রবিবার - ১৮ই মে, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ - ৪ঠা জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ - ২০শে জিলকদ, ১৪৪৬ হিজরি

কলারোয়া পালপাড়া গণহত্যা দিবস আজ

কলারোয়া পালপাড়া গণহত্যা দিবস আজ

আজ ২৯ এপ্রিল, মঙ্গলবার সাতক্ষীরার কলারোয়া পালপাড়া গণহত্যা দিবস। অন্যান্য বছর ২৮ এপ্রিল হলেও বাংলাবর্ষ অনুযায়ী এবছর ১৬ বৈশাখে (২৯ এপ্রিল) দিবসটি পালন করা হচ্ছে। একাত্তরের বেদনাবহ এই দিনে কলারোয়ার মানুষের স্মৃতিপটে নতুন করে ভেসে ওঠে পাকবাহিনীর ভয়াল, বীভৎস ও নির্মম এক হত্যাযজ্ঞের কথা। স্বাধীনতা অর্জনের ৫৪ তম বছরে এসেও মুক্তিকামী মানুষ ভুলতে পারেন না কলারোয়ার উত্তর মুরারিকাটি কুমারপাড়ার সেই ভয়াল হত্যাযজ্ঞের কথা।

কলারোয়ার মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে পালপাড়ার কুমার সম্প্রদায়ের শহিদ ৯ মুক্তিকামী কুম্ভকারের আত্মত্যাগের কথা চিরদিন অম্লান থাকবে। বিভিন্ন কর্মসূচি পালনের মধ্য দিয়ে কুমারপাড়ার স্বজনহারা মানুষ এ দিনটি শোকাবহচিত্তে স্মরণ করেন। সূত্রমতে, একাত্তরের ২৮ এপ্রিল মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন পাক-হানাদার বাহিনীর হত্যাযজ্ঞের শিকার হন কলারোয়ার পালপাড়ার ৯ জন মুক্তিকামী কুম্ভকার।

প্রকাশ্য দিবালোকে ঘটা এই নারকীয় হত্যাকান্ড সেদিন অনেক মানুষ প্রত্যক্ষ করেন। যাঁদের অনেকেই ওই বীভৎস স্মৃতি নিয়ে আজও বেঁচে আছেন। ঘটনাস্থল পৌরসদরে বেত্রবতী নদীর পূর্ব পার্শ্বে অবস্থিত উত্তর মুরারিকাটি কুমারপাড়া বা পালপাড়া। বর্বরতার এক নৃশংস ও ভয়াল দৃশ্যপট রচিত হয় সেখানে। মানুষ যে মানুষকে এত নিষ্ঠুরভাবে মেরে ফেলতে পারে, তা পালপাড়ার গণহত্যা যারা দেখেননি বা জানেন না, তারা বুঝতে পারবেন না।

একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ তখন রীতিমত উত্তাল। জীবন বাজি রেখে বাংলার দামাল ছেলেরা তখন লড়ছে রণাঙ্গণে। মুক্তিযুুদ্ধের সাথে প্রত্যক্ষভাবে জড়িত এবং কুমার সম্প্রদায়ের প্রায় সবাই তখন সীমান্ত পেরিয়ে আশ্রয় নিচ্ছিলেন ভারতে। কুমারপাড়াতেও চলছিল ভারতে যাওয়ার তোড়জোড়। সিদ্ধান্ত ছিল দু’এক দিনের মধ্যেই তারাও এদেশ ছেড়ে পাড়ি জমাবেন ভারতে। কিন্তু কীভাবে যেন এদের এই পরিকল্পনার কথা জেনে যায় হানাদার বাহিনীর দোসররা। তাই তাঁরা সুযোগ পাননি দেশ ছাড়ার।

এলো সেই ভয়াল দিন একাত্তরের ২৮ এপ্রিল, বাংলা-১৬ বৈশাখ, শুক্রবার, ১৩৭৮ বঙ্গাব্দ। দুপুর আড়াইটার দিকে হানাদার পাক সেনা ও তাদের এদেশীয় দোসররা সশস্ত্র পৈশাচিক হামলা চালায় উত্তর মুরারিকাটি গ্রামের কুমারপাড়ার নিরীহ নিরস্ত্র মানুষের ওপর। জানা যায়, এসময় পালপাড়ার অনেকে দুপুরের খাওয়া শেষ করেছেন।

অনেকেই আবার খাদ্য নিয়ে বসেছেন খেতে। ঠিক এই সময় তাদের ওপর অতর্কিতে হামলা চালিয়ে নির্বিচারে গুলি করে ও বেয়নেট দিয়ে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে হত্যা করা হয়। গুলিতে ও বেয়নেটের আঘাতে জর্জরিত প্রাণহীন দেহগুলো লুটিয়ে পড়ে মাটিতে। পড়ে থাকে দুপুরের সেই রক্তমাখা খাবারগুলো। বৈশাখের তপ্তমাটি সিক্ত হয় দেশপ্রেমীদের তাজা রক্তে। এই পৈশাচিক ঘটনার ভয়াল স্মৃতি এ জনপদের মানুষ কখনো ভুলবেন না। ভুলতে পারেন না।

পাকবাহিনীর নির্মম-নারকীয় গণহত্যার শিকার হন: বৈদ্যনাথ পাল (৪৫), নিতাই পাল (৪০), গোপাল পাল (৪২), সতীশ পাল (৪৫), রাম চন্দ্র পাল (৪০), বিমল পাল (৪২), রঞ্জন পাল (৪০), অনিল পাল (৪৫) ও রামপদ পাল (৪২)। শিবু পাল মারাত্মকভাবে বেয়নেটবিদ্ধ হয়েও জীবিত ছিলেন।

আহত ত্রৈলক্ষ পালকে ভর্তি করা হয় ভারতের সাঁড়াপুল হাসপাতালে। তার সাথে স্বজনদের যোগাযোগ করিয়ে দিয়েছিলেন মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক ও ভাষা সৈনিক প্রয়াত শেখ আমানুল্লাহ। অপর আহত শিবু পাল চিকিৎসার জন্য ভর্তি হয়েছিলেন ভারতের বনগাঁ সদর হাসপাতালে।

কুমারপাড়ার শহিদদের সমাধিস্থল সংরক্ষণ করে গড়ে তোলা হয়েছে স্মৃতিসৌধ। এর পাশেই রয়েছে ‘রাধা-গোবিন্দ’ মন্দির। প্রতি বছর এদিন উপলক্ষে শহীদদের সন্তান, স্বজন ও সতীর্থরা বিদেহী আত্মার মঙ্গল কামনা করে এখানে পালন করেন বিভিন্ন মঙ্গলাচার ও নাম সংকীত্তর্ন অনুষ্ঠান।

উদযাপন কমিটির প্রচারপত্রে উল্লেখ করা হয়েছে, শোকাবহ এ দিবস উপলক্ষে কলারোয়ার উত্তর মুরারিকাটি পালপাড়া শহিদ স্মৃতি শ্রী শ্রী রাধাগোবিন্দ মন্দিরের ভক্তবৃন্দ সম্মিলিতভাবে ৪ দিনব্যাপী কর্মসূচি গ্রহণ করেছে।

এরমধ্যে রয়েছে: ২৯ এপ্রিল, মঙ্গলবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭ টায় শুভ অধিবাস আরম্ভ, শহিদ সমাধিস্থলে মঙ্গল প্রদীপ ও মোমবাতি প্রজ্জ্বলন ৩০ এপ্রিল ও ১ মে, বুধ ও বৃহস্পতিবার ১৬ প্রহরব্যাপী অখন্ড মহানাম সংকীত্তর্ন। সবশেষে ২ মে, শুক্রবার ভোগ মহোৎসবের আয়োজন করা হয়েছে।

Share on facebook
Facebook
Share on twitter
Twitter
Share on linkedin
LinkedIn