শুক্রবার - ২৫শে এপ্রিল, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ - ১২ই বৈশাখ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ - ২৭শে শাওয়াল, ১৪৪৬ হিজরি

কাপ্তাই গলা কেটে হত্যা:৫ বছর পর কুমিল্লা থেকে আসামী গ্রেফতার

কাপ্তাই গলা কেটে হত্যা:৫ বছর পর কুমিল্লা থেকে আসামী গ্রেফতার

রাঙ্গামাটিতে দুই গ্রুপের মাদক ব্যবসা এবং আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে গলা কেটে হত্যা মামলার ওয়ারেন্টভূক্ত পলাতক প্রধান আসামী শাহাদাত হোসেন (৪২)কে দীর্ঘ ৫ বছর পর গ্রেফতার করেছে র‌্যাপিড এ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব)।

শনিবার (১০ জুন) কুমিল্লার লাকসাম এলাকা হতে আসামী শাহাদাত হোসেনকে অভিযান চালিয়ে গ্রেফতার করে। আসামী শাহাদাত হোসেন কুমিল্লা জেলার মনোহরগঞ্জ থানার আবুল খায়েরে পুত্র।

জানা যায়, রাঙ্গামাটি জেলার কাপ্তাই থানাধীন কর্নফুলী পেপার মিলস্ এলাকায় মাদক ব্যবসা ও আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে স্থানীয় কথিত শাহাদাত গ্রুপ এবং নুরুল ইসলাম গ্রুপ এর মধ্যে দীর্ঘদিন যাবৎ বিরোধ চলে আসছিলো। ২০১৪ সালে ভিকটিম খলিলসহ তার গ্রুপের প্রধান সহযোগীদের মাধ্যমে তাদের বিরোধী পক্ষের শাহাদাত গ্রুপের প্রধান শাহাদাতকে মারধর করে গুরুতর জখম করে। উক্ত ঘটনার প্রেক্ষিতে প্রতিশোধ পরায়ণ হয়ে শাহাদাত গ্রুপের প্রধান শাহাদাত তার অন্যান্য সহযোগীদের মাধ্যমে ২০১৭ সালের আগস্ট মাসে ১ম দফা এবং ২০১৭ সালের ডিসেম্বর মাসে ২য় দফায় ভিকটিম ইব্রাহীম খলিল এর লিডার নুরুল ইসলামকে কুপিয়ে গুরুতর জখম করে। পরবর্তীতে নুরুল ইসলাম নিজ এলাকা ছেড়ে পংগু অবস্থায় কুমিল্লা জেলায় তার শ্বশুর বাড়ীতে অবস্থান করে চিকিৎসা গ্রহণ করতে থাকেন।

শাহাদাত গ্রুপের শাহাদাত আহত হওয়ার পর হতেই ভিকটিম ইব্রাহীম খলিল শাহাদাত গ্রুপের ভয়ে কাপ্তাই থানা এলাকা ছেড়ে রাঙ্গামাটি জেলার লংগদু এলাকাসহ বিভিন্ন স্থানে দিন মজুরের কাজ করতে থাকেন। ২০১৮ সালের ১৭ এপ্রিল ভিকটিম ইব্রাহীম খলিল রাঙ্গামাটি জেলার লংগদু এলাকা হতে কাপ্তাই তার খালার বাড়ী বেড়াতে আসে। ইব্রাহিম খলিল কাপ্তাই এলাকায় আসার খবর পেয়ে শাহাদাত তার অন্যান্য সহযোগীদের নিয়ে ইব্রাহিম খলিলকে হত্যার পরিকল্পনা করে এবং পরিলকল্পনা মোতাবেক ভিকটিম ইব্রাহিম খলিলের গতিবিধি অনুসরণ করতে থাকে।

পরবর্তীতে ২০১৮ সালে ২০ এপ্রিল ভিকটিম ইব্রাহিম খলিল তার খালাকে রাংগুনিয়া হতে নিয়ে আসার জন্য বাড়ি হতে বের হয়। পথিমধ্যে ইব্রাহিম খলিলকে খুন করার উদ্দেশ্যে শাহাদাত গ্রুপের লোকজন সিএনজি নিয়ে অবস্থান করে। ঐদিন সন্ধ্যায় ইব্রাহিম খলিল রাঙ্গামাটি জেলার কাপ্তাই থানাধীন কেপিএম এলাকায় কাপ্তাই – চট্টগ্রাম মহাসড়কের উপর পৌছামাত্র পূর্ব পরিকল্পিতভাবে অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীরা তার ঘাড়ে কিরিচ দিয়ে কোপ দেয়। উক্ত কোপে ইব্রাহিম খলিলের ঘাড়ের ডানপাশে ঘাড়সহ গলা কেটে যায়। সাথে সাথে ইব্রাহিম মাটিতে লুটিয়ে পড়ে এবং তার মৃত্যু হয়।

পরবর্তীতে নিহতের ভাই মোঃ ইসমাইল হোসেন বাদী হয়ে কাপ্তাই থানায় ৩ জনকে নামীয় এবং অজ্ঞাতমানা আরও ২/৩ জন আসামী করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন যার মামলা নং-২, তারিখ- ২১ এপ্রিল ২০১৮, জি আর নং-৯৫, , ধারা- ৩০২/৩৪ পেনাল কোড-১৮৬০।

র‌্যাব-৭, চাঞ্চল্যকর হত্যা মামলার এজাহারনামীয় ওয়ারেন্টভুক্ত পলাতক আসামীদের গ্রেফতারের লক্ষ্যে গোয়েন্দা নজরধারী এবং ছায়াতদন্ত অব্যাহত রাখে। নজরধারীর এক পর্যায়ে র‌্যাব-৭, চট্টগ্রাম জানতে পারে যে, বর্ণিত হত্যা মামলার এজাহারনামীয় ১নং আসামী মোঃ শাহাদাত হোসেন আইন শৃংখলা বাহিনীর নিকট হতে গ্রেফতার এড়াতে ছদ্মনামে কুমিল্লা জেলার লাকসাম এলাকায় অবস্থান করছে। উক্ত তথ্যের ভিত্তিতে র‌্যাব-৭, চট্টগ্রামের একটি আভিযানিক দল গত ১০ জুন বর্ণিত স্থানে অভিযান পরিচালনা করে আসামী মোঃ শাহাদাত হোসেন (৪২)কে গ্রেফতার করে।

র‌্যাব-৭ এর সহকারী মিডিয়া পরিচালক নূরুল আবছার বলেন, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতার আসামী শাহাদাত হোসেন জানায়, আইন শৃংখলা বাহিনীর নিকট হতে গ্রেফতার এড়াতে সে ছদ্মনাম ধারণ করে নাম ও ঠিকানা পরিবর্তন করে দেশের বিভিন্ন স্থানে কাঠের ব্যবসাসহ বিভিন্ন পেশায় আত্মগোপন করে বসবাস করছিল। আসামী পরবর্তী আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহনের নিমিত্তে সংশ্লিষ্ট থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে।

Share on facebook
Facebook
Share on twitter
Twitter
Share on linkedin
LinkedIn