সোমবার - ২৩শে জুন, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ - ৯ই আষাঢ়, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ - ২৭শে জিলহজ, ১৪৪৬ হিজরি

এক সপ্তাহেও সুরাহা হয়নি বেনাপোলসহ দুরপাল্লার বাস চলাচলের : দুর্ভোগে ভারত ফেরা যাত্রীরা

এক সপ্তাহেও সুরাহা হয়নি বেনাপোলসহ দুরপাল্লার বাস চলাচলের : দুর্ভোগে ভারত ফেরা যাত্রীরা

 

যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দর থেকে টানা এক সপ্তাহ ধরে দূরপাল্ললার সব পরিবহনের বাস চলাচল বন্ধ রয়েছে। এমন কী বেনাপোলের সকল পরিবহনের টিকিট কাউন্টারগুলোও বন্ধ রেখেছে পরিবহন স্টাফরা। সুরাহা হয়নি সৃষ্ট জটিলতার। পরিবহন না পেয়ে অতিরিক্ত অর্থ দিয়ে গন্তব্যে যেতে হচ্ছে যাত্রীদের।

প্রশাসনের সাথে পরিবহন মালিক শ্রমিকদের বৈঠকে কোন সুরাহা না হওয়ায় গত শুক্রবার (২২ নভেম্বর) রাত থেকে পরিবহন চলাচল বন্ধ রেখেছে ঢাকা, যশোর পরিবহন মালিক সমিতি। ফলে ভারত ফেরা যাত্রীরা বেনাপোল এসে পড়ছেন চরম দুর্ভোগে। এছাড়াও পরিবহনে কর্মরত শ্রমিকরা রয়েছে অসহায় অবস্থায়। দিন আনা দিন খাওয়া শ্রমিকদের সংসার চালাতেও কঠিন হয়ে পড়েছে।

জানা যায়, ভারতগামী পাসপোর্ট যাত্রীদের চেকপোস্টে না নিতে দিয়ে গভীর রাতে পৌর বাস টার্মিনালে নামাতে বাধ্য করার অভিযোগে বেনাপোলের দূরপাল্লার সব বাস বন্ধ রেখেছে পরিবহন মালিক সমিতি। তারা শুক্রবার ঢাকায় মিটিং ডেকেছেন। সুষ্ঠু সমাধান না হলে সব সড়কে যানবাহন চলাচল বন্ধ রাখবে বলে জানিয়েছেন পরিবহন মালি সমিতির এক নেতা।

হঠাৎ করে বেনাপোল স্থলবন্দরের আন্তর্জাতিক বাস টার্মিনালের গেইট বন্ধ রাখার কারন হিসেবে উপজেলা প্রশাসন বলছেন “নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয় এবং শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এম সাখাওয়াত হোসেনের নির্দেশে এটা করা হয়েছে। তার নির্দেশনা ব্যতীত আমাদের পক্ষে কোনো কিছু করার নেই।”

এদিকে পাসপোর্টযাত্রীদের সুবিধার্থে বেনাপোল স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ বেনাপোল চেকপোস্টের ফুটবল মাঠটি একর করে এক কোটি ৬৯ লাখ ৯০ হাজার ৮৭ টাকা ব্যয়ে স্থলবন্দর বাস টার্মিনাল নির্মাণ করেন। দুই তলা বাস টার্মিনালের নিচ তলায় রয়েছে বিভিন্ন পরিবহনের ১২টি টিকিট কাউন্টার, ৩০ হাজার স্কয়ার ফুটের পার্কিং এর ব্যবস্থা, দ্বিতীয় তলায় রয়েছে যাত্রীদের জন্য রেষ্ট রুম, ২টি দোকান। তৎকালিন নৌ পরিবহন মন্ত্রী শাজাহান খান এমপি গত ২০১৩ সালের ২৩ আগস্ট বন্দর বাস টার্মিনাল উদ্বোধন করেন। তখন থেকে টার্মিনালে ঢাকাসহ দুরপাল্লার বাসগুলো অবস্থান করে আসছে। এর ফলে ভারত থেকে আগত ও ভারতগামী পাসপোর্টযাত্রীরা এ টার্মিনালে মধ্যে পরিবহনে উঠানামা করে আসছে। আন্ত:জেলা বাসগুলো বাজার থেকে চলাচল করতো। এখন চেকপোস্টের বন্দর বাস টার্মিনালটি বন্ধ করে দেয়ায় বন্দরের বড় অংশের একটি রাজস্ব কমে আসছে। খা খা করছে বন্দরের টার্মিনালটি।

কেন বন্দরের বাস টার্মিনালটি বন্ধ করে দেয়া হলো বন্দরের ক্ষতি জেনেও বেনাপোল বন্দরের কোন কর্মকর্তা এ ব্যাপারে মুখে কলপ এটেছেন। তারা এ ব্যাপারে কোন কথা বলতে অপরগতা জানিয়েছেন।

বেনাপোল পরিবহণ সমিতির সভাপতি বাবলুর রহমান বাবু জানান, গত ২৪ নভেম্বর প্রশাসনের সঙ্গে বৈঠকের পর কোনো সমঝোতা হয়নি। প্রশাসন কোন কার্যকরী পদক্ষেপ না নেওয়ায় বেনাপোলের দূরপাল্লার সব বাস বন্ধ রেখেছে মালিক সমিতি। ঢাকার পরিবহন মালিকদের পক্ষ থেকে সিদ্ধান্ত না আসায় পরিবহন ছাড়া যাচ্ছে না। যাত্রীদের নিরাপত্তাসহ হয়রানির হাত থেকে রক্ষার জন্য আমরা আমাদের সিদ্ধান্তে অটল রয়েছি।

যশোর জেলা বাস মালিক সমিতির সভাপতি ও ফেডারেশনের সদস্য মুসলিম উদ্দিন পাপ্পু বলেন, বেনাপোলে যানজট নিরসনে পৌর বাস টার্মিনাল ব্যবহারে নির্দেশনা দেয় জেলা প্রশাসন। পরিবহন কর্তৃপক্ষ পৌর বাস টার্মিনাল ব্যবহারে সহমত পোষন করে দিনের বাসগুলো ছাড়ছিল সেখান থেকেই। যাত্রীদের নিরাপত্তা ও সুবিধায় রাতের বাস চেকপোস্ট টার্মিনালে এসে যাত্রী নামিয়ে দিয়ে বাস যাচ্ছিল পৌর টার্মিনালে। হঠাৎ ২২ নভেম্বর গভীর রাতে ঢাকা থেকে ছেড়ে আসা বাসের যাত্রী পৌর বাস টার্মিাালে নামিয়ে নেওয়া হয়। এতেই জট বাঁধে। বিষয়টি সুরাহা করার জন্য ঢাকা কেন্দ্রীক পরিবহন বাস মালিকদের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় আছি আমরা। দূরপাল্লার বাসের রাতের যাত্রীদের নিরাপত্তা ও দুর্ভোগের বিষয়টি কর্তৃপক্ষের বিশেষ বিবেচনার রাখার জন্য দাবি জানান এই মালিক নেতা।

শার্শা উপজেলা নির্বাহী অফিসার ড. নাজীব হাসান বলেন, কী কারণে তারা (পরিবহন মালিক-শ্রমিক) ধর্মঘট ডেকেছে, আমরা সে বিষয়ে ওয়াকিবহাল নই। তাদের কোনো কিছু বলার থাকলে কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলাপ করতে পারে। নৌ-পরিবহন উপদেষ্টা সাহেবের নির্দেশে এটা করা হয়েছে। উপদেষ্টা সাহেবের নির্দেশ ব্যতিত আমাদের পক্ষে কোন কিছু করা সম্ভব নয়। পৌর টার্মিনাল থেকেই যাত্রী ওঠাতে হবে এবং নামাতে হবে।

Share on facebook
Facebook
Share on twitter
Twitter
Share on linkedin
LinkedIn