
গতকাল ৫ জুন বিশ্ব পরিবেশ দিবস উপলক্ষে চট্টগ্রাম ইতিহাস চর্চা কেন্দ্রের উদ্যোগে চট্টগ্রামের কর্ণফুলী নদী, হালদা নদী, শঙ্খ নদী ও চট্টগ্রামের ছোট-বড় পাহাড়, দিঘী, জলাশয়, কৃষি জমি রক্ষা এবং রাস্তার দুপাশে ও গ্রামীণ জীবনের রাস্তাগুলোতে সামাজিক বনায়নসহ পরিবেশসম্মত চট্টগ্রাম জেলা ও সমুদ্র উপকূলীয় সন্দ্বীপ, হাতিয়া, মিরসরাই, সীতাকু-, পতেঙ্গা, আনোয়ারা, বাঁশখালী, চকরিয়া, মহেশখালী, কক্সবাজার, কুতুবদিয়া, সেন্টমার্টিন দীপসহ সমুদ্রবর্তী এলাকায় বৃক্ষরোপণের মাধ্যমে পরিবেশের উন্নয়ন এবং চট্টগ্রামের ক্ষতি না হয় এবং পরিবেশের উন্নয়ন হয় এমন ১৩টি দাবি সম্বলিত একটি স্মারকলিপি বাংলাদেশের সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বরাবরে চট্টগ্রামের মাননীয় বিভাগীয় কমিশনার ড. মো. আমিনুর রহমান এনডিসি মহোদয়ের মাধ্যমে প্রদান করা হয়।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন চট্টগ্রাম ইতিহাস চর্চা কেন্দ্রের সভাপতি ইতিহাসবেত্তা সোহেল মো. ফখরুদ-দীন, সীতাকু- তাহের মঞ্জুর কলেজের অধ্যক্ষ মুকতাদের আজাদ খান, কবি দেলোয়ার হোসেন মানিক, প্রাবন্ধিক ও চট্টলানামা পত্রিকার সম্পাদক নাজমুল হক শামীম প্রমুখ। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরের বাস্তবায়নের দাবিতে উল্লেখিত দাবিসমূহ হলো: (১) কর্ণফুলী নদীকে বাঁচিয়ে রাখতে হবে পরিবেশগতভাবে। নদী খনন করতে হবে। নদীতে দূষিত পানি ও কলকারখানার বর্জ্য ফেলা থেকে বিরত রাখতে হবে। নদীর পানিকে স্বচ্ছ রাখতে দু’কূলের মানুষকে সচেতন করতে হবে। কর্ণফুলী নদীর দু’ধারে ভূমিদস্যু দ্বারা দখলকৃত নদীকে পুনরুদ্ধার করতে হবে। কর্ণফুলী নদীকে নিজের মতো নিজেকে চলতে দিতে হবে। কর্ণফুলী নদী বাঁচলে চট্টগ্রাম বাঁচলে। চট্টগ্রাম বাঁচলে বাংলাদেশ বাঁচবে। (২) চট্টগ্রাম শহরে আজপর্যন্ত টিকে থাকা ছোট-বড় পাহাড়গুলো ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষা করতে হবে। (৩) চট্টগ্রাম শহরের নদ-নদী ও জেলায় অবস্থিত প্রত্যেক নদ-নদীকে রক্ষা করতে হবে। (৪) শঙ্খ নদী, ডলুর খাল, বরুমতী খাল, চাঁদখালী খাল, ফেনী খাল, হালদা নদী ও চাক্তাই খালসহ এই অঞ্চলের নদীগুলো রক্ষায় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। (৫) উত্তর চট্টগ্রাম ও দক্ষিণ চট্টগ্রাম-এর পূর্ব অঞ্চলে অবস্থিত পাহাড়গুলো রক্ষার জন্য প্রয়োজনে আইন পরিবর্তন করে নতুন আইন তৈরির মাধ্যমে পাহাড়গুলোকে অক্ষত রাখতে হবে। এই অঞ্চলের পাহাড়গুলোতে ফলজ, বনজ ও ঔষধি গাছ রোপণের মাধ্যমে বনায়ন ও ফরেস্ট ডিপার্টমেন্টকে আরও শক্তিশালী করতে হবে। পাহাড় থেকে মূল্যবান বৃক্ষ কর্তন ও অসাধু কর্মকর্তা ও ব্যবসায়ী কর্তৃক মূল্যবান বৃক্ষ কর্তন করলে তাদের আইনগত ব্যবস্থায় আনতে হবে। (৬) চট্টগ্রাম জেলার নদ-নদীগুলোর দুইপাশে এবং মহাসড়কের দুইপাশে বৃক্ষরোপণের মাধ্যমে পরিবেশসম্মত চট্টগ্রামকে সাজিয়ে তুলতে হবে। (৭) চট্টগ্রাম শহরের সুখ ও দুঃখের খ্যাত চাক্তাই খালকে পরিবেশসম্মতভাবে চলতে ও নদীর দু’ধারে প্রশস্ত জায়গাগুলোতে বৃক্ষরোপণ এবং নদীর প্রকৃত জায়গা ভূমিদুস্যদের দখল থেকে ফিরিয়ে নিতে হবে। (৮) চট্টগ্রাম শহরের কোনো পাহাড় কাটা চলবে না। যে পাহাড়গুলো রয়েছে সেই পাহাড়গুলোতে বৃক্ষরোপণ করতে হবে। (৯) চট্টগ্রাম জেলার বঙ্গোপসাগরের তীরবর্তী প্রত্যেক উপজেলার উপকূলীয় এলাকায় সরকারি উদ্যোগে বৃক্ষরোপণের মাধ্যমে ঐ অঞ্চলকে পরিবেশসম্মত ও সমুদ্রের ভাঙন থেকে মানুষকে বাঁচিয়ে রাখতে হবে। (১০) প্রত্যেক মানুষকে সচেতন করে প্লাস্টিক পণ্য ও অপচন-জাতীয় ও পলিথিন ব্যবহার নিষিদ্ধ করতে হবে। (১১) প্রধানমন্ত্রীর আহ্বানকে সফল করার লক্ষ্যে প্রত্যেক মানুষকে দুটি করে বৃক্ষরোপণ, বাড়ির আশপাশে বৃক্ষরোপণ, বাড়ির ধারে কৃষিজমি ও রাস্তার দু’ধারে সবজির চাষসহ বৃক্ষরোপণ করার জন্য আরও অধিক পরিমাণ উৎসাহ দিতে হবে। (১২) জনসাধারণের মাঝে স্লোগানে স্লোগানে জীবন বাঁচিয়ে রাখতে পরিবেশ ও বৃক্ষের প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম ও পরিবেশের মাধ্যমে অক্সিজেন নিয়ে মানুষকে বেঁচে থাকতে হয়, সে বিষয়ে সচেতনতা গড়ে তুলতে হবে। (১৩) চট্টগ্রাম বিভাগে সাগরদ্বীপ, যেমনÑসন্দ্বীপ, হাতিয়া, মহেশখালী, কুতুবদিয়া, সেন্টমার্টিনকে পরিবেশগতভাবে বৃক্ষরোপণ ও অন্যান্য সুযোগ-সুবিধার সমন্বয়ে উন্নয়ন করতে হবে এবং সমুদ্রের ভাঙন থেকে আধুনিক পৃথিবীর অন্যান্য দ্বীপের ন্যায়ে প্রযুক্তিগত মেধা ব্যবহার করে এগুলোকে রক্ষা করতে হবে।