টা, যা সংগঠনের প্রতিটি সদস্যের পরিশ্রম ও ভালোবাসার প্রতিফলন। সংগঠনের ইতিহাস ও অগ্রযাত্রা ২০১৬ সালে প্রতিষ্ঠিত চাটগাঁইয়া নওজোয়ান আজ সাত বছরের পথ অতিক্রম করে চট্টগ্রামের সাংস্কৃতিক অঙ্গনে একটি গুরুত্বপূর্ণ নাম হয়ে উঠেছে। সংগঠনের শুরু থেকেই সভাপতি জামাল আহমেদ দক্ষ নেতৃত্বের মাধ্যমে একটি মানবিক ও সংস্কৃতিনির্ভর সংগঠন গড়ে তুলতে অগ্রণী ভূমিকা রেখেছেন। তার আন্তরিকতা, সহযোগিতামূলক মনোভাব এবং সাংগঠনিক দক্ষতা এই সংগঠনকে একটি অসাম্প্রদায়িক, মানবিক ও ঐতিহ্যবাহী প্রতিষ্ঠান হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে।
অনুষ্ঠানে জামাল আহমেদসহ প্রতিষ্ঠাকালীন সদস্যদের সম্মাননা প্রদান ছিল আয়োজনের অন্যতম প্রধান আকর্ষণ। সেই সঙ্গে তাদের কাজের স্বীকৃতি হিসেবে স্বীকৃতি পত্র প্রদান সংগঠনের ঐতিহ্য এবং একতাকে আরও দৃঢ় করেছে। এ অনুষ্ঠানে আমাকেও মঞ্চে ডেকে রজনীগন্ধা ও গোলাপ ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানানো হয়, যা আমার জন্য গভীর আনন্দ ও গর্বের মুহূর্ত ছিল।
সংগঠনের বৈশিষ্ট্য ও কার্যক্রম চাটগাঁইয়া নওজোয়ানের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য হলো তাদের সাংস্কৃতিক ও মানবিক উদ্যোগ। এটি শুধু একটি সংগঠন নয়, বরং একটি পরিবার, যেখানে সদস্যদের আনন্দ-উল্লাস, সামাজিক দায়িত্ববোধ এবং সংস্কৃতিচর্চা একত্রে বিকশিত হয়।
সাংস্কৃতিক কার্যক্রম: চাটগাঁইয়া নওজোয়ান চট্টগ্রামের ঐতিহ্যবাহী গান ও সংস্কৃতিকে তুলে ধরার পাশাপাশি বাঙালি সাহিত্য ও সংস্কৃতির ধারক-বাহক।
সংগঠনের ‘বৈঠকখানা’ এবং ‘আরাধনা’ নামের প্রশিক্ষণ কেন্দ্রগুলো শিল্প ও সংস্কৃতির চর্চার জন্য এক দৃষ্টান্তমূলক উদ্যোগ। মানবিক কর্মকাণ্ড:
করোনাকালে সংগঠনের মানবিক দৃষ্টিভঙ্গি চট্টগ্রামের সংস্কৃতি জগতে এক ব্যতিক্রমী দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। অসহায় শিল্পীদের পাশে দাঁড়িয়ে তারা যে মানবিকতার পরিচয় দিয়েছে, তা প্রশংসার যোগ্য।
উৎসব ও শ্রদ্ধানিবেদন:
সংগঠনের প্রতিটি সদস্যের জন্মদিন অত্যন্ত ঝাঁকঝমক পূর্ণভাবে উদ্‌যাপন করা হয়। প্রয়াত সদস্যদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে তাদের স্মরণ করা হয়, যা চাটগাঁইয়া নওজোয়ানের মানবিক দিকটি আরও সুস্পষ্ট করে। জাতীয় দিবস পালন:
সংগঠনটি জাতীয় দিবসগুলো যথাযথ মর্যাদায় পালন করে, যা তাদের সাংস্কৃতিক দায়িত্ববোধের পরিচায়ক। প্রতিষ্ঠার মূলমন্ত্র ও অঙ্গীকার চাটগাঁইয়া নওজোয়ানের মূলমন্ত্র হলো অসাম্প্রদায়িকতা, মানবিকতা এবং সংস্কৃতির সঠিক চর্চা। এটি চট্টগ্রামের তরুণ প্রজন্মকে ঐতিহ্যের সঙ্গে সম্পৃক্ত করার পাশাপাশি তাদের মানবিক ও নান্দনিক গুণাবলির বিকাশে সহায়তা করে। একটি উজ্জ্বল ভবিষ্যতের পথে চাটগাঁইয়া নওজোয়ান শুধু একটি সাংস্কৃতিক সংগঠন নয়, এটি একটি অনুপ্রেরণার নাম। সংগঠনের প্রতিটি কার্যক্রম প্রমাণ করে যে সংস্কৃতি কেবল বিনোদনের জন্য নয়; এটি মানবিকতা, ঐক্য এবং প্রগতির প্রতীক। আমি গর্বিত যে আমি শুরু থেকেই এই সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত। প্রতিটি আয়োজনের অংশ হতে পেরে আমি ধন্য। চাটগাঁইয়া নওজোয়ান চট্টগ্রামের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যকে সমৃদ্ধ করতে যে অবদান রাখছে, তা অমূল্য। তাদের পথচলা অনন্তকাল অব্যাহত থাকুক।

Share on facebook
Facebook
Share on twitter
Twitter
Share on linkedin
LinkedIn