শনিবার - ২২শে মার্চ, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ - ৮ই চৈত্র, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ - ২২শে রমজান, ১৪৪৬ হিজরি

কুমিল্লা পদুয়ার বাজার বিশ্বরোডে টিআই ও সার্জেন্টের রমরমা টোকেন বাণিজ্য

কুমিল্লা পদুয়ার বাজার বিশ্বরোডে টিআই ও সার্জেন্টের রমরমা টোকেন বাণিজ্য

 

কুমিল্লায় অভিনব কায়দায় চলছে ট্রাফিক পুলিশের রমরমা টোকেন বাণিজ্য। রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর কিছুদিন থেমে থাকলেও নতুন উদ্যমে আবার শুরু হয়েছে এ কাজ। এর আগে অর্থের বিনিময়ে সিএনজিচালিত অটোরিকশার সামনের গ্লাসে টোকেন স্টিকার লাগিয়ে চালানো হতো। তবে বাণিজ্যের কৌশল পাল্টেছে।

৫ আগস্টের পর থেকে টোকেনে মোবাইল নম্বর ও গোপন চিহ্ন লাগিয়ে দেওয়া হচ্ছে। এর নাম দেওয়া হয়েছে টিআই-সার্জেন্ট টোকেন। স্টিকার বাবদ সরাসরি কিংবা নিজস্ব দালালের মাধ্যমে আগে নেওয়া হতো ৬০০ টাকা। এখন তা বৃদ্ধি করে ১০০০ থেকে ১২০০ টাকা পর্যন্ত করা হয়েছে। কুমিল্লা পদুয়ার বাজার বিশ্বরোড এলাকায় দায়িত্বে থাকা ট্রাফিক ইন্সপেক্টর তোফায়েল ও সার্জেন্ট তারেকসহ কয়েকজনের নেতৃত্বে টোকেন বাণিজ্য পরিচালিত হচ্ছে। মাসিক টোকেন না নিলে সার্জেন্ট তারেক ট্রাফিক পুলিশের কনস্টেবল এমরানকে দিয়ে অনটেস্ট সিএনজি অটোরিকশা আটকান। পরে মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে ছাড়া হয় সেই অটোরিকশা। তাই নিরুপায় হয়ে টোকেনের নামে পুলিশকে চাঁদা দিতে বাধ্য হন চালকরা। এটি কুমিল্লা পদুয়ার বাজার বিশ্বরোড চৌরাস্তার প্রায় প্রতিদিনের চিত্র। এছাড়া বিভিন্ন পরিবহণ কাউন্টার থেকে ব্যানারপ্রতি ১০০০ টাকা করে মাসে দিতে হচ্ছে টিআইকে। টিআই ও সার্জেন্টদের টোকেনের চাঁদার ভাগ কনস্টেবল থেকে শুরু করে বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তারা পেয়ে থাকেন।

অনুসন্ধানে জানা যায়, স্টিকারের মতো একটি নম্বরসংবলিত টোকেন চালকদের দেওয়া হয়। টহল বা ট্রাফিক পুলিশ গাড়ি আটকালে ওই টোকেন দেখালেই মেলে দ্রুত ছাড়ের সিগন্যাল। না হলে নানা অজুহাতে আটকানো হয় গাড়ি। মাঠপর্যায়ের কয়েকজন দালাল ও পুলিশের যোগসাজশে টোকেন বাণিজ্য চলছে।

সরকারের পরিবর্তনের পর টোকেন বাণিজ্যে দালালদেরও পরিবর্তন এসেছে। পতিত সরকারের আমলেও পুলিশের টোকেন বাণিজ্য করে অনেক দালাল রাতারাতি আঙুল ফুলে কলাগাছ হয়েছে। এখনো ট্রাফিক পুলিশের কর্তাদের পকেটে যাচ্ছে টোকেন ও চাঁদাবাজির লাখ লাখ টাকা। ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানের পর প্রেক্ষাপট পরিবর্তন হলে টোকেন বাণিজ্যে ভাটা পড়ে। মাঝখানে কিছুদিন পুলিশও ছিল নিষ্ক্রিয়। কিন্তু কিছুদিন যেতে না যেতেই আবার স্বরূপে ফিরেছেন টিআইর নেতৃত্বে কিছু অসাধু সার্জেন্ট।

সিএনজিচালিত অটোরিকশাচালক আব্দুল্লাহ বলেন, ‘টিআই ও সার্জেন্ট স্যারের টোকেনে কুমিল্লা পদুয়ার বাজার বিশ্বরোড থেকে কান্দিরপাড় রোডে গাড়ি চালাচ্ছি। শুধু আমি নই, আমার মতো কয়েকশ চালক এভাবে টাকা দিয়ে টোকেন নিয়ে গাড়ি চালাচ্ছেন। এই টোকেন থাকলে শহরের কোথাও সমস্যায় পড়তে হয় না। আমি প্রতি মাসে টোকেন বাবদ এক হাজার টাকা চাঁদা দিই।

নাম প্রকাশ করতে অনিচ্ছুক কয়েকজন সিএনজিচালক জানান, কুমিল্লায় অবৈধ সিএনজি অটোরিকশা চলাচলের সুযোগ করে দিতে যখন পুলিশ অবৈধভাবে টোকেন বাণিজ্যে নামে, তখন গাড়িপ্রতি মাসে ৬০০ টাকা নেওয়া হতো। ৫ আগস্টের পর টোকেনের দাম চলে যায় গাড়িপ্রতি এক হাজার টাকায়। নভেম্বর থেকে নতুন কৌশলে স্টিকার চালু হয়।

টোকেন বাণিজ্যের বিষয়ে জানতে চাইলে সার্জেন্ট তারেক বলেন, লাইসেন্সবিহীন কিছু অটো, সিএনজি অটোরিকশা চললে তাদের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করে থাকি।

এ বিষয়ে কুমিল্লা পদুয়ার বাজার বিশ্বরোড এলাকায় দায়িত্বে থাকা টিআই তোফায়েল বলেন, আমি কোনো টোকেন বাণিজ্যের সঙ্গে জড়িত নই। পুলিশের কেউ জড়িত থাকলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

Share on facebook
Facebook
Share on twitter
Twitter
Share on linkedin
LinkedIn