রবিবার - ১৮ই মে, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ - ৪ঠা জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ - ২০শে জিলকদ, ১৪৪৬ হিজরি

চট্টগ্রামে পাহাড় কেটে নির্মিত বহুতল ভবন গুড়িয়ে দিল সিডিএ : নাগরিক ফোরামের আগাম হুঁশিয়ারির বাস্তবায়ন

চট্টগ্রামে পাহাড় কেটে নির্মিত বহুতল ভবন গুড়িয়ে দিল সিডিএ : নাগরিক ফোরামের আগাম হুঁশিয়ারির বাস্তবায়ন

 

চট্টগ্রাম নগরের আসকার দীঘিরপাড় এলাকায় পাহাড় কেটে নির্মিত স্বপ্নীল আবাসন প্রকল্পের একটি বহুতল ভবন অবশেষে গুঁড়িয়ে দিয়েছে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ)। সোমবার (২১ এপ্রিল) সকাল ১০টায় চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ, পরিবেশ অধিদফতর, জেলা প্রশাসন, চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সমন্বয়ে গঠিত বিশেষ অভিযানে ভবনটি উচ্ছেদ করা হয়। পাহাড় কেটে অবৈধভাবে ভবন নির্মাণের দায়ে এতদিন ধরে আলোচিত-সমালোচিত এই প্রকল্পটি নিয়ে বেশ কয়েকবার প্রশাসনিক নোটিশ ও সতর্কবার্তা দেওয়া হলেও, ডেভেলপার প্রতিষ্ঠানটি তা অগ্রাহ্য করে নির্মাণ কাজ চালিয়ে যাচ্ছিল। বিষয়টি আদালত পর্যন্ত গড়ালে জমির মালিকগণ হাইকোর্টে রিট করে ভবন নির্মাণ অব্যাহত রাখার অনুমতি চেয়ে একটি স্থগিতাদেশ আদায় করে।
তবে সেই রিটে পাহাড় কাটার তথ্য গোপন করা হয়, যা পরে আদালতের নজরে আসে। ফলে গত ২০ এপ্রিল হাইকোর্ট ওই স্থগিতাদেশ বাতিল করলে আজ ২১ এপ্রিল সকালেই উচ্ছেদ অভিযান চালিয়ে বহুতল ভবনটি ধ্বংস করে ফেলা হয়।
দীর্ঘদিনের দাবির বাস্তবায়ন:
এই অভিযানকে নাগরিক সমাজ ও পরিবেশকর্মীরা স্বাগত জানিয়েছেন। বিশেষ করে চট্টগ্রাম নাগরিক ফোরাম। যারা গত কয়েক বছর ধরে চট্টগ্রামে পাহাড় কাটা ও দখলের বিরুদ্ধে আন্দোলন করে আসছে, তারা মনে করছেন—এটি তাঁদের আন্দোলনের একটি বড় সাফল্য।

গত ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ তারিখে চট্টগ্রাম নাগরিক ফোরামের পক্ষ থেকে চট্টগ্রাম বিভাগের বিভাগীয় কমিশনার বরাবর একটি লিখিত স্মারকলিপি প্রদান করা হয়, যেখানে চট্টগ্রাম নগরী ও আশপাশের উপজেলার বিভিন্ন জায়গায় অবাধে পাহাড় কেটে গড়ে তোলা হচ্ছে ইটভাটা, রিসোর্ট এবং আবাসিক প্রকল্পের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানানো হয়।

স্মারকলিপিতে উল্লেখ করা হয়—মিরসরাই, সীতাকুণ্ড, হাটহাজারী, রাউজান, ফটিকছড়ি, রাঙ্গুনিয়া, লোহাগাড়া, সাতকানিয়া, বাঁশখালী ও পটিয়ার বিস্তীর্ণ এলাকায় পাহাড় কেটে ফেলা হচ্ছে প্রতিনিয়ত। এই বিষয়ে বিভিন্ন জাতীয় ও স্থানীয় দৈনিকে সংবাদ প্রকাশিত হলেও কার্যকর ব্যবস্থা ছিল না বললেই চলে।

স্মারকলিপি প্রদানকালে উপস্থিত ছিলেন সংগঠনের মহাসচিব মো. কামাল উদ্দিন, যুগ্ম সম্পাদক স.ম. জিয়াউর রহমান, সদস্য মাসুদ রানা, ইঞ্জিনিয়ার মো. এমরান, লিটু সূত্রধর, আনন্দ বোধি ভিক্ষু, মো. নূর, লাভলি ডিও, শারমিন আক্তার, খুশি নিরব, তাজিন সুলতানা মিম, মো. হাসান মুরাদ, মো. ইউসুফসহ অনেকেই। স্মারকলিপিটি গ্রহণ করেন চট্টগ্রামের অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার (উন্নয়ন) মো. আনোয়ার পাশা। তিনি বলেন, “চট্টগ্রাম একটি অনন্য প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের শহর। পাহাড়, নদী ও সমুদ্রের মিলনে গঠিত এই নগরীকে ধ্বংস করছে কিছু অসাধু চক্র। পাহাড় কাটা বন্ধে চট্টগ্রাম নাগরিক ফোরামের এই উদ্যোগ সময়োপযোগী ও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।”

একটি বিশাল চক্রের কার্যকলাপ। চট্টগ্রামের পাহাড় কাটা শুধু আসকার দীঘিরপাড়েই সীমাবদ্ধ নয়। নগরের বিভিন্ন প্রান্তে—বিশেষ করে বায়েজিদ, খুলশী, হালিশহর ও চকবাজার এলাকায় পাহাড় কেটে বহুতল ভবন, দোকানপাট ও গুদামঘর নির্মাণের প্রবণতা আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে। পরিবেশ অধিদফতর একাধিকবার এসব বিষয়ে সতর্কতা জারি করলেও বেশিরভাগ সময় তা উপেক্ষিত থেকেছে।

এ প্রসঙ্গে চট্টগ্রাম নাগরিক ফোরামের মহাসচিব মো. কামাল উদ্দিন বলেন, “আমরা বারবার বলে এসেছি—চট্টগ্রামের পাহাড়ই এই শহরের রক্ষা-বর্ম। এগুলোকে কেটে ফেললে শুধু পরিবেশ নয়, মানুষের জীবনও হুমকির মুখে পড়বে। পাহাড় ধ্বস, বন্যা ও খরা দেখা দেবে। তাই প্রশাসনকে আরও কঠোর হতে হবে।” পরিবেশ রক্ষার লড়াই অব্যাহত থাকবে।

চট্টগ্রাম নাগরিক ফোরাম জানিয়েছে, তারা পাহাড় কাটা, নদী দখল, পাহাড় দখল ও নগর দূষণের বিরুদ্ধে তাদের সামাজিক আন্দোলন অব্যাহত রাখবে। তারা প্রশাসনের সদিচ্ছা ও কঠোর পদক্ষেপকে স্বাগত জানিয়ে আগামীতে এ ধরনের অপকর্ম যেন আর না হয়, সে লক্ষ্যে আরও সচেতনতা, জনমত ও প্রশাসনিক তৎপরতার আহ্বান জানিয়েছেন।

এদিকে, ভবিষ্যতে যেন কোনো প্রকল্প অনুমোদনের আগে যথাযথ পরিবেশগত মূল্যায়ন ও তদন্ত হয়, সে বিষয়েও সুপারিশ করেছেন পরিবেশবিদরা।

Share on facebook
Facebook
Share on twitter
Twitter
Share on linkedin
LinkedIn