বৃহস্পতিবার - ২৩শে জানুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ - ৯ই মাঘ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ - ২৩শে রজব, ১৪৪৬ হিজরি

এমআরপি পাসপোর্ট চালু রাখার প্রয়োজনীয়তা: নাগরিক ভোগান্তি কমাতে করণীয়

প্রবাসীর পাসপোর্ট বিড়ম্বনা-১
এমআরপি পাসপোর্ট চালু রাখার প্রয়োজনীয়তা: নাগরিক ভোগান্তি কমাতে করণীয়

মো. কামাল উদ্দিনঃ

বর্তমানে বাংলাদেশে এমআরপি (মেশিন রিডেবল পাসপোর্ট) বন্ধ করে ই-পাসপোর্ট চালু করা হয়েছে। তবে, এই পরিবর্তনটি দেশের অনেক নাগরিকের জন্য সমস্যা তৈরি করেছে, বিশেষ করে যাদের এখনো এমআরপি পাসপোর্ট রয়েছে। নতুন ই-পাসপোর্টের কার্যক্রম শুরুর পর থেকে এমআরপি পাসপোর্টের নবায়ন প্রক্রিয়া বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে, কিন্তু এখনও অনেক নাগরিকের এমআরপি পাসপোর্ট রয়েছে, যারা বিদেশে যান বা বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সফর করেন। এমআরপি পাসপোর্ট চালু রাখার বিষয়টি তাই এখন বিশেষ গুরুত্ব পাচ্ছে, কারণ এটি বর্তমান ভোগান্তির অন্যতম কারণ।
এমআরপি পাসপোর্টের সমস্যা ও নাগরিকদের ভোগান্তি
এমআরপি পাসপোর্ট একসময় খুবই জনপ্রিয় ছিল এবং এর মাধ্যমে বাংলাদেশি নাগরিকরা অনেক দেশে সফর করতে পারতেন। তবে ই-পাসপোর্ট চালু হওয়ার পর এটি পুরনো হয়ে পড়েছে, যদিও অনেক দেশে এখনও এমআরপি পাসপোর্ট গ্রহণযোগ্য। বিশেষ করে মধ্যপ্রাচ্য, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুরসহ বেশ কিছু দেশে এমআরপি পাসপোর্টের ব্যবহার অব্যাহত রয়েছে। বাংলাদেশে পাসপোর্ট সেবা কেন্দ্রগুলোও ই-পাসপোর্টের দিকে মনোযোগী হলেও, যেসব নাগরিকের কাছে এমআরপি পাসপোর্ট রয়েছে, তাদের জন্য নতুন পাসপোর্টের আবেদন প্রক্রিয়া অত্যন্ত জটিল এবং সময়সাপেক্ষ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এছাড়া, প্রবাসী বাংলাদেশিরা যারা বিভিন্ন দেশে কর্মরত, তাদের জন্য এমআরপি পাসপোর্ট নবায়ন না করতে পারলে নানা জটিলতা দেখা দেয়। বিশেষ করে যারা মালয়েশিয়া, সৌদি আরব বা কাতারের মতো দেশে কাজ করছেন, তাদের জন্য এই পাসপোর্ট অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। পাসপোর্টের মেয়াদ শেষ হয়ে গেলে তাদের কর্মসংস্থান ঝুঁকির মধ্যে পড়ে। এমআরপি পাসপোর্টের প্রয়োজনীয়তা এবং বৈশ্বিক পরিস্থিতি বিশ্বব্যাপী এমআরপি পাসপোর্ট এখনও অনেক দেশ ব্যবহার করছে এবং এসব দেশে যাতায়াতকারী বাংলাদেশি নাগরিকরা এর উপর নির্ভরশীল। কিছু দেশ, বিশেষ করে উন্নয়নশীল দেশগুলো, ই-পাসপোর্ট গ্রহণের জন্য প্রস্তুত নয়, এবং এমআরপি পাসপোর্টের উপরেই তাদের নির্ভরশীলতা রয়েছে। এতে বাংলাদেশের অনেক নাগরিক বিশেষত কর্মমুখী বা দীর্ঘমেয়াদী যাত্রীদের সমস্যায় পড়তে হচ্ছে। যেসব দেশের নাগরিকেরা বিদেশে অবস্থান করেন, তাদের জন্য এমআরপি পাসপোর্টের নবায়নের সুযোগ থাকাটা গুরুত্বপূর্ণ, কারণ তারা যদি দেশে ফিরে এসে ই-পাসপোর্টের জন্য আবেদন করতে চান, তবে এতে অতিরিক্ত সময় ও অর্থ ব্যয় হয়। পাশাপাশি ই-পাসপোর্টের যেসব সুবিধা রয়েছে, তা সবদেশে সমানভাবে কার্যকর নয়, যেমন কিছু দেশ এখনও এমআরপি পাসপোর্টের ডেটা শীট বা মেশিন রিডেবল পাসপোর্ট ফিচারের উপর নির্ভরশীল।
এমআরপি পাসপোর্ট নবায়ন ও বিকল্প ব্যবস্থা নাগরিকদের স্বার্থে এবং তাদের ভোগান্তি কমানোর জন্য, সরকারকে এমআরপি পাসপোর্ট পুনরায় চালু রাখার সিদ্ধান্ত নিতে হবে। বিশেষ করে তাদের জন্য যারা বিদেশে অবস্থান করছেন বা নিয়মিত যাতায়াত করেন। এমআরপি পাসপোর্ট চালু রাখলে অন্তত তারা কিছু সময়ের জন্য সেবা পাবেন, যা তাদের জীবনযাত্রাকে সহজ করবে এবং ভোগান্তি কমাবে। এছাড়া, ই-পাসপোর্টের প্রক্রিয়াটি আরও সহজ এবং দ্রুত করতে হবে। সেবার ক্ষেত্রেও আরও সুবিন্যস্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে যাতে দেশের সকল নাগরিক ই-পাসপোর্ট পেতে সক্ষম হন এবং একই সাথে যারা এমআরপি পাসপোর্টে সমস্যায় আছেন, তাদের জন্য একটি বিকল্প ব্যবস্থা রাখা উচিত। এমআরপি পাসপোর্ট চালু রাখার প্রস্তাবটি শুধুমাত্র প্রবাসী নাগরিকদের জন্য নয়, বরং সাধারণ নাগরিকদের জন্যও গুরুত্বপূর্ণ। সরকার যদি এমআরপি পাসপোর্ট নবায়নের সুযোগ রেখে এটি চালু রাখে, তবে আন্তর্জাতিক যাত্রায় জটিলতা এবং নাগরিকদের ভোগান্তি অনেকটাই কমানো সম্ভব হবে। তাছাড়া, ই-পাসপোর্টের পরিধি আরও বিস্তৃত হলে আগামী দিনে পাসপোর্ট সেবা আরো দ্রুত এবং কার্যকরী হবে, যা দেশের জন্য যেমন উপকারী, তেমনি বিশ্বব্যাপী বাংলাদেশের প্রতিটি নাগরিকের স্বাচ্ছন্দ্য বাড়াবে।
চলবে–

Share on facebook
Facebook
Share on twitter
Twitter
Share on linkedin
LinkedIn