
চট্টগ্রামের ঐতিহাসিক কর্ণফুলীর কালুরঘাটে নতুন সেতু নির্মানের দাবিতে সাংবাদিক সম্মেলন করেছে চট্টগ্রাম নাগরিক ফোরাম।
মঙ্গলবার (৪ জুলাই) চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের এস রহমান হলে চট্টগ্রাম নাগরিক ফোরামে মহাসচিব মো: কামাল উদ্দিনের সঞ্চালনায় এটি অনুষ্ঠিত হয়।
অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন নাগরিক ফোরামের চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার মনোয়ার হোসেন।
লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন,কর্ণফুলীর কালুরঘাটে নতুন সেতু নির্মাণ নিয়ে আপামর চট্টগ্রামবাসী তথা দেশবাসী খুব হতাশ হয়ে গেছেন । বিশেষ করে বোয়ালখালী, চান্দগাঁও, মোহরা, পাঁচলাইশ, আনোয়ার কর্ণফুলী থানা এলাকা, পটিয়া, রাঙ্গুনিয়া সহ চট্টগ্রামের সর্বস্তরের জনগণ এই ইস্যুটি নিয়ে সংশ্লিষ্ট মহলের রহস্যজনক গড়িমসি ও দীর্ঘসূত্রিতার কারণে একধরণের মানসিক আঘাত পেয়েছেন, কারণ এখানকার প্রতিটি নাগরিক আশা করেছিলেন নতুন সেতুটির কাজ এর মধ্যে একদিন না একদিন শুরু হবে। অনেক আশা আর স্বপ্ন ছিল এটি নিয়ে, কিন্তু এখন তাদের প্রশ্ন এই নতুন সেতু কি আদৌ ভরা তাদের জীবদ্দশায় দেখে যেতে পারবেন কিনা।
তিনি আরোও বলেন,সারাদেশের সচেতন প্রতিটি নাগরিকেরা প্রশ্ন- বঙ্গবন্ধুর সুযোগ্য কন্যা বাংলাদেশের সফল প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে যেখানে সারাদেশে শত শত সেতু ও মেগাপ্রকল্প হয়েছে, সেই বিবেচনায় কালুরঘাটে নতুন সেতু নির্মাণ এতোদিনেও যে হয়নি তা ভাবতেও অবাক লাগে। বিশেষ করে বিভিন্ন সময় মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, মন্ত্রী, এম পি ও সংশ্লিষ্ট কতৃপক্ষ এই নতুন সেতুটি হবে বলে একাধিকবার ঘোষনা নিয়ে জনগণকে আশ্চস্থ করেছিলেন বছরের পর বছর।
আজ কেন এ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে তা আপনারা বেশ ভালোভাবেই অবগত । আমরা মনে করি কালুরঘাট নতুন সেতু নিয়ে রেল সচিবের দেয়া সাম্প্রতিক বক্তব্য বিভ্রান্তিকর, দেশবাসীকে দেয়া আগের ঘোষণাগুলির সাথে অসামজস্যপূর্ণ এবং প্রতিশ্রুতির বরখেলাপ। আমরা কি যে যা বলেন ভাই কি মেনে নেবো ? ২০২০ সালে রেল মন্ত্রী এসে জরাজীর্ণ বর্তমান সেতুর উপর দাঁড়িয়ে বলেছিলেন ২০২১ সালে নতুন সেতুর কাজ শুরু হবে, ২৩-২৪ সালে শেষ হবে। এখন উনারই সচিব বলেছেন ২০২৮ সালে সেতু হবে। এই কথা কিসের ভিত্তিতে আসলো? সাতগুণ বড় পদ্মা সেতু কতদিন লেগেছিলো? দোহাজারী-কক্সবাজার নতুন রেল যোগাযাগ শহরের সাথে সংযাগ করতে এতদিন পরে হঠাৎ কেন মনে পড়লো পুরাতনটাকে সংস্কার করার?
ফোরামের চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার মনোয়ার হোসেন বলেন,তিন বছর আগে শুরু করলে এতদিনে নতুন সেতু হয়েই যেতো সম্ভবত দুই তিন হাজার কোটি টাকার মধ্যে। আর ২০২৮ সালে করবে ( যদি আদৌ হয়) ১৪-১৬ হাজার কোটি টাকা খরচ করে। এইটা চূড়ান্ত হচ্ছে, এটা হয়নি, সামনের বছর শুরু হবে, এসব বাণী অনেক শুনলাম। ২০১৪ সালে গৃহিত এই নতুন সেতুর নির্মাণ উদ্যেগের পর থেকে একাধিকবার সম্ভাব্যতা যাচাই করা হয়েছে। সেতুর নকশা বদল করা হয়েছে কয়েক দফা। এসব করতে করতে এভাবে কেটে গেছে ৯ বছর।
যারা এত চালবাজি করছে তারা কি জানেন তারা এভাবে দেশের কত ক্ষতি করছেন? চট্টগ্রাম ৮ আসনে সম্প্রতি এমপি নির্বাচিত হওয়ার পরদিন নোমান আল মাহমুদ সাহেবকে আমি বলেছিলাম, খেয়াল রাখবেন
যেন কালুরঘাট নতুন সেতু নির্মাণ অর্থনৈতিক সংকটের নামে সরকারের অগ্রাধিকার তালিকা থেকে বাদ না যায় এ বিষয়ে কথা বলার জন্য। এই উদ্দেশ্যে আমরা নাগরিক ফোরামের উদ্যোগে গত নভেম্বরে গণ অনশন করে দাবীটিকে জাতীয় ভাবে সামনে নিয়ে এসেছিলাম এবং ফলে গত ৪ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর জনসভা থেকে কালুরঘাট নতুন সেতুটি প্রাধান্য পেয়েছিলো । মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর উপস্থিতিতে এমপি মোসলেম উদ্দিন ঘোষণা করেছিলেন। সেই মঞ্চে প্রধানমন্ত্রীও আশ্বাস দিয়েছিলেন হবে বলে। কিন্তু দুঃখের বিষয়, সম্প্রতি রেল সচিবের দেয়া তথ্য থেকে দেশবাসী চরম হতাশ ও বিভ্রান্ত হয়েছে। আগে বলা হয়েছে, কোরিয়ার সরকার ও ব্যাংক অর্থায়নে প্রস্তুত, এখন বলা হচ্ছে চুক্তি স্বাক্ষরে সময় লাগছে। আর একটি বিষয়, পুরাতন সেতু মেরামত করাটা কোন অবস্থাতেই পাশে একটি নতুন আধুনিক মানের সেতুর বিকল্প নয়। মনে হচ্ছে, সুস্পষ্ট ঘোষণা ছাড়া নতুন সেতু নির্মাণটা আরও বিলম্বিত হতে পারে, অতীতের নাটকের পুনরাবৃত্তি হবে।
এর একটি বিষয় বলা প্রয়োজন। কর্তৃপক্ষ এখন বলছেন, আপাতত। প্রায় ৮০ কোটি টাকা খরচ করে পুরাতন সেতুটিকে নাকি সংস্কার করা হবে যাতে করে চট্টগ্রাম কক্সবাজার রেল সার্ভিস ব্যাহত না হয়। এই বিষয়টি নিয়ে আগে কেন ভাবা হলোনা ? এসব না করলে চট্টগ্রাম কক্সবাজার রেল সার্ভিস চলবে না। সেই মেগাপ্রকল্পের মধ্যেই কালুরঘাট নতুন সেতু করার উদ্যোগ নেয়া হলে অনেক অর্থ ও সময় বেঁচে যেত। এটা প্রমান করে চরম গাফিলতি ও অবহেলা। এখন বলা হয়েছে ২০২৮ সালে সমাপ্ত করতে নতুন সেতুটির জন্য খরচ হবে প্রায় ১৪ হাজার কোটি টাকা। বলা হয়েছে ২০২৪ সালে শুরু হলে নাকি ২০২৮ সালে সমাপ্ত হবে নতুন সেতু । পদ্মা সেতু প্রকল্পের সাথে তুলনা করলে এর খরচ ও সময়সীমা নিয়ে আমাদের কিছু প্রশ্ন আছে। বাংলাদেশ রেলওয়ের মহাপরিচালক কামরুল আহসান দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, খরচ এত বেশি হওয়ার কথা না। আমি তথ্য জেনে তারপর মন্তব্য করতে পারব। এখানে সমন্বয়হীনতার ইঙ্গিত পাওয়া যায় । সর্বোপরি ২০২৪ সালে এই কাজ শুরু হওয়ার কোনো গেরান্টি নেই কাজেই এখন পুরো বিষয়টাই অনিশ্চিত।
এখানে স্পস্টভাবে বলা দরকার, নতুন সেতুটি চট্টগ্রামবাসী কোন দয়া বা ভিক্ষা হিসেবে চাই না। চট্টগ্রাম থেকে দেশের রাজস্বের সিংহভাগ আসে। এটা আমাদের ন্যায্য পাওনা ।
আমরা আপামর চট্টগ্রামবাসী সরকারের কাছ থেকে জানতে চাই, সুনির্দিষ্ট অঙ্গীকার চাই, আর গড়িমসি বাদ দিয়ে কখন এই নতুন সেতুর কাজ শুরু হবে তার নিশয়তা চাই। এর প্রকল্পের সময়সীয়া কমিয়ে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে ২০২৬ সালের মধ্যে সম্পন্ন করতে হবে। এসব লক্ষে একনেকে এবং মন্ত্রিসভা থেকে জরুরিভাবে অনুমোদন নিতে হবে। এসব দাবি নিয়ে আমরা মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। আমাদের রয়েছে তার প্রতি আস্থা ও বিশ্বাস। কিন্তু মহলবিশেষ আপনার সাথে জনগণের এই সম্পর্ক যে কোনো ভাবেই নষ্ট করতে চায়। তবে আমরা এভাবে ছেড়ে না দিয়ে নির্দিষ্ট ঘোষনার দাবিতে রেল মন্ত্রণালয়কে দুই মাসের সময় নিচ্ছি। এর পর আমরা আপামর চট্টগ্রামবাসীকে নিয়ে বৃহত্তর আন্দোলনের পথে যেতে বাধ্য হবো। আমরা একসময় চট্টগ্রামের উন্নয়নের ১৫ দফা দাবিতে ৪৮ ঘন্টার সফল হরতাল করেছিলাম। কাজেই আমরা সময়োপযোগি অরাজনৈতিক বৃহত্তর কর্মসূচি দিতে দ্বিধাবোধ করবো না ।
সংবাদ সম্মেলনে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন নাগরিক ফোরামের ভাইস চেয়ারম্যান শাহরিয়ার আসাদ,কালুরঘাট সেতু বাস্তবায়ন পরিষদের আহ্বায়ক আবুল মোমেন,চট্টগ্রাম সুহৃদ এর সভাপতি মির্জা ইমতিয়াজ শাওন,
নাগরিক ফোরামের সাংগঠনিক সম্পাদক মনসুর আলম, সাবেক ছাত্র নেতা মহিবুল্লাহ খান,লেখক কামরুল ইসলাম,গোলাম রসুল মান্নান,মাসুদ খান,তসলিম খা,মো ইমন
প্রমুখ।