সোমবার - ২৩শে জুন, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ - ৯ই আষাঢ়, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ - ২৭শে জিলহজ, ১৪৪৬ হিজরি

‘খ্রিস্টান মিশনারী সদস্য’ কথাটি গুজব,হাটহাজারী মাদ্রাসার সেই শিক্ষার্থী একজন নওমুসলিম

 

জামিয়া দারুল উলূম হাটহাজারী মাদ্রাসায় খ্রিস্টান মিশনারীর সদস্য সন্দেহে এক শিক্ষার্থীকে বেধড়ক পিটুনির রহস্য উদঘাটন হয়েছে। মূলত পূর্ব শত্রুতার জেরে খ্রিস্টান গুপ্তচর সাজিয়ে মাহমুদুল হাসান নামে এই নওমুসলিম শিক্ষার্থীকে মারধর করেছে মাদ্রাসাটির একদল ছাত্র।পরে তাকে মাদ্রাসা থেকেও বহিষ্কার করা হয়।

বৃহস্পতিবার (২৪ আগস্ট) দুপুরের দিকে হাটহাজারী মাদরাসার ভেতরে এ ঘটনা ঘটে।

মারধরের শিকার মাহমুদুল হাসান রাঙামাটি জেলার কাউয়াছড়ির কামাল উদ্দিনের পুত্র। তাঁর পুরো পরিবার নওমুসলিম। এদের মধ্যে পিতা কামাল উদ্দিন একটি মসজিদের ইমাম হিসেবে দায়িত্বপালন করেন।

মাদ্রাসার কয়েকটি বিশ্বস্ত সূত্রে জানা যায়, নওমুসলিম মাহমুদুল হাসান গত তিন বছর আগে হাটহাজারী মাদ্রাসায় ভর্তি হন।বর্তমানে তিনি দেশের বৃহত্তম এই কওমি মাদ্রাসার হিদায়াতুন্নাহু জামাত শ্রেণিতে অধ্যয়নরত। তবে গত কয়েকমাস ধরে মাদ্রাসার কয়েকজন প্রভাবশালী ছাত্রের তার মনোমালিন্য চলছিলো ।এই ছাত্ররা তাকে বিভিন্নভাবে হুমকি ধমকিও দিয়েছিল।এরমধ্যে আজ বৃহস্পতিবার সকালে কয়েকজন ছাত্র মাদ্রাসায় খ্রিস্টান মিশনারী সদস্য ধরা পড়েছে বলে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেন ও শিক্ষার্থীদের মাঠে আসতে বলেন।এরমধ্যে শিক্ষার্থী মাহমুদুলকেও মাঠে নিয়ে আসা হয়।এরপর তাকে কোন কথা বলার সুযোগ না দিয়ে বেধড়ক পিটুনি দেয়া হয়।পরে মাদ্রাসার শিক্ষকরা এই শিক্ষার্থীকে উদ্ধার করে নিয়ে যায়।

জানা যায়, শিক্ষার্থী মাহমুদুলকে হেফাজতে নিয়ে আসার পর বৈঠকে বসেন মাদ্রাসার কর্তৃপক্ষ। একপর্যায়ে এই শিক্ষার্থীকে মাদ্রাসা থেকে আজীবনের জন্য বহিষ্কার করা হয়।এই বিষয়ে মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ একটি লিখিত বিবৃতিও দেন। সেই বিবৃতিতে মাহমুদুলুকে ভর্তি জালিয়াতি ও মাদ্রাসার শৃঙ্খলাবিরোধী কাজে জড়িত থাকার অভিযোগে বহিষ্কার করা হয়েছে বলে দাবি করা হয়।

এদিকে বিষয়টি নিয়ে জানতে হাটহাজারী মাদ্রাসার মহাপরিচালক মাওলানা খলিল আহমদ কাশেমীকে ফোন দেয়া হলেও তিনি রিসিভ করেননি। সহযোগী পরিচালক মুফতি জসিম উদ্দিনকে ফোন দিলে সাংবাদিক পরিচয় পেয়ে ফোন কেটে দেন। তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মাদ্রাসার এক দায়িত্বশীল শিক্ষক বলেন, ‘খ্রিস্টান মিশনারী,গুপ্তচর এগুলো ভুয়া কথা।আসল কথা হচ্ছে মাহমুদুল ছেলেটা উশৃংখল। সে বেশ কয়েকবার ছাত্র- শিক্ষকদের সাথে খারাপ আচরণ করেছিল।তার উপর অনেকেই ক্ষুব্ধ ছিলো।মূলত এই ক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরাই আজকে তাকে মারধর করেছে।

তিনি বলেন, কোন শিক্ষার্থীর অপরাধের শাস্তি দেবেন শিক্ষকরা। সেখানে ছাত্ররা কেন এই দায়িত্ব নিতে গেলো সেটা আমার বোধগম্য হচ্ছেনা।তাও এভাবে ফেসবুকে লাইভ করে!এভাবে করা কিছুতেই উচিত হয়নি।এতে মাদ্রাসার সুনাম ক্ষুন্ন হয়েছে।

হাটহাজারী মাদ্রাসা থেকে প্রকাশিত মাসিক মইনুল ইসলাম পত্রিকার নির্বাহী সম্পাদক মাওলানা মুনির আহমদ বলেন,”হিদায়াতুন্নাহু জামাতের একজন ছাত্রকে ভর্তি জালিয়াতিসহ জামিয়ার অভ্যন্তরীণ আইন ও শৃঙ্খলাবিরোধী কাজে জড়িত থাকায় আজ (বৃহস্পতিবার) জামিয়া দারুল উলূম হাটহাজারী থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে।এই নিয়ে বিভ্রান্তিমূলক পোস্ট/প্রচারণা থেকে বিরত থাকার জন্য জামিয়া দারুল উলূম হাটহাজারী মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ সকলের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে।”

Share on facebook
Facebook
Share on twitter
Twitter
Share on linkedin
LinkedIn