শনিবার - ৮ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ - ২৫শে মাঘ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ - ৯ই শাবান, ১৪৪৬ হিজরি

উছুলে ছাবয়াঃ মাওলানা অছিয়র রহমান চরণদ্বীপি 

উছুলে ছাবয়াঃ মাওলানা অছিয়র রহমান চরণদ্বীপি

মুহাম্মদ মফিজ উদ্দিন

সুফিবাদ চর্চার ইতিহাসে বিশ্বজুড়ে অনেক তরিকা রয়েছে। প্রত্যেক তরিকারই রয়েছে নিজস্ব নিয়ম- কানুন। বাংলাদেশে একমাত্র উদ্ধৃত তরিকার “মাইজভান্ডারী তরিকা” । চট্টগ্রাম জেলার ফটিকছড়ি উপজেলা মাইজভান্ডার গ্রাম সুফি চর্চার তীর্থভূমি।

এই তরিকার মহান প্রবর্তক গাউছুল আজম হযরত মাওলানা শাহ্সূফি সৈয়দ আহমদ উল্লাহ (কাদ্দাসা সিররাহুল আজিজ) (১৮২৬-১৯০৬)

কুরআন-সুন্নাহ, বিজ্ঞান ভিত্তিক সাধন-পন্থা, যাহা মানবজাতির আত্মশুদ্ধি লাভের জন্য যে পদ্ধতি দিক্ষা  দিয়েছেন তাকে উছুলে ছাবয়া বা সপ্তকর্ম পদ্ধতি বলে।

নিম্নে উছুলে ছাবয়া বা সপ্তকর্ম পদ্ধতি সংক্ষিপ্ত  তুলে রুপে ধরা হল-  গাউছুল আজম মাইজভান্ডারী (কঃ) প্রবর্তিত উছুল ছাবয়া প্রথমত দুই ভাগে বিভক্ত।

(এক) ফালায়ে ছালাছা বা রিপুর তিন প্রকার বিনাশ স্তর।

(দুই)  মউতে আরবাআ বা চার প্রকার মৃত্যু।

ফানায়ে ছালাছা বা রিপুর তিন প্রকার বিনাশ স্তর

১ ) ফানা আনিল খাল্ক (আত্মনির্ভরশীল হওয়া) ।

২ ) ফানা আনিল হাওয়া (অনর্থক পরিহার করা)

৩) ফানা আনিল এরাদা (খোদার ইচ্ছাকে প্রাধান্য দেওয়া)

মউতে আরবাআ’ বা রিপুর চার প্রকার মৃত্যুঃ-

১)মউতে আবয়্যাজ:- (সাদা মৃত্যু),

২) মউতে আছওয়াদ (কালো মৃত্যু),

৩)মউতে আহমর  (লাল মৃত্যু)

৪ )মউতে আখজার  (সবুজ মৃত্যু)

পবিত্র কুরআন ও সুন্নাহ’ এর নির্বাস থেকে এ-সপ্তকর্ম পদ্ধতি বর্তমান সমাজ ব্যবস্থার বিশ্ব মানবের ইহ ও পরকালীন মুক্তির লক্ষ্যে পৌঁছার অন্যতম পাথেয়।

যুগে যুগে এ পদ্ধতি সাধন ভজনের সূত্র সৃজন করে বহু অলি-আউলিয়া, গাউস-কুতুব, সুফি-দরবেশ  সফলকাম হয়ে স্ব স্ব অনুসারীদেরকে জাগতিক ও আধ্যাত্মিক উৎকর্ষ সাধনে দিক-নির্দেশনা দিয়েছেন।

এই ধারাবাহিকাতায় হুজুর গাউছুল আজম মাইজভান্ডারী (ক.) এর প্রথম ও প্রধান খলিফা ,বিল্ বেরাসত গাউছুল আজম , ছিদ্দিকে গাউছুল আজম , প্রথম গদীনশীন খলিফা, কুতুবুল আকতাব হযরত মাওলানা শাহসূফি শেখ অছিয়র রহমান ফারুকী চরণদ্বীপি (কঃ)  (১৮৫২-১৯২০)বিশ্ব মানবতার মুক্তির পাথেয় “উছুলে সাবয়া” বা সপ্ত কর্ম পদ্ধতির সফল বাস্তবায়ক।

এক ,বোয়ালখালী উপজেলার শাকপুরা ইউনিয়নের প্রাক্তন ভাইস প্রেসিডেন্ট হামজু মিয়া সও বর্ণনা করেন-তাহার পিতা  আলী মিয়া – মাওলানা অছিয়র  রহমান চরণদ্বীপি (কঃ) এর ভক্ত মুরিদ ছিলেন। তিনি এক সময় বিভিন্ন মামলা মোকদ্দমায় জড়িত হয়ে জমি-জমা, হালের গরু-মহিষ ইত্যাদী বিক্রি করে দেন । ঋণগ্রস্ত হন, আয় রোজগারের সু-পন্থা করতে না পেরে সম্পূর্ণরুপে নিরুপায় হয়ে মাওলানা শাহ অছিয়র রহমান চরণদ্বীপি (ক.) এর কাছে এসে আর্থিক অনটনের কথা প্রকাশ করেন।

আজ আমি সহায় সম্ভল হীন, আমি হুজুরের দোয়া চাই, তখন মাওলানা অছিয়র রহমান চরণদ্বীপি (কঃ) বলেন- “মিঞা তুমি কি চাও?” আলী মিয়া সাহেব বলেন- হুজুর আমি আর্থিক কষ্ট হতে মুক্তি চাই ।

মাওলানা অছিয়র রহমান চরণদ্বীপি (কঃ) বলেন- “মিঞা মাখা তামাক বাজারে বিক্রি কর” ।

জীবিকা নির্বাহের জন্য উপায়হীন ব্যক্তি কে আত্মনির্ভরশীল হওয়ার  যে নির্দেশনা  যা উছুলে ছাবয়া’র ফানা আনিল খাল্খ ।

দুই, রাউজান থানার পাঁচখাইন নিবাসী হেকিম আব্দুল জলিল  ডাক্তার , ডাক্তারী পেশার  পাশাপাশি যাদু বিদ্যা শিক্ষা করে কুফুরী যাদু করে বহু টাকা পয়সা উপার্জন করেন, মাওলানা অছিয়র রহমান চরণদ্বীপি (কঃ) এর স্পর্শে এসে যাদু বিদ্যা পরিহার করে তওবা করেন পরবর্তীতে আধ্যাত্মিকতায় উত্তরণ করেন। যা ফানা আনিল হাওয়া” বা অনর্থক পরিহার করা ।

তিন , কক্সবাজার জেলার রামু থানার জুমছড়ি নিবাসী মৌলানা মকবুল আহমদ দেওবন্দ মাদরাসায় হাদিস অধ্যায়নকালীন  সময়ে আব্দুল্লাহ নামক বালকের রূপ লাবণ্য দর্শনে মুগ্ধ হলেন । মাওলানা অছিয়র রহমান চরণদ্বীপি (ক:) এর বড় জামাতা ও খলিফা মাওলানা আলা মিয়া ছাহেব (রঃ) এর মাধ্যমে মাওলানা অছিয়র রহমান চরণদ্বীপি (কঃ) নিকট আসলে আধ্যাত্মিক তাছারুফাতের মাধ্যমে আবদুল্লাহ নামক বালকের মুগ্ধতা থেকে ফিরে কামভাব আকাঙ্ক্ষা পরিহার করে ক্ষমা প্রার্থনা করে শিষ্যত্ব গ্রহণ করেন।

যা মউতে আহমর বা লাল মৃত্যু । কামভাব ও লালসা হতে মুক্তিতে হাসিল হয়: বেলায়েত গ্রাপ্ত হয়ে অলিয়ে কামেলদের মধ্য গণ্য হন।

এ পদ্ধতি আমাদের সমকালিন বিশ্বের সামুহিক সংকটে অন্যতম নিয়ামক । আগামী ২৪ জানুয়ারি, মহান ১০ মাঘ হযরত গাউছুল আজম মাইজভান্ডারী (কঃ) ও ২১ জানুয়ারি ৭ মাঘ মাওলানা অছিয়র রহমান চরণদ্বীপি (কঃ) দুই মহান হাস্তির ওরস শরীফ।

হে দয়াময় ! মহান জাতে পাক দ্বয়ের কৃপা দৃষ্টি আমাদের দান করুন।

Share on facebook
Facebook
Share on twitter
Twitter
Share on linkedin
LinkedIn