সোমবার - ২০শে জানুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ - ৬ই মাঘ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ - ২০শে রজব, ১৪৪৬ হিজরি

একজন প্রিয় মানুষ : প্রফেসর ড. অনুপম সেন

একজন প্রিয় মানুষ : প্রফেসর ড. অনুপম সেন

আকাশ ইকবাল

 

ড. অনুপম সেন স্যার আমাকে খুব স্নেহ করেন। তাই কিছুদিন পরপরই স্যারের সাথে দেখা করতে যাই। সর্বশেষ মাসখানেক আগেও গিয়েছিলাম। স্যারকে জিজ্ঞেস করেছিলাম, বিশ্ববিদ্যালয়ের গুটিকয়েক (হাতেগণা) শিক্ষার্থী আপনার পদত্যাগের জন্য আন্দোলন করেছিল। এরপর আপনার পক্ষে শিক্ষার্থীদের একটি বড় অংশ, সাথে প্রাক্তন শিক্ষার্থীরা আপনার পক্ষে দাঁড়ায়। বিষয়টিকে আপনি কিভাবে দেখছেন, আপনার মতামত কী? স্যার বললেন, আমি প্রায় দুই দশক ধরে এই বিশ্ববিদ্যায়ের উপাচার্যের দায়িত্বে আছি। আমার সর্বোচ্চটা দিয়েছি। এটা আমার সন্তানের মতো। তাই খুব একটা প্রয়োজন না হলে ছুটিও কাটাইনি। বেতন-ভাতার বাইরে ইউনিভার্সিটির তহবিল থেকে এক পয়সাও অনৈতিকভাবে গ্রহণ করিনি। পরিচালনায় কোনো দুর্নীতি, অন্যায় ও স্বজনপ্রীতির আশ্রয় গ্রহণ করিনি। আমি সবসময় বিশ^বিদ্যালয়ের ভালো চেয়েছি, আমার শিক্ষার্থীদের ভালো চেয়েছি, তাদের পাশে থেকেছি। আমার ছাত্র-ছাত্রীদের হাতেগণা কয়েকজনও আমাকে ভিসি হিসেবে চায় না, এটা আমাকে কষ্ট দিচ্ছে।

একটা তথ্য দিয়ে রাখি, এবারও স্যারের পক্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন এবং বর্তমান শিক্ষার্থীদের একটি অংশ আগের বারের মতো পাল্টা আন্দোলনে নামতে চেয়েছিল। স্যার নিষেধ করেছিলেন। মূলত, তিনি চাননি ওনাকে কেন্দ্র করে ঝামেলা বাড়ুক। বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ নষ্ট হোক, শিক্ষার্থীদের পড়াশোনায় ক্ষতি হোক। তাই কেউ নামেনি।

স্যার ভিসির পথ থেকে পদত্যাগ করেছেন গতকাল। এরমধ্যে কলকাতার গুজব টিভি রিপাবলিক বাংলা গুজব ছড়াচ্ছে হিন্দু হওয়ার কারণে স্যারকে জোরপূর্বক পদত্যাগ করানো হয়েছে। এটা আদৌ সত্য নয়। আমি বিশ্বাস করি, এটা স্যার নিজেও মনে করেন না। কারণ, যেখানে তিনি নিজেই আর মাস-দুয়েকের মধ্যেই পদত্যাগ করতে যাচ্ছিলেন। হ্যাঁ, সেদিন স্যার আমাকে বলেছিলেন, আমার যথেষ্ঠ বয়স হয়ে গেছে। বার্ধক্যজনিত বেশ কয়েকটি সমস্যায় ভুগছি। বিশ্ববিদ্যালয়ে কিছু কাজ বাকি আছে। আগামী জানুয়ারি বা ফেব্রুয়ারির মধ্যে পদত্যাগ করব।

যতটুকু শুনেছি, বিশ্ববিদ্যালয়ে বেশ কয়েক বছর যাবৎ শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারিদের প্রমোশন আটকে ছিল। এরমধ্যে অনেকেরই প্রমোশন হয়েছে, গত সপ্তাহেও হয়েছে। আরও কিছু কাজ বাকি আছে। যেটা তিনি শেষ করেই দায়িত্ব ছাড়তে চেয়েছিলেন। জানুয়ারি বা ফেব্রুয়ারিতে নিজেই পদত্যাগ করবেন, তাই সময় চেয়ে রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ পর্যায় পর্যন্ত যোগাযোগ করে তিনি ব্যর্থ হয়েছেন, কেউ তাঁর ফোন রিসিভ বা এসএমএসের উত্তর দেননি। গোয়েন্দা সংস্থা সূত্রে স্যার জানতে পেরেছেন, কিছু করার নেই, এখনই পদত্যাগ করতে হবে।

একটা বিষয় খেয়াল করুন, এবার স্যারের পদত্যাগের দাবিতে আন্দোলনে যোগ দিয়েছিল আগের চেয়ে কম, সর্বোচ্চ ৪০/৫০ জন শিক্ষার্থী। স্যার, জানুয়ারি/ফেব্রুয়ারিতে নিজেরই পদত্যাগ করতে যাচ্ছিলেন এ খবর বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেকেই জানতেন। নিজে পদত্যাগ করলে তো স্যারকে স্বৈরাচারের দোসর আখ্যা দিয়ে অপমাণ করা যাচ্ছে না, তাই এই ষড়যন্ত্রটা করা হয়েছে গুণী এই মানুষটার প্রতি।

এই ষড়যন্ত্রটা রাজনৈতিক দিক দিয়ে যেমন আছে তেমনি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন এক বা একাধিক শিক্ষকের দিক থেকেও হতে পারে। কারণ বলছি-

উপরেও উল্লেখ করেছি, বেশ কয়েকবছর যাবৎ বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রমোশন হচ্ছে না নানা কারণে। এক প্রভাষক দেড় বছর চাকরি করে সহকারি অধ্যাপক হিসেবে প্রমোশন চেয়েছিলেন। কিন্তু স্যার তাঁকে প্রমোশন দেননি। পরে তিনি প্রিমিয়ার ছেড়ে অন্য বিশ^বিদ্যালয়ে যোগ দিয়েছেন। ওই শিক্ষক ৫ আগস্টের পর থেকে স্যারের নাম উল্লেখ না করে ফেসবুকে বেশ ক’টি পোস্ট দিয়েছেন।

বি: দ্র: প্রিয় অনুজ আকাশ ইকবাল ভাই এর ফেইসবুক ওয়াল থেকে নেওয়া লেখা।

Share on facebook
Facebook
Share on twitter
Twitter
Share on linkedin
LinkedIn