বুধবার - ১৮ই জুন, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ - ৪ঠা আষাঢ়, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ - ২২শে জিলহজ, ১৪৪৬ হিজরি

গোপালগঞ্জের কাশিয়ানীতে চলছে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের মহোৎসব

গোপালগঞ্জের কাশিয়ানীতে চলছে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের মহোৎসব

 

গোপালগঞ্জের কাশিয়ানীতে ড্রেজার মেশিন বসিয়ে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের মহোৎসব চলছে। এতে জমি ভেঙ্গে এবং ফসলি জমির হারিয়ে নিঃস্ব হচ্ছে বহু পরিবার। অভিযোগ জানিয়েও মিলছে না প্রতিকার। প্রশাসন বলছে, অবৈধ বালু উত্তোলন বন্ধে অভিযান চলছে।

মঙ্গলবার (১০-জুন) দুপুরে উপজেলাধীন সিংগা ইউনিয়নের রাম বাজার এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, বালু উত্তলনের বিশাল কর্মযজ্ঞ। একের পর এক অবৈধ ড্রেজার বসিয়ে ৫০ থেকে দেড়শ ফুট গভীর গর্ত করে উত্তোলন করা হচ্ছে সিলিকা বালু। ভরাট করা হচ্ছে ফসলি জমি, নতুন নির্মিত রাস্তার বেড এবং খাল।

এ ছাড়াও উপজেলাধীন রাজপাট, সিংগা, পুইশুর, হাতিয়াড়া, রাহুথড়, মাহমুদপুর, সোনাডাঙা, খাগড়াবাইড়ে, কুমরিয়া, শ্রীপুর উত্তর পাড়া, গোয়ালগ্রাম দিনের বেলায় প্রকাশ্যে এই কার্যক্রম চলছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক বেক্তি জানান, অদৃশ্য এক নেতার ছত্রছায়ায়, রাস্তার বেড ও খাল ভরাট করা হচ্ছে। শরোজিৎ কর ও তার সহযোগী সিংগা ইউনিয়নের লালু, রাজপাট ইউনিয়নের ছারু ও রুবেল প্রভাবশালী হওয়ায় তাদের বিরুদ্ধে মুখ খুলতে ভয় পান স্থানীয়রা।

স্থানীয় কৃষক রঞ্জিত জানান, অবৈধ বালু উত্তলনের ফলে চাষের জমি নিচের দিকে নেমে যায়। ফলে সেই জমি চাষাবাদের অযোগ্য হয়ে পড়ে। অবৈধভাবে ফসলি জমি থেকে বালু উত্তলনে নেই কোন নজরদারি। সরকারি কর্মকর্তারা বিষয়টি দেখেও না দেখার ভাণ করছেন।

তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, “প্রতিদিন বালু এভাবে তুলে ফেললে ওই জমি সহ পার্শ্ববর্তী জমি গুলোতে কোন ফসলই তো আর হবে না”।
এ বিষয়ে ভূমি অফিসে ও উপজেলা প্রশাসন বরাবর অভিযোগ করেও কোন লাভ হয়নি। প্রশাসন দেখেও না, আর কোনো গুরুত্বও নাই তাদের।
রাজপাট ইউনিয়নে অবৈধ বালু উত্তলন কারি ছারু বলেন, “আমি সরকারি রাস্তার কাজ করছি। এলজিইডি’র নতুন রাস্তা তৈরি হচ্ছে সেই রাস্তায় বেডে বালু দিচ্ছি। প্রতিদিন সাইডে সিও স্যার আসেন এবং দেখে যান। যদি বালু উত্তলন অবৈধ হতো তাহলে সিও স্যার আল-আমীন নিষেধ করে যেতো”।

জানাযায়, এ দিকে কিছু নাম মাত্র সাংবাদিক অবৈধ বালু উত্তোলনকারীদের কছ থেকে টাকা খেয়ে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের অনুমতি দিচ্ছে। আবার কেউ কেউ পরিচয় দিচ্ছে ইউএনও-এ্যসিল্যান্ডের লোক।

গত ২৮’মে কাশিয়ানী উপজেলার সিংগা ইউনিয়নের রাম বাজার এলাকা সংলগ্ন মোঃ রুবেল নিষিদ্ধ ড্রেজার মেশিন দিয়ে বালু উত্তোলন করছে। এমন সংবাদে নাম মাত্র তিন সাংবাদিক উপস্থিত হয় এবং এ্যসিল্যান্ড অফিসের লোক পরিচয় দেন। এ্যসিল্যান্ড অফিসের লোক শুনেই “শমোর” নামক এক বৃদ্ধ বেক্তি দৌড়ে পালাতে গিয়ে গুরুতর আহত হন। পরে তাকে নিকটস্থ ক্লিনিকে নেয়া হয়।

রাজপাট ইউনিয়ন ভূমি সহকারী(ভারপ্রাপ্ত) অধীর মন্ডলের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, রাজপাট ইউনিয়ন ও সিংগা ইউনিয়নে অবৈধ বালু উত্তোলনের বিষয়ে আমার জানা। অবৈধভাবে ফাসলি জমি থেকে বালু উত্তোলনের বিষয়ে একাধিকবার বাধা দিয়েছি কিন্তু তারা মানছে না। কয়েকবার বালু উত্তলন নিষেধ ও বন্ধ করা হয়েছে। তারপরেও তারা গোপনে বালু উত্তোলন করেই যাচ্ছে। এ বিষয়ে তিনি উর্ধতন কর্তৃপক্ষ’কে জানিয়েছেন কী না প্রশ্নে বলেন, না এখন পর্যন্ত জানানো হয় নি”।

কাশিয়ানী উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মুনমুন পাল বলেন, ‘বালু উত্তোলন এবং ফসিল জমি ভরাট করা সম্পূর্ণ বে-আইনি। অবৈধ ড্রেজার মেশিন দিয়ে বালু উত্তোলন বন্ধ এবং উত্তোলনকারী চক্রটির বিরুদ্ধে তদন্ত করে দ্রুত আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

Share on facebook
Facebook
Share on twitter
Twitter
Share on linkedin
LinkedIn