বুধবার - ১৯শে মার্চ, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ - ৫ই চৈত্র, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ - ১৯শে রমজান, ১৪৪৬ হিজরি

কুষ্টিয়া আদালতের কাঠগড়ায় ইনু-জর্জকে হাতকড়া পরিয়ে উঠানো নিয়ে উত্তপ্ত এজলাশ কক্ষ

কুষ্টিয়া আদালতের কাঠগড়ায় ইনু-জর্জকে হাতকড়া পরিয়ে উঠানো নিয়ে উত্তপ্ত এজলাশ কক্ষ

 

কুষ্টিয়া মডেল থানায় দায়ের করা হত্যাচেষ্টা মামলায় কুষ্টিয়ার দুই প্রাক্তন সংসদ সদস্য হাসানুল হক ইনু এবং সেলিম আলতাফ জর্জকে আদালতে হাজির করা হয়েছে।

মঙ্গলবার (১১ মার্চ) দুপুরের দিকে দুই প্রাক্তন সংসদ সদস্যকে কুষ্টিয়া সদর আমলী আদালতে হাজির করা হয়।

সেই সময় ইনুর আইনজীবী তার জামিনের আবেদন করেন। তবে আদালত জামিন নামঞ্জুর করে ইনু ও তাদের দুজনকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেয়।

এদিকে, আদালত কক্ষে হাতকড়া পরানো নিয়ে হাসানুল হক ইনু এবং তার আইনজীবীদের পুলিশের সাথে তর্কাতর্কি হয়। এতে আদালত কক্ষে উত্তপ্ত পরিবেশ তৈরি হয়।

আদালত সূত্রে জানা গেছে, গত বছরের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতা আন্দোলনের সময় কুষ্টিয়া শহরের আমলাপাড়া এলাকার শরিফুল ইসলাম নামে এক যুবক গুলিবিদ্ধ হন। তার হাতে ও পায়ে এখনও গুলি রয়েছে। একই বছরের ৩ সেপ্টেম্বর তিনি কুষ্টিয়া মডেল থানায় হত্যাচেষ্টার অভিযোগে মামলা দায়ের করেন। মামলায় ৬৪ জনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে এবং ৭০ থেকে ৮০ জন অজ্ঞাত ব্যক্তির নাম উল্লেখ করা হয়েছে। এই মামলায় জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জেএসডি) সভাপতি হাসানুল হক ইনুকে অভিযোগে ৩৭ নম্বর আসামি এবং কুষ্টিয়া-৪ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য সেলিম আলতাফকে ৩৩ নম্বর আসামি করা হয়েছে।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, কুষ্টিয়া কারাগার থেকে কড়া নিরাপত্তার মধ্যে একটি প্রিজন ভ্যানে করে আদালত ভবনের দ্বিতীয় তলায় সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মাহমুদা সুলতানার আদালতে নিয়ে যাওয়া হয়। এ সময় ইনু এবং জর্জকে হাতকড়া পরিয়ে উভয় হাত সামনে রাখা হয়। উভয়ের মাথায় পুলিশের হেলমেট এবং শরীরে পুলিশ জ্যাকেট ছিল। দুপুর ২:১০ টার দিকে উভয়কেই আদালতে নিয়ে যাওয়া হয়। সেই সময় হাসানুল হক ইনু হাতকড়া পরা অবস্থায় কাঠগড়ায় থাকার বিষয়ে আপত্তি জানান।

ইনুর আইনজীবী তানজিলুর রহমান এবং আকরাম হোসেন বলেন, কাঠগড়ায় তোলার পর একজন পুলিশ অফিসার তাদের বসতে বলেন। তবে বিচারক তখন আদালতে উপস্থিত ছিলেন না। তিনি বসতে চান শুনে হাসানুল হক ইনু উত্তেজিত হয়ে ওঠেন। তিনি হাতকড়া খুলে ফেলতে বলেন। তবে পুলিশ অফিসাররা চুপ করে থাকেন। এক পর্যায়ে ইনু বলতে থাকেন, “হাতকড়া খুলে ফেলো, হাতকড়া খুলে ফেলো। আমি কেন কাঠগড়ায় হাতকড়া পরবো?” তবে সেলিম আলতাফ পুরো সময় চুপ করে থাকেন।

হাসানুল হক ইনু এবং তার আইনজীবীদের সাথে পুলিশ অফিসারদের এই নিয়ে তর্ক হয়। এতে উত্তপ্ত পরিবেশ তৈরি হয়। এর কয়েক মিনিট পর, একজন পুলিশ অফিসার বিচারকের ব্যক্তিগত কক্ষে যান। সেখান থেকে ফিরে এসে তিনি হাসানুল হক ইনুর একজন হাত থেকে হাতকড়া খুলে ফেলেন। পুলিশের সাব-ইন্সপেক্টর জিলানী সেলিম আলতাফের হাতকড়া খুলে ফেলার চেষ্টা করলে তিনি তাকে তা করতে দেননি। তার প্রচেষ্টা সত্ত্বেও, পুলিশ তাদের সরাতে পারেনি।

কয়েক মিনিট পর, যখন আদালতের কার্যক্রম শুরু হয়, তখন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী আকরাম হোসেন হাসানুল হক ইনু জামিনের আবেদন করেন। শুনানির পর, সাব-ইন্সপেক্টর জিলানী অভিযুক্তদের জামিন না দেওয়ার পক্ষে যুক্তি উপস্থাপন করেন।

ইনুর আইনজীবী আকরাম হোসেন বলেন, এক পর্যায়ে সেলিম আলতাফ জর্জ বিচারকের কাছে কথা বলার অনুমতি চান। অনুমতি নিয়ে তিনি হাতকড়া হাত তুলে বলেন, যখন একজন আসামিকে হাতকড়া পরানো হয়, এবং আদালত যদি তা দেখে, তাহলে বুঝতে হবে যে হাতকড়া সম্পূর্ণ বিচার বিভাগের (পুরো বিচার ব্যবস্থার) হাতে।

সেই সময় আদালত তাকে হাতকড়া খুলে ফেলতে বলে। তবে, সেলিম আলতাফ তাকে হাতকড়া খুলতে দেননি। বিচারক তাদের কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন। সব মিলিয়ে তারা প্রায় ২০ মিনিট কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে ছিলেন। পুলিশ দ্রুত হাসানুল হক ইনু এবং সেলিম আলতাফ জর্জকে বের করে একটি প্রিজন ভ্যানে তুলে দেয়। আদালত কক্ষ থেকে বেরিয়ে প্রিজন ভ্যানের কাছে যাওয়ার সময়, ইনু হেসে আদালত প্রাঙ্গণে একটু দূরে দাঁড়িয়ে থাকা দলীয় নেতাকর্মীদের দিকে হাত নাড়লেন। সেই সময় তাঁর এক হাতে হাতকড়া ছিল। পাশে থাকা সেলিমও হাত তুলে ইশারা করলেন। তবে, তাঁর দুই হাতেই হাতকড়া ছিল।

কারাগারে নিয়ে যাওয়ার সময় ইনু হেসে বললেন, “আমি লাউ এবং কুমড়ো উভয়ের বিরুদ্ধে।”

প্রিজন ভ্যান দ্রুত তাদের কারাগারে নিয়ে গেল। নেতাকর্মীরা তাঁর পিছনে দৌড়ে হাত নাড়লেন, “কেমন আছেন? কেমন আছেন?”

আইনজীবী তানজিলুর রহমান বলেন, আদালত কক্ষে বিচার চলাকালীন অভিযুক্তদের হাতকড়া পরিয়ে রাখার কোনও আইন নেই। এ নিয়ে আদালত বেশ উত্তপ্ত হয়ে ওঠে।

এই বিষয়ে কুষ্টিয়া আদালত পরিদর্শক জহুরুল ইসলাম বলেন, দুজনের হাজিরার তারিখ ছিল। একজন জামিনের আবেদন করেছিলেন। জামিন নামঞ্জুর করা হয়। পরে তাদের কারাগারে পাঠানো হয়। হাতকড়া পরিয়ে কাঠগড়ায় তোলার বিষয়ে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি আরও বলেন, “এটা আদালতের ব্যাপার। আমরা তাদের এভাবেই হাতকড়া পরিয়ে নিই। আদালত যা সিদ্ধান্ত নেবে, তাই হবে। পরে আদালত বলে, ‘হাতকড়া খুলে ফেলো।’ আমরা তাদের খুলে ফেলি। আদালত যা নির্দেশ দেবে, তাই হবে। আদালত আদেশ দিয়েছে, আমরা হাতকড়া খুলে ফেলি।” জর্জের কাঠগড়ায় হাতকড়া পরার বিষয়ে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেন, আমরা তা করিনি।

Share on facebook
Facebook
Share on twitter
Twitter
Share on linkedin
LinkedIn