
চেরাগী পাহাড়ে হানাদার হানা
চট্টগ্রামের মুক্তিযুদ্ধের প্রথম শহীদ বশর-জাফর-দীপক-মাহবুব
নসিরুদ্দীন চৌধুরী
২৮ তারিখে তাও বাঙালি সৈনিকদের জন্য রসদ নিয়ে যাওয়ার সময় চেরাগির পাহাড়ের পাকিস্তানি নৌকমান্ডোদের অতর্কিত হামলায় ছাত্রনেতা বশরুজ্জামান চৌধুরী, জাফর আহমদ, দীপক বড়–য়া ও মাহবুবুল আলম চৌধুরী শাহাদাত বরণ করেন। যুদ্ধ শুরু হতে না হতেই এই দুটি ঘটনা ছিলো মুক্তিযোদ্ধাদের পক্ষে বিরাট বিপর্যয়।
২৮ মার্চ ১৯৭১; তখনো চট্টগ্রাম শহর হানাদার বাহিনীর করতলগত হয়নি, হালিশহর, কোর্ট বিল্ডিং, সি আর বি পাহাড়ের ঘাঁটি থেকে ক্যাপ্টেন রফিকুল ইসলামের (মেজর অব. রফিকুল ইসলাম বীর উত্তম) নেতৃত্বে প্রতিরোধ যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছিল ইপিআর জওয়ানরা, ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের নেতারা যুদ্ধরত সৈনিকদের জন্য খাদ্য, পানীয় ও ওষুধ সংগ্রহ করে তা বিভিন্ন অবস্থানে পৌঁছে দিচ্ছিলেন।
এমনি এক পরিস্থিতিতে চট্টগ্রাম শহরের কেন্দ্রস্থলে কিংবদন্তীর চেরাগী পাহাড়ের মোড়ে পাকিস্তানি সৈন্যদের কাপুরুষোচিত চোরাগোপ্তা হামলায় লাশ হয়ে গেলেন চার ছাত্রনেতা- বশরুজ্জামান চৌধুরী, দীপক বড়–য়া, জাফর আহমদ ও মাহবুবুল আলম চৌধুরী।
তাঁরা ছিলেন ছাত্রলীগ ও স্বাধীন বাংলা ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের নেতা এবং তৎকালীন চট্টগ্রাম শহরের রাজনৈতিক অঙ্গনের পরিচিত মুখ। তাঁরা রসদ নিয়ে যাচ্ছিলেন যুদ্ধরত বাঙালি সৈনিকদের জন্য। তাঁদের গাড়ি চেরাগী পাহাড় অতিক্রম করতে না করতেই ছুটে এল একঝাঁক বুলেট। আকস্মিক এই হামলার জন্য তাঁরা মোটেই প্রস্তুত ছিলেন না। আগে পিছে ধারে কাছে কোথাও কোন শত্রæ সৈন্যের নড়াচড়া নেই, শহর আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে মুক্তিসংগ্রামী ছাত্রজনতা ও বাঙালি সৈনিকদের দখলে। ওদিকে গুলি চলছে তো চলছেই, থামাথামি নেই। প্রকৃত পক্ষে গুলি আসছিল পার্শ্ববর্তী ডি সি হিল থেকে। ঐ পাহাড়ের ঘন ঝোপ ঝাড়ের আড়ালে ওঁৎ পেতে থাকা পাকিস্তানি কমান্ডোরা এই হামলা চালায়। তাদেরই আকস্মিক হানায় ঘটনাস্থলেই শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন চার অকুতোভয় মুক্তিযোদ্ধা। আঘাত হানার পরই পরিষ্কার হয়ে গেল শত্রæর অবস্থান-ওপরে টিলার ওপর গাছ পালার আড়াল নিয়ে তারা নিচে সহজ টার্গেট প্র্যাকটিস করে যাচ্ছিলো। কোন আড়াল না থাকায় মুক্তিযোদ্ধাদের গাড়িটি সহজ টার্গেটে পরিণত হয়েছিলো। গাড়ির ভিতরে বসে থাকা অবস্থাতেই গুলি খেতে খেতে তাদের দেহ ঝাঁঝরা হয়ে এক সময় নিথর হয়ে পড়ে। যখন আর কোন প্রাণের সাড়া পাওয়া যাচ্ছিলো না তখনই হানাদারদের অস্ত্রের অগ্নি উদগীরণ থামে। চারটি তরুণ প্রাণ এভাবেই ঝরে গেল অকালে, চারজন ভবিষ্যতের নেতা চিরতরে হারিয়ে গেল চট্টগ্রামের রাজনৈতিক অঙ্গন থেকে।
পরে অনুসন্ধানে জানা যায়, পাকিস্তানি সৈন্যরা ছিলো আসলে নৌবাহিনীর কমান্ডো দলের সদস্য। চট্টগ্রাম স্টেডিয়ামের (বর্তমানে এম এ আজিজ স্টেডিয়াম) দক্ষিণ-পূর্ব কোণে চট্টগ্রামের নৌবাহিনী কমাÐারের বাসভবনে যেসব নৌ-সেনা মোতায়েন থাকতো, তাদের মধ্য থেকেই কজন নৌ-সেনা চুপিসারে ডিসি হিলে ওঠে শিকারের আসায় ঘাপটি মেরে বসে ছিলো তা কারো নজরে পড়েনি। বশর, জাফর, দীপক, মাহবুবুল আলমদের জিপ যখন ২৮ মার্চ বিকেলে চেরাগী পাহাড় পৌঁছে, তখন পাকিস্তানি নৌ-সেনারা সহজ শিকার পেয়ে যায়।
বশর, জাফর, দীপক প্রায় সমবয়সী বন্ধু এবং মাহবুবুল আলম কয়েক বছরের বড় হলেও বন্ধুর মতই মিশতেন ওদের সঙ্গে। বক্সিরহাট পুলিশ বিটের সামনে হাজারী গলির মুখে “সামী হোটেল” (বর্তমানে আলেবেনী হোটেল) নামে একটি রেস্টুরেন্ট ছিলো, যেখানে আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগ নেতা কর্মীরা প্রাতঃরাশ থেকে শুরু করে চা নাস্তা খেতে খেতে রাতদিন আড্ডা জমিয়ে রাখতেন। সামী’র পাশেই মনসুর ভবন (বিনোদা ভবন) নামে একটি পাকা বহুতল ভবনে জেলা আওয়ামী লীগের কন্ট্রোল রুম স্থাপিত হয়েছিলো সেই অসহযোগ ও প্রতিরোধ যুদ্ধের উত্তাল দিনগুলোতে। কাছেই আন্দরকিল্লা রোডে জেলা আওয়ামী লীগের অফিস থাকলেও দলীয় কর্মকাÐ মনসুর ভবন থেকেই পরিচালিত হচ্ছিলো। ২৮ এপ্রিল বিকেলে বশর, জাফর, দীপক, মাহবুব সামী হোটেলে প্রবেশ করেন হন্তদন্ত হয়ে। সেখানে দেখা হয় দুই মুক্তিযোদ্ধা বন্ধু ঘাটফরহাদবেগের মাহবুব ও অনুজ রুমুর সাথে। রুমু প্রয়াত ছাত্রনেতা, কবি, মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার শওকত হাফিজ খান রুশ্নির অনুজ। মাহবুব ও রুমুকেও তারা সঙ্গী হওয়ার প্রস্তাব দেয় কিন্তু তারা সেই মুহূর্তে কোথাও যেতে অস্বীকৃত হন। এ নিয়ে ৬ বন্ধুর মধ্যে কিছুক্ষণ তর্কবিতর্কের পর মাহবুব-রুমুকে বাদ দিয়েই তারুণ্যের উদ্দীপনায় টগবগ করে ফুটতে থাকা বশর-জাফররা জিপ নিয়ে রওনা হয়ে যাওয়ার পাঁচ মিনিটের মধ্যেই চেরাগী পাহাড়ে আক্রান্ত হন। সামী হোটেলে বসেই মাহবুব, রুমু এ খবর পান এবং ঘটনার আকস্মিকতা ও ভয়াবহতায় এতই বিচলিত ও মর্মাহত হন যে, তাঁরা ক্রোধান্ধ হয়ে দৌঁড়ে ছুটে যান চেরাগী পাহাড়ে। কদম মোবারক এতিমখানার সামনে স্থানীয় জনতার জটলা তাদের গতিরোধ করে এবং তাদেরও বিপদ হতে পারে এ আশংকায় আর সামনে এগুতে দেয়নি। জনতার ভিড় ঠেলে আরও কিছুটা এগিয়ে চেরাগী পাহাড়ের খুব কাছাকাছি হয়ে সামনে দৃষ্টি প্রসারিত করে মাহবুব দেখেন বশর, জাফর, দীপক, মাহবুবুল আলমদের গাড়ির একটি চাকা উল্টানো অবস্থায় চেরাগী পাহাড়ের পশ্চিমে রাস্তার উত্তর পাশে কৃষি ব্যাংকের সামনে ফুটপাথ ঘেঁষে পড়ে আছে।
পূর্বকথা :
পঁচিশ মার্চ ক্র্যাকডাউনের বিভীষিকাময় কালোরাতে হাজারী গলিতে চট্টগ্রাম কলেজের সাবেক জি এস, ছাত্রনেতা স¤প্রতি প্রয়াত কাজী মনিরুজ্জামান মন্টুর বাড়িতে একে একে জড়ো হতে থাকেন ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের নেতা শওকত হাফিজ খান রুশ্নি, এ বি এম নিজামুল হক, বশরুজ্জামান চৌধুরী, জাফর আহমদ ও সাবেক গণপরিষদ সদস্য প্রয়াত আবদুল্লাহ আল হারুনের অনুজ আবদুল্লাহ আল রায়হান (রাজু)। রাতেই বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতা ঘোষণার সংবাদ পেলেন। পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী তাঁরা নন্দনকানন রাইফেল ক্লাবে ঢুকে বন্দুক সংগ্রহ করেন। রাইফেল ক্লাবের অস্ত্রগুলি ইটালি থেকে সদ্য আমদানি করা। রাইফেল ক্লাবের সেক্রেটারি এবং লেখক, কলামিস্ট প্রয়াত মোফাচ্ছেল আহমদ চৌধুরী ছাত্র নেতাদের কাছে গোপনে এ খবরটি দিয়ে রেখেছিলেন। ইতিপূর্বে আন্দরকিল্লার বন্দুকের দোকানগুলিতে সুকৌশলে ঢুকে যত অস্ত্র পাওয়া গিয়েছিলো সব তারা সরিয়ে ফেলেন।
সারারাত উদ্বেগ, উৎকণ্ঠা ও অনিশ্চয়তার মধ্যে কেটে গেল। ঘুমও হয়নি কারো ভালো করে। সকাল হতে না হতেই চলে গেলেন চট্টগ্রাম কলেজে, সেটা তখন তাঁদের অঘোষিত সদর দপ্তর। আগেই বলেছি মনিরুজ্জামান মন্টু চট্টগ্রাম কলেজ ছাত্র সংসদের সাধারণ সম্পাদক (জি এস)। ২০০৮ সালের ২২মার্চ এক মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত জালাল উদ্দিন আহমদ ছিলেন ঐ সংসদের সহ-সভাপতি (ভিপি)। চট্টগ্রাম শহরে তখন তুমুল উত্তেজনা। পাকিস্তানি সৈন্যরা যাতে শহরে প্রবেশ করতে না পারে সেজন্য কৌশলগত স্থানসমূহে প্রতিরোধ ব্যুহ রচনা করা হচ্ছিলো। হালিশহরে প্রতিরোধ যুদ্ধ চলছিলো, সিআরবি পাহাড়, মেডিক্যাল, প্রবর্ত্তকের পাহাড়, কোর্ট বিল্ডিং-এ তৎকালীন ইপিআর এর বাঙালি সৈনিকরা বাঙ্কার, ট্রেঞ্চ খুঁড়ে প্রতিরক্ষা ব্যুহ তৈরি করেছিলেন। ইপিআর-এর অগ্রবর্তী অবস্থানসমূহে ঘুরে ঘুরে অস্ত্রের যোগান দেয়া এবং খাদ্য, পানীয় ও ওষুধ সংগ্রহ ও সরবরাহের দায়িত্ব স্বেচ্ছায় কাঁধে তুলে নিয়েছিলেন ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের নেতারা। চট্টগ্রাম কলেজের নেতারাও এ কাজে বেরিয়ে পড়লেন। দ্রæত যোগাযোগ ও দূরবর্তী স্থানে যাতায়াতের জন্য প্রয়োজন গাড়ি। দেবপাহাড় এলাকায় বসবাসকারি পূর্ব পরিচিতি একজন ধনী ঠিকাদারের বাসায় গিয়ে তাঁর কাছে একটি জিপ চাইলেন ছাত্র নেতারা। তিনি এক কথায় নতুন একটি জিপের চাবি ছাত্র নেতাদের হাতে তুলে দিলেন। জিপ নিয়ে বেলা ১২টার দিকে নেতৃবৃন্দ এলেন ১২০ আন্দরকিল্লা আওয়ামী লীগ অফিসে। সেখানে দেখা হল জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এম এ হান্নানের সাথে তিনি তাদের হাতে একটি চিরকুট দিয়ে তা কালুরঘাটে ৮ম ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের মেজর জিয়াউর রহমানের হাতে পৌঁছে দিতে বললেন। ছাত্র নেতৃবৃন্দ কালুরঘাট গিয়ে জিয়ার দেখা পেলেন না। সেখানে তখন হাজার হাজার মানুষ। খোঁজ-খবর নিয়ে তাঁরা জানতে পারেন তাঁকে পাওয়া যাবে বোয়ালখালীর করলডেঙ্গায়। কালুরঘাট থেকে বশর, জাফররা জিপ নিয়ে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে চলে যান। মন্টু, নিজাম, স্বপন চৌধুরী (পরে শহীদ), রাজেন্দ্র প্রসাদ চৌধুরী (বোয়ালখালী থানা ছাত্রলীগের তৎকালীন সভাপতি), অন্য একটি গাড়ি নিয়ে করলডেঙ্গা যান এবং পাহাড়ের পাদদেশে একটি অপূর্ব সুন্দর প্রাকৃতিক পরিবেশে ৮ম ইস্ট বেঙ্গলের অবস্থান আবিষ্কার করেন। মেজর জিয়ার কাছে হান্নান সাহেব প্রদত্ত চিঠিটি হস্তান্তর করেন। তাঁরা কানুনগোপাড়া স্যার আশুতোষ কলেজে রাত্রিযাপন করে পরদিন অর্থাৎ ২৭ মার্চ চট্টগ্রাম শহরে ফিরে আসেন। বশর, জাফরদের সঙ্গে তাঁদের আবার দেখা হয় ২৮ মার্চ সকালে বহদ্দারহাট রেডিও ভবনে। সেখান থেকে বশরদের সঙ্গে তাদের জিপে করে হাজার গলি ফিরে আসেন মন্টুরা। নিজামুল হক সহ মন্টু চলে যান তাঁর বাসায়। বশর, জাফর সামী হোটেলে ঢোকেন। সেখানে মাহবুব-রুমুর সঙ্গে তাদের সাক্ষাতের কথা আগেই বলা হয়েছে। দীপক বড়–য়া ও মাহবুবুল আলমের সঙ্গে বশর-জাফরের সাক্ষাৎ সম্ভবত সামি হোটেলেই হয় অথবা আন্দরকিল্লায়ও হতে পারে। চেরাগী পাহাড়ের অদূরে কদমমোবারক এতিমখানার বিপরীতে বিপ্লবী বিনোদ বিহারী চৌধুরীর বাসভবনের পাশে দীপক বড়–য়াদের পৈত্রিক জায়গা রয়েছে, সেখান থেকেও তিনি বশর-জাফরদের সঙ্গী হতে পারেন। দীপক ছিলেন অসাধারণ সাহসী যুবক এবং বশর-জাফরের ঘনিষ্ঠ বন্ধু।
মাহবুবুল আলম নজির আহমদ চৌধুরী রোডের ফজল করিম চেয়ারম্যানের গলিতে থাকতেন। দিনে চাকরি করতেন খাতুনগঞ্জের একটি ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানে। রাতে এম ই এস স্কুলে স্থাপিত নাইট কলেজে পড়তেন। ছাত্রলীগের নেতা ছিলেন। সে সুবাদে বশর-জাফরদের সাঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে ওঠা অস্বাভাবিক নয়। তাঁর অনুজ তৎকালীন ছাত্র ইউনিয়ন নেতা বর্তমানে ব্যবসায়ী শামসুল আলম চৌধুরীও নিশ্চিত করেছেন তাঁর অগ্রজ ছাত্রলীগের সক্রিয় কর্মী ছিলেন।
এভাবেই সেদিন চারজন অসম সাহসী যুবকের দলটি গড়ে উঠেছিল। জিপ চালাচ্ছিলেন বশরুজ্জামান চৌধুরী। এ ব্যাপারে ভিন্নমতও রয়েছে। দীপকের অনুজ বাপ্পী বড়–য়া আমাকে জানালেন তাঁর দাদা দীপকই গাড়ি ড্রাইভ চালাচ্ছিলেন এবং গাড়িটি জিপ নয় একটি কার ছিল।
ধনী পরিবারের সন্তান ছিলেন বশরুজ্জামান চৌধুরী। আনোয়ারার জমিদার নুরুজামান চৌধুরীর কনিষ্ঠ সন্তান এবং মরহুম বশিরুজ্জামান চৌধুরী ও এফবিসিসিআই ও চট্টগ্রাম চেম্বারের সাবেক সভাপতি ও সাবেক সংসদ সদস্য মরহুম আখতারুজ্জামান চৌধুরীর অনুজ মরহুম বশরুজ্জামানের ড্রাইভিং-এ ছিলো পাকা হাত। তাই ২৬ মার্চ জিপটি নেয়ার পর থেকেই ড্রাইভিং সিটে ছিলেন বশরুজ্জামান। চেরাগীর পাহাড়ে পাক নেভীর ছোঁড়া প্রথম গুলিটি হয়তো তাঁকেই লেগেছিলো এবং নিভিয়ে দিয়েছিলো তাঁর জীবনপ্রদীপ। ফলে গাড়িটি বেসামাল হয়ে ফুটপাথে ধাক্কা খেয়ে থেমে যায়।
বশরুজ্জামান চৌধুরী
রাজনৈতিক পরিবারে জন্ম এবং রাজনৈতিক আবহাওয়ায় বেড়ে ওঠার ফলে বশরুজ্জামানের পক্ষে রাজনীতি থেকে নিরাপদ দূরত্বে সরে থাকার উপায় ছিলো না। এবং ওরকম পরিস্থিতিতে যা স্বাভাবিক, তাই ঘটেছে তাঁর ক্ষেত্রে। রাজনীতির অমোঘ আকর্ষণে জ্যেষ্ঠ ভ্রাতারা যে পথে গেছেন, বশরুজ্জামানও সেই মহাজনপন্থাই অনুসরণ করে ছাত্র রাজনীতিতে দীক্ষা নেন এবং চট্টগ্রামের ছাত্রলীগ তথা ছাত্র রাজনীতির একজন বলিষ্ঠ নেতা হয়ে ওঠেন। ৭১ সালে তিনি চট্টগ্রাম সিটি কলেজের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র ছিলেন মতান্তরে তিনি উচ্চ মাধ্যমিক পাস করে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার অপেক্ষায় ছিলেন। বশরুজ্জামান সম্পর্কে তাঁর পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলেও আমি নিশ্চিত হতে পারি নি তাঁর জন্ম কখন এবং শাহাদাতবরণের সময় তিনি অধ্যয়নরত ছিলেন না ব্যবসায় নিয়োজিত ছিলেন। তাঁর বন্ধু ও চাচাতো ভাই আশরাফুজ্জামান চৌধুরী জানিয়েছেন বশর তাঁর বন্ধু তবে বয়সে কিছুটা ছোট ছিলেন। তিনি বলছেন বশর একাত্তরে মৃত্যুর পূর্বে তাঁর ভাইদের ন্যায় ব্যবসা শুরু করেছিলেন।
অন্যদিকে জনাব আখতারুজ্জামান চৌধুরী এমপি জানিয়েছেন, তাঁর ছোট ভাই বশর তখনও পড়াশুনার পাট শেষ করেন নি। তিনি জানিয়েছেন, বশরের জন্ম ১৯৪৯ সালে। বশর পড়াশুনা করেছেন প্রথমে ফিরিঙ্গী বাজারের জেএম সেন স্কুল এবং পরে পটিয়া স্কুলে। পটিয়া থেকেই তিনি এস এস সি পাস করেন এবং সিটি কলেজে ভর্তি হন। বশরুজ্জামান চৌধুরী আনুমানিক ১৯৬৫ সালে এস এস সি পাস করেন। সে হিসেবে হয়তো জনাব আখতারুজ্জামান চৌধুরীর কথাই ঠিক যে বশর উচ্চ মাধ্যমিক পাস করেছিলেন। বশরকে ছাত্রলীগের একজন নিবেদিতপ্রাণ, সাহসী ও সার্বক্ষণিক কর্মী হিসেবে দেখেছেন আশরাফুজ্জামান। বশর আওয়ামী লীগ বলতে অজ্ঞান ছিলেন। বন্ধুবৎসল, সামাজিক ও মানবদরদি ছিলেন। বিপন্ন মানুষকে সেই সময়েও অকাতরে সাহায্য করতেন। বশরের ঘনিষ্ঠ বন্ধুদের মধ্যে ছিলেন সাবেক মেয়র মাহমুদুল ইসলাম চৌধুরী, কাজী মনিরুজ্জামান মণ্টু, জাফর, দীপক ও আবুল কাশেম। আশরাফুজ্জামান জানান, স্পিড বোটে করে বশরের ডেড বডি আনোয়ারায় নেওয়া হয়।
জাফর আহমদ
চট্টগ্রাম শহরের পূর্ব মাদারবাড়ির দুরন্ত যুবক জাফর আহমদ স্কুলজীবনে খুবই মেধাবী ছাত্র ছিলেন। মিউনিসিপ্যাল হাইস্কুলে অধ্যয়নের সময় প্রত্যেক শ্রেণীতে প্রথম স্থানটি যেন তাঁর জন্যই সংরক্ষিত ছিল। খেলাধুলা, শরীরচর্চায় ছিলো তাঁর অপরিসীম উৎসাহ। সুস্বাস্থ্যের অধিকারি জাফরের দক্ষ ফুটবল খেলোয়াড় হিসেবে সুনাম ছিল। মিউনিসিপ্যাল স্কুলের ফুটবল টিমের ক্যাপ্টেন ছিলেন, তাঁর অধিনায়কত্বে মিউনিসিপ্যাল স্কুল বিভাগীয় চ্যাম্পিয়ন হয়।
এস এস সি পাস করে জাফর সিটি কলেজে ভর্তি হন উচ্চ মাধ্যমিক শ্রেণীতে। ৭১ সালে চতুর্থ বর্ষের ছাত্র ছিলেন। শাহাদাতবরণের সময় তাঁর বয়স হয়েছিল আনুমানিক ২০ বছর।
শহীদ দীপক বড়–য়া
কক্সবাজার জেলার উখিয়া থানার হ্নীলা গ্রামে ছিল দীপক বড়–য়ার পৈত্রিক নিবাস। পিতার নাম বিজয় শ্রী বড়–য়া। চট্টগ্রামে শহরের এনায়েতবাজারে তাঁর পিতা বাড়ি করেছিলেন, দীপকের জন্ম সেই বাড়িতেই। সিটি কলেজের ছাত্র ছিলেন, সেই সূত্রেই বশর-জাফরের সাথে পরিচয় ও বন্ধুত্ব।
পেটানো শরীর, প্রচÐ শক্তি ও সাহসের অধিকারী ছিলেন দীপক বড়–য়া। মাত্র ২১ বছর বয়সে এই সম্ভাবনাময় তরুণের জীবনাবসান ঘটে।
শহীদ মাহবুবুল আলম চৌধুরী
চাকরি করেই লেখাপড়া চালিয়ে যাচ্ছিলেন মাহবুবুল আলম চৌধুরী। নজির আহমদ চৌধুরী রোডের চেয়ারম্যান গলির ফজল করিম চেয়ারম্যানের বাসভবনের বিপরীতে একটি বাংলো টাইপের বেড়ার ঘর ছিল যার অস্তিত্ব এখন আর খুঁজে পাওয়া যাবে না। ওই ঘরেই থাকতেন মাহবুবুল আলম চৌধুরী। দীর্ঘদিন অবস্থানের কারণে পৌর চেয়ারম্যানের পরিবারের সাথে তাঁর ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল। চেয়ারম্যান গলি থেকে বেরিয়ে রাস্তা পেরোলেই এম ই এস স্কুলের গেট। দিনে খাতুনগঞ্জে বাওয়ানী গ্রæপের ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান আহমদ ব্রাদার্স লি. এ চাকরি করতেন। এম ই এস স্কুল ভবনে স্থাপিত নাইট কলেজ ছিল তাঁর ঘরের দুয়ারেই। তাই সময় নষ্ট না করে ভর্তি হয়েছিলেন নাইট কলেজে, লেখাপড়ায় কোন ছেদ পড়তে দেন নি।
আগে থেকেই ছাত্রলীগ করতেন। সে সময় আন্দরকিল্লা, রমহতগঞ্জ, নন্দনকানন, কে সি দে রোড, লালদিঘি এলাকা ছিলো রাজনৈতিক তৎপরতার কেন্দ্রস্থল। এই রাজনৈতিক পরিমÐলে বসবাস করে মাহবুবুল আলমও সক্রিয় রাজনৈতিক কর্মীতে পরিণত হয়েছিলেন। আন্দরকিল্লায় অবস্থিত আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের অফিসে প্রতিদিন ঘুরে ফিরে হাজিরা দিতেও তাঁর অসুবিধা হত না।
মাহবুবুল আলম চৌধুরী ফটিকছড়ির বাসিন্দা ছিলেন, রাঙামাটিয়া গ্রামে ১৯৪৪ সালে তাঁর জন্ম। তাঁর পিতার নাম মরহুম মাহমুদুর রহমান চৌধুরী। পাঁচ ভাই বোনের মধ্যে তিনি ছিলেন সবার বড়। ছোট ভাই শামসুল আলম চৌধুরী ছাত্র ইউনিয়নের (মতিয়া গ্রæপ) নেতা ছিলেন। তিনিও মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন।
২৮ মার্চ চেরাগী পাহাড়ে বশর-জাফর-মাহবুব-দীপকদের সঙ্গে পাক নেভীর গুলিতে শাহাদাতবরণের পর তাঁর লাশ সেখানেই রাস্তার ওপরে পড়ে ছিল। তিনি যে গলিতে থাকতেন, সেই গলির মুখের জহুর আহমদ নামে একজন ব্যবসায়ী মাহবুবুল আলমের গুলিবিদ্ধ হওয়ার খবর শুনে দেখার জন্য দৌঁড়ে যান চেরাগী পাহাড়ে। তখনো রাজপথে শায়িত মাহবুবুল আলমের নি®প্রাণ দেহ। জহুর স্থানীয় আরো দু-একজনের সহায়তায় মাহবুবুল আলমের মরদেহ চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যান। ডাক্তাররা পরীক্ষা করে মৃত্যু নিশ্চিত করলে জহুর আহমদ চলে আসেন এবং মাহবুবুল আলমের পরিবার ও আত্মীয় স্বজনের খোঁজ নিয়ে তাদেরকে এ খবর জানাতে অনেক চেষ্টা করেও ব্যর্থ হন। একদিন পরে মাহবুবুল আলমের ভাই শামসুল আলম এ ঘটনার কথা জানতে পেরে চমেক হাসপাতালে ছুটে যান কিন্তু সেখানে তখন গিজগিজ করছিল পাকিস্তানি সৈন্য, তাদের চোখকে ফাঁকি দিয়ে ঢোকার কোন উপায় ছিল না। ফিরে আসতে বাধ্য হন তিনি। দু একদিন পর পাঞ্জাবি সৈন্যরা আরো অনেক বাঙালির লাশের সাথে মাহবুবুল আলমের লাশও চমেক হাসপাতালের খেলার মাঠের দক্ষিণ-পূর্ব কোণায় টিলার মত একটি জায়গায় গণ কবর দেয়। কিন্তু এ ঘটনা জানা গেল স্বাধীনতার ৩৭ বছর পর ২০০৮ সালের ২৫, ২৬ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের পুনর্মিলনী অনুষ্ঠানে। সেখানে একজন প্রাক্তন ছাত্রের স্মৃতিচারণে বেরিয়ে আসে মাহবুবুল আলমের গণসমাধির ঘটনাটি। ডাক্তার ওমর ফারুক নামে কলেজের দশম ব্যাচের ওই ছাত্র তখন মেডিকেলে আটকা পড়েছিলেন। একদিন তিনি লক্ষ করেন পাকিস্তানি সৈন্যরা অনেকগুলো মৃতদেহ হাসপাতাল থেকে বের করে পূর্বোক্ত জায়গায় সদ্য খোঁড়া একটি গর্তে একটির ওপর আরেকটি গাদাগাদি করে রেখে মাটি চাপা দিচ্ছে। এই করুণ অভিজ্ঞতার প্রত্যক্ষদর্শী হওয়ার যে যাতনা, তা তিনি ৩৭ বছর ধরে নিজের মধ্যেই চেপে রেখেছিলেন, প্রকাশ করেন নি কারো কাছে। কলেজের পুনর্মিলনীতে স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে তিনি ফিরে গিয়েছিলেন ৩৭ বছর পেছনে এবং পুরোনো সতীর্থ ও সহপাঠীদের মাঝে নিজেকে আবিষ্কার করে চাপা দিয়ে রাখা তাঁর স্মৃতির ঝাপি আপনা থেকেই খুলে যায় তাঁর অজান্তেই।
শহীদদের গণকবরের পাশেই বাহ্যজ্ঞানরহিত অর্ধনগ্ন একজন ফকিরের আখড়া ছিল। তিনি ঐ এলাকায় ঘুরে ফিরে বিশেষ একটি স্থানে বিটপিতলে ধ্যানমগ্ন হয়ে যেতেন। তাঁর কিছু ভক্তও জুটে গিয়েছিল, যাঁরা মনে করতেন ঐ ফকির ছিলেন একজন সিদ্ধপুরুষ। তিনি ‘কামেল’ ছিলেন কি ছিলেন না এই বিতর্কে না গিয়েও আমরা নির্দ্বিধায় এটুকু বলতে পারি যে, পাকিস্তান ত এমনিতেই মরতে বসেছিল, ফকির বেঁচে থাকলেও পাকিস্তান সেই মৃত্যুই বরণ করতো। কিন্তু কে বুঝাবে আহাম্মক, বর্বর পাকিস্তানি হায়েনাদের, তারা একদিন সেই ফকিরকেও হত্যা করে সেখানেই মাটি চাপা দেয়। মৃত্যুর পর মানুষের মৃতদেহের যে সম্মান প্রাপ্য হয়, সেই সম্মানটুকুও দেয়ার সদিচ্ছাও হারিয়ে ফেলেছিল পাকি সৈন্যরা। স্বাধীনতার পর ফকিরের ভক্তরা তাঁর সমাধিস্থলে প্রতি দিনান্তে সাঁঝবাতি জ্বালিয়ে দিত। বেশ কয়েক বছর ফকিরের শিষ্যরা তাঁর কবরে মোমবাতি জ্বালিয়েছিল। এটা যেমন ডাক্তার ওমর ফারুক দেখেছেন, তেমনি দেখেছেন মাঠের পশ্চিম পাশে মেডিকেল স্টাফ কোয়ার্টারে বসবাসরত প্রবীণ বাসিন্দারা।
চেরাগী পাহাড় আলোই ছড়ায় চেরাগী পাহাড় আলোই ছড়ায়, কখনো ধর্মের, কখনো স্বাধীনতার। বদর আউলিয়ার চেরাগ জ্বালিয়ে জ্বীন-পরী, ভূত-প্রেত তাড়ানোর কাহিনী সত্য, না কি জনশ্রæতি, সে বিচারে না গিয়েও বলা যায় যে, ঐ কাহিনীর অলৌকিকতায় চট্টগ্রাম স্থায়ীভাবে আলোর প্রতীকে পরিণত হয়েছে।
ভাবতে তো ভালোই লাগে যে চট্টগ্রামে একটি বাতিঘর আছে, যার আলো শুধু চট্টগ্রাম নয়, কখনো বাংলা কখনো ভারতকেও আলোকিত করেছে। দূর সমুদ্রে দিশেহারা নাবিককে পথ দেখানোর জন্য আক্ষরিক অর্থেই এক বাতিঘর আছে চট্টগ্রামের কুতুবদিয়ায়। সভ্যতার পিলসুজ প্রজ্বলন্ত রাখার সাধনাই করে এসেছে পাহাড় ও সমুদ্রদুহিতা চট্টগ্রাম।
চেরাগ একটি প্রতীক, যার অর্থ বাতি। চাটিও চালু আছে, অর্থ সেই বাতিই। আশ্চর্য! চট্টগ্রাম-এর নামের সঙ্গেই এমন একটি প্রতীক জড়িয়ে আছে, যার অর্থও বাতি বা প্রদীপ। বাতি আলো দেয়, অন্ধকার দূরীভূত করে। নামের এই প্রতীকায়ন কিংবা প্রতীকায়িত নামই চট্টগ্রামের অগ্রবর্তিতা প্রমাণিত করে।
স্বনামধন্য নূর আহমদ চেয়ারম্যান যখন শত শতকের ত্রিশের দশকে উপমহাদেশে প্রথম চট্টগ্রাম পৌরসভায় বাধ্যতামূলক অবৈতনিক প্রাথমিক শিক্ষা চালু করেন, তখন সত্যিই চট্টগ্রাম আলোর দিশারী হয়ে যায়। সে আলো শিক্ষার।
তারও আগে, ১৯২১ সালে যখন চট্টগ্রাম থেকে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে অসহযোগ আন্দোলনের সূচনা হয়, তখন চট্টগ্রাম ভারতীয় স্বাধীনতা সংগ্রামের পথপ্রদর্শক হয়ে যায়। মহাত্মা গান্ধী দ্ব্যর্থহীন কণ্ঠে চট্টগ্রামকে এই বলে অভিনন্দন জানিয়েছিলেন যে, “ঈযরঃঃধমড়হম ঃড় ঃযব ভড়ৎব”.
১৯৩০ সালে যখন মাস্টারদা সূর্য সেনের নেতৃত্ব চট্টগ্রামের যুব বিদ্রোহীরা অস্ত্রাগার দখল করে স্বাধীনতার পতাকা উড়িয়েছিলেন, তখন তাঁরা সর্বভারতীয় নেতৃবৃন্দের কাছে একটি বাণীই পৌঁছে দিয়েছিলেন ভারতবর্ষের স্বাধীনতা আপোষের চোরাগলিপথে নয়, বিপ্লব ও সংগ্রামের প্রশস্ত রাজপথেই আসতে পারে।
১৯৫২ সালের একুশে ফেব্রæয়ারি মাতৃভাষার মর্যাদা রক্ষার জন্য ছাত্ররা বুকের রক্তে ঢাকার রাজপথ রাঙিয়ে তুললে চট্টগ্রামে রোগশয্যায় শুয়ে যুবক মাহবুব উল আলম চৌধুরী যখন কৃষ্ণচূড়ার থোকার মত বাংলা বর্ণমালার স্তবকে দ্রোহের ভাষ্য রচনা করেন, সেটাও পরবর্তীকালে একুশের প্রথম কবিতার শিরোপা নিয়ে ইতিহাস হয়ে যায়।
এমনি কত ইতিহাস, কত আলোর পথ বেয়ে একাত্তরে বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণা ও স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের স¤প্রচার সূচনা হয়েছিল চট্টগ্রাম থেকেই।
২৮ মার্চ চেরাগী পাহাড় মোড়ে বশর, জাফর, দীপক ও মাহবুবল আলম আত্মবলিদান করে চেরাগী পাহাড়ে নতুন আলো প্রজ্বলিত করেন। বদর আউলিয়ার চেরাগ তখন আর কিংবদন্তী থাকে না, বশর-জাফর-দীপক-মাহবুবের রক্তের বাস্তবতায় তাকে প্রতীকী তাৎপর্যে নতুন ভাবে উদ্ভাসিত করে তোলে।