শুক্রবার - ৭ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ - ২৪শে মাঘ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ - ৮ই শাবান, ১৪৪৬ হিজরি

কল্পনা চাকমা অপহরণের বিচার ও অপহরণকারী লে.ফেরদৌস গঙদের সাজা নিশ্চিত করার দাবীতে হিল উইমেন্স ফেডারেশন ও নারী সংঘের বিক্ষোভ

 

কল্পনা চাকমা অপহরণকারী লে. ফেরদৌস গঙদের বিচার ও সাজা নিশ্চিত করতে চট্টগ্রামে হিল উইমেন্স ফেডারেশন ও পার্বত্য নারী সংঘের উদ্যোগে বিক্ষোভ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে।

চট্টগ্রাম ডিসি হিল থেকে একটি মিছিল বের করা হয়। মিছিলটি প্রেস ক্লাব ঘুরে চেরাগি পাহাড় মোড়ে এসে এক সমাবেশের মধ্যে দিয়ে শেষ হয়।

শুক্রবার ০৯ জুন  বিকাল ৪টায় হিল উইমেন্স ফেডারেশন ও পার্বত্য নারী সংঘের উদ্যোগে এ বিক্ষোভ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।

পার্বত্য চট্টগ্রাম নারী সংঘের সভাপতি কনিকা দেওয়ানের সভাপতিত্বে ও হিল উইমেন্স ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক রিতা চাকমার সঞ্চালনায় সমাবেশে সংহতি জানিয়ে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশের মুক্তি সংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধ ট্রাস্ট এর চেয়ারম্যান ডা. মাহফুজুর রহমান, জাতীয় মুক্তি কাউন্সিল চট্টগ্রাম পূর্ব-৩ অঞ্চলের সভাপতি এডভোকেট ভূলন ভৌমিক, বাংলাদেশ নারী মুক্তি কেন্দ্রের সংগঠক আসমা আকতার, গণতান্ত্রিক ছাত্র কাউন্সিল চট্টগ্রাম মহানগরের এ্যানি চৌধুরী, বিপ্লবী ছাত্র মৈত্রীর আবিদ ইসলাম এবং হিল উইমেন্স ফেডারেশনের সভাপতি নীতি চাকমা প্রমুখ। এতে আরো সংহতি জানিয়েছেন বৃহত্তর পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি সুনীল ত্রিপুরা, গণতান্ত্রিক যুব ফোরাম চট্টগ্রাম মহানগরের নেতা শুভ চাক।

ডা. মাহফুজুর রহমান বলেন, আমরা স্বাধীন হয়েছি ঠিকই কিন্তু দেশের শাসনব্যবস্থা, সরকারব্যবস্থা এমনভাবে তৈরী করা হয়েছে জনগণকে সকল সামরিক-বেসামরিক আমলারা রাজার মতো যা ইচ্ছা তাই করতে পারে। আজকে আপনারা কল্পনা চাকমা অপহরণের বিচারের দাবিতে সমাবেশ করছেন। এই জ্বলজ্যান্ত দেশে লক্ষাধিক লোককে বিনা বিচারে নিহত হতে হয়েছে। তাদের কোন বিচার হয় নাই। আজকে পার্লামেন্টের এমপি, মন্ত্রী, ডিসি, সেনাপ্রধান থেকে শুরু করে সকলকেই জনগণের সেবা করার জন্যে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে আমাদের উপর খবরদারি করার জন্যে নয়। দেশের জনগণের উপর দমন-পীড়ন বন্ধ করতে হলে সকলকে একযোগে আন্দোলন সংগ্রাম করে যেতে হবে।

ভূলন ভৌমিক বলেন, বাংলাদেশ একটি লুঠতরাজ, চোর ও ডাকাতের দেশ হয়ে গেছে। বর্তমান শাসকগোষ্ঠী স্বাধীনতার কথা বলে, উন্নয়নের কথা বলে জনগণের সম্পদ লুটপাট করছে। কাজেই এই শাসকশ্রেণি যতক্ষণ পর্যন্ত ক্ষমতায় থাকবে ততদিন পাহাড়ি জনগণ নিরাপত্তায় বসবাস করতে পারবে না। দেশের সমগ্র জনগণের গণতান্ত্রিক লড়াই-সংগ্রামের মধ্যে দিয়ে এই স্বৈরাচারী শাসকশ্রেণিকে উৎখাত করতে হবে।

আসমা আকতার বলেন, ২৭ বছরের মধ্যে অনেক সরকারের ক্ষমতার পালাবদল ঘটেছে কিন্তু কল্পনা চাকমা অপহরণের বিচার হয়নি। সেনা মদদপুষ্ট সেটলার বাঙালিদের দ্বারা পাহাড়ে আজ সর্বত্র পাহাড়ি জনগণ নিপীড়নের শিকার হচ্ছে। তিনি আরো বলেন, পাহাড়ের সাধারণ মানুষের উচ্ছেদ করে, তাদের পূর্ব পুরুষদের ভিটেমাটি দখল করে সেনাশাসন চলতে দেয়া যাবে না। তিনি অবিলম্বে কল্পনা অপহরণকারী লে. ফেরদৌস গঙদের বিচারের কাঠগড়ায় নিয়ে আসার দাবী জানান।

এ্যানি চৌধুরী বলেন, পাহাড়িদের দমন-পীড়নে সেনাবাহিনী এতই তৎপর অথচ কল্পনা চাকমা অপহরণের ২৭ বছর পেরিয়ে গেলেও এখনো বিচারের কোন তৎপরতা দেখা যায় নি।

আবিদ ইসলাম বলেন, পাহাড়িদের ভিটেমাটি থেকে উচ্ছেদের ষড়যন্ত্র বজায় রেখে পার্বত্য চট্টগ্রামে সেনাশাসন জারী রাখা হয়েছে। তিনি অবিলম্বে কল্পনা চাকমা অপহরণকারীদের বিচারের আওতায় নিয়ে আসার দাবী করেন।

নীতি চাকমা বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামসহ সারাদেশে আজ নারীদের নিরাপত্তা বিঘ্নিত হচ্ছে। পার্বত্য চট্টগ্রামে চলতি বছরে এ পর্যন্ত অন্তত ১১ জনের অধিক নারী ধর্ষণ ও ধর্ষণ চেষ্টার শিকার হয়েছেন। গত ২৭ মে রাঙামাটি জুরাছড়িতে এক পুলিশ সদস্য কর্তৃক চতুর্থ শ্রেণির ছাত্রী ধর্ষণের চেষ্টা ও যৌন হয়রানির শিকার হয়েছে। এছাড়া ২০১৮ সালের ২১ জানুয়ারি দিবাগত রাতে রাঙামাটির বিলাইছড়িতে সেনা সদস্য কর্তৃক দুই মারমা বোন ধর্ষণ ও যৌন হয়রানির শিকার হয়। একইভাবে ২০১৬ সালে কুমিল্লা ক্যান্টনমেন্টে তনু ধর্ষণ ও হত্যা, ২৭ জুন ২২ খাগড়াছড়ির ভাইবোন ছড়ায় সেনা মদদপুষ্ট নব্যমুখোশ কর্তৃক এক নারীকে ধর্ষণ ও ১০ মে ২৩ লক্ষীছড়িতে এসএসসি পরিক্ষার্থীকে ধর্ষণ করা হয়েছে। কোনটাই এখনো বিচার হয়নি।

সভাপতির বক্তব্যে কণিকা চাকমা বলেন, সরকার ও দুর্নীতিগ্রস্থ সেনা কর্মকর্তা লে. ফেরদৌসের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করার কারণে ১৯৯৬ সালে ১২ই জুন ৭ম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মাত্র ৭ ঘন্টার পূর্বে কল্পনা চাকমাকে অপহরণের শিকার হতে হয়েছে। আজ কল্পনা চাকমা অপহরণের ২৭ বছর অতিক্রান্ত হলেও এখনো অপহরণকারীদের বিচারের আওতায় আনা হয় নি। তিনি পার্বত্য চট্টগ্রামের নারীসহ দেশের সকল শ্রেণি, পেশাজীবী ও জাতিসত্তার জনগণের অধিকার প্রতিষ্টার লক্ষ্যে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন গড়ে তোলার আহ্বান জানান।

সমাবেশ থেকে নিম্নোক্ত দাবীগুলো উত্থাপন করা হয়-
১. শুনানির নামে কালক্ষেপণ না করে অবিলম্বে কল্পনা চাকমা অপহরণকারী লে. ফেরদৌসসহ তার সহযোগিদের গ্রেফতার, বিচার ও সাজা নিশ্চিত করতে হবে।

২. পার্বত্য চট্টগ্রামে এ যাবত সংঘটিত সকল নারী ধর্ষণ- নির্যাতনের বিচার করতে হবে।

৩. পার্বত্য চট্টগ্রামে ভূমি বেদখল ও পাহাড়ি উচ্ছেদের ষড়যন্ত্র বন্ধ ও ১১ বম খুনের ঘটনা নিরপেক্ষ তদন্ত করে খুনীদের গ্রেফতার ও বিচার করতে হবে।

এসআই

Share on facebook
Facebook
Share on twitter
Twitter
Share on linkedin
LinkedIn