মঙ্গলবার - ১৩ই মে, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ - ৩০শে বৈশাখ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ - ১৫ই জিলকদ, ১৪৪৬ হিজরি

কালের বিবর্তনে বিলুপ্তির পথে লাঙ্গল-জোয়াল ও গরু দিয়ে হালচাষ

কালের বিবর্তনে বিলুপ্তির পথে লাঙ্গল-জোয়াল ও গরু দিয়ে হালচাষ

 

সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুরে লাঙল আর গরু দিয়ে হাল চাষ কালের বিবর্তনে প্রায় বিলুপ্তির পথে। এক সময় কৃষি উৎপাদন ও চাষাবাদের অন্যতম উপকরণ হিসেবে কাঠের লাঙ্গল আর গবাদি পশু কৃষকদের ছিলো একমাত্র মাধ্যম। একসময় লাঙল ছাড়া গ্রাম বাংলায় চাষাবাদের কথা চিন্তাই করা যেত না। এখন আধুনিক কৃষি যন্ত্রপাতি (ট্রাক্টর) সে স্থান দখল করায় দিনে দিনে হারিয়ে যেতে বসেছে কাঠের লাঙ্গল আর গবাদি পশু দিয়ে চাষাবাদের সেই দৃশ্য।
আগের দিনে গরু দিয়ে হাল চাষ ও ধান মাড়াইয়ের যে আনন্দ ছিলো, বর্তমানে সেই আনন্দ এখন অনেকটা ভাটা পরে গেছে।সর্বত্রই লেগেছে আধুনিকতার ছোঁয়া। জনসংখ্যা বৃদ্ধির সাথে সাথে কৃষি উৎপাদনেও চলে এসেছে আধুনিকতা। এতে যেমন কৃষকের পরিশ্রম কম হয়, তেমনি সময়ও বেঁচে যায়। এখন আর গরু দিয়ে ধান মাড়াই এবং হাল চাষের দেখাই মেলে না।
জগন্নাথপুর উপজেলার বেশ কয়েকটি গ্রাম ঘুরলেও আগের মতো গরু দিয়ে হালচাষের এমন দৃশ্যের দেখা মিলেনি। এক সময় জগন্নাথপুরসহ আশেপাশের প্রত্যন্ত অঞ্চল গুলোতে চাষাবাদের অন্যতম উপকরণ হিসেবে কাঠের লাঙ্গল ও গবাদি পশুর ব্যবহার ছিলো বেশ চোখে পড়ার মতো। লাঙ্গল ছাড়া গ্রাম-বাংলায় চাষাবাদের কথা চিন্তাই করা যেত না। বিজ্ঞানের আধুনিক প্রযুক্তির ছোয়ায় কাঠের লাঙ্গল এর সেই স্থান দখল করে নিয়েছে আধুনিক প্রযুক্তি। ক্ষেতে-খামারে কৃষকের লাঙ্গল ও মই দিয়ে চাষাবাদের দৃশ্য সবার নজর কাড়তো এক সময়। হাজার বছরের প্রাচীন ঐতিহ্য চাষাবাদের বহু ব্যবহারিক লাঙ্গল আজ বিলুপ্তির পথে। আধুনিক যুগে চাষাবাদের যান্ত্রিক উপকরণ আবিষ্কারের ফলে হারিয়ে যাচ্ছে লাঙ্গল জোয়াল, মই ও হালের বলদ। এসবের ব্যবহার সল্প আয়ের কিছু সংখ্যক কৃষক পরিবারের মধ্যে এখনো কোন রকমে টিকে রয়েছে। দেখা যেত খুব ভোর বেলা প্রান্তিক কৃষক তার ঘাড়ে লাঙ্গল জোয়াল আর মই রেখে এক হাতে গরু শাসনের লাঠি আর অন্য হাতে চাষাবাদের উপযুক্ত দুই বলদের দড়ি ধরে রেখেছে। চাষাবাদ শেষ করে কাদামাখা শরীরে ক্ষেতের আইলে বসে সকালের পান্তা আর কাচা মরিচ পিয়াজ দিয়ে ভাত খেয়ে পেটের ভোগ নিবারণ করতেন কৃষক। বিশ্রাম শেষে আবারও কৃষকের ঠাই ঠাই শব্দ শোনা যেতো। অনেক সময় দেখা যেতো নিজের সন্তানকে মইয়ে বসিয়ে চাষাবাদের জমি সমান করার জন্য ষাড় গরু দিয়ে দাবড়ানো যেন ছোট বেলার স্মৃতিকে মনে করিয়ে দেয়।বর্তমানে আধুনিক প্রযুক্তির যুগে কৃষি কাজে জায়গা করে নিয়েছে যান্ত্রিক যন্ত্র পাওয়ার টিলার। অতি অল্প সময়ে কৃষকের সমস্ত জমি চাষাবাদ সম্পূর্ণ করা যায় এই যন্ত্রের মাধ্যমে। কৃষকের কাঠের লাঙ্গলের চাষ যান্ত্রিক যন্ত্রের চেয়ে যে দ্বিগুণ ভালো তা বলার অবকাশ রাখে না। এখন আর এ অঞ্চলের গ্রাম গঞ্জে কালের সাক্ষী লাঙ্গল, জোয়াল, মই ইত্যাদি সরঞ্জাম সাজিয়ে বাজারে বসতে দেখা যায় না বিক্রেতাদের। অতীতের সেই খামারের ঠক ঠক শব্দও আর কানে আসে না। জগন্নাথপুর উপজেলার বিভিন্ন গ্রামের কৃষকদের সাথে কথা বলে জানা যায়, গরুর লাঙ্গল দিয়ে প্রতিদিন প্রায় ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ জমি চাষ করা সম্ভব হতো। আধুনিক যন্ত্রপাতির থেকে গরুর লাঙ্গলের চাষ গভীর হয়। জমির উর্বরতা শক্তি বৃদ্ধি ও ফসলের চাষাবাদ করতে সার কীটনাশক সাশ্রয় পায়। কিন্তুু আধুনিকতার ছোঁয়ায় এখন আর কেউ গরু দিয়ে হাল চাষ করতে চায় না। আধুনিক প্রযুক্তিতেই সবাই চাষাবাদ করছেন। স্মার্ট বাংলাদেশে আরো আধুনিকতা তৈরী হতে পারে বলেও জানা যায়।

Share on facebook
Facebook
Share on twitter
Twitter
Share on linkedin
LinkedIn