রবিবার - ১৯শে জানুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ - ৫ই মাঘ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ - ১৯শে রজব, ১৪৪৬ হিজরি

কালিহাতীর বড়টিয়া বাড়ীতে হযরত শাহ্ সূফী একিন শাহ্ -এর ওরশ মোবারক ও ঐতিহ্যবাহী মেলা

কালিহাতীর বড়টিয়া বাড়ীতে হযরত শাহ্ সূফী একিন শাহ্ -এর ওরশ মোবারক ও ঐতিহ্যবাহী মেলা

 

টাঙ্গাইলের কালিহাতী উপজেলার রামপুর গ্রামের বুকে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে শতাব্দীর ঐতিহ্যের বাহক বড়টিয়া বাড়ী। ১০ ডিসেম্বর থেকে শুরু হওয়া হযরত শাহ্ সূফী একিন শাহ্ -এর পবিত্র ওরশ মোবারক সাতদিনের এক মহামিলনের উৎসবে রূপ নেয়। ভক্তি, ভালোবাসা আর আধ্যাত্মিক অনুভূতিতে সিক্ত এই আয়োজন শুধু একটি অনুষ্ঠান নয়, বরং হাজারো মানুষের হৃদয়ের স্পন্দন।

ওরশের মূল আয়োজনটি হয় হযরত শাহ্ সূফী একিন শাহ্ -এর দরগাহ্ প্রাঙ্গণে। সেখানে ভক্তরা মহান আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের আশায় দোয়া, মোনাজাত ও জিকিরে নিমগ্ন থাকেন। কোরআন তিলাওয়াতের সুমধুর ধ্বনি আর মিলাদ-মাহফিলের পরিবেশে আধ্যাত্মিক প্রশান্তি ছড়িয়ে পড়ে। বাতাসে মিশে যাওয়া এই পবিত্রতার স্পর্শে হৃদয় হয়ে ওঠে পরিশুদ্ধ।

৭৫ বছর বয়সী প্রবীণ ইয়াদ আলী বলেন, “শৈশব থেকে এই পবিত্র ওরশ দেখে আসছি। শত শত বছরেরও বেশি সময় ধরে চলে আসা এই আয়োজন আমাদের সংস্কৃতি আর বিশ্বাসের গভীরে মিশে আছে।

ওরশ উপলক্ষে বসে জমজমাট মেলা। হস্তশিল্প, মিষ্টান্ন, খেলনা, পোশাক আর ঘরোয়া সামগ্রীর পসরা মেলায় যোগ করে অনন্য মাত্রা। রঙিন নাগরদোলা, চরকি, মেরি-গো-রাউন্ড আর আধুনিক রাইডে শিশুদের হাসি আর বড়দের আনন্দ যেন মেলাকে পরিণত করে উৎসবের রঙিন মঞ্চে।

মেলায় বেজে ওঠে পালাগান, লালনগীতি, বাউল গান আর কবিগান। স্থানীয় ও দূর-দূরান্তের শিল্পীরা গানের সুরে ফিরিয়ে আনেন গ্রামীণ ঐতিহ্যের প্রাণ। এই সুরধারা যেন সময়ের সেতু হয়ে মিশিয়ে দেয় বর্তমানকে অতীতের সঙ্গে।

কেন্দ্রীয় সাধু সংঘের প্রতিষ্ঠাতা শাহ্ আলম জানান, “বাংলাদেশের পাঁচটি এবং ভারতে দুটি মাজারে এই ওরশ অনুষ্ঠিত হয়। একিন শাহ্ -এর স্মৃতি ধরে রাখা এই ওরশ আমাদের ঐতিহ্যের অমূল্য অংশ।

ওরশ ও মেলা নির্বিঘ্ন করতে প্রশাসন নেয় পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা। পুলিশের টহল, স্বেচ্ছাসেবকদের তৎপরতা এবং স্বাস্থ্যসেবা বুথ নিশ্চিত করে সবার স্বাচ্ছন্দ্য ও নিরাপত্তা।

শেষ দিনে অনুষ্ঠিত বিশেষ মোনাজাতে হাজারো মানুষ একত্রে প্রার্থনায় অংশ নেন। জাতির শান্তি ও মঙ্গল কামনার এই মোনাজাত ছড়িয়ে দেয় ভালোবাসা, সম্প্রীতি ও ভ্রাতৃত্বের চিরন্তন বার্তা।

মেলা পরিচালনা কমিটির সভাপতি খোরশেদ আলম বলেন, “বাবা-দাদার কাছ থেকে শুনেছি এই ওরশের কথা। আমি নিজেও এই ঐতিহ্যের অংশ হয়ে আছি এবং আশা করি, এই আয়োজন যুগ যুগ ধরে চলবে।”

হযরত শাহ্ সূফী একিন শাহ্ (রহ.)-এর পবিত্র ওরশ ও ঐতিহ্যবাহী মেলা শুধু কালিহাতী নয়, পুরো অঞ্চলের মানুষের কাছে আধ্যাত্মিক এবং সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের উজ্জ্বল নিদর্শন। প্রতি বছর এই উৎসবে অংশ নিয়ে মানুষ খুঁজে পায় নতুন উদ্দীপনা, শান্তি ও ঐক্যের বন্ধন।

Share on facebook
Facebook
Share on twitter
Twitter
Share on linkedin
LinkedIn